সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’ থেকে নির্মিত সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে আগামী ২৫ নভেম্বর।
Published : 20 Nov 2022, 05:26 PM
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ সিনেমাটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও দেখানো হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
তার লেখা উপন্যাস 'ভালোবাসা প্রীতিলতা' অবলম্বনে নির্মিত এ সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে আগামী ২৫ নভেম্বর। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক অনুদানে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন প্রদীপ ঘোষ।
সিনেমা মুক্তির তারিখ জানাতে রোববার ঢাকার জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন নির্মাতা প্রদীপ ঘোষ। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ছাড়ও অভিনয়শিল্পী কামরুজ্জামান তপু ও অমিত রঞ্জন দে উপস্থিত ছিলেন তার সঙ্গে।
সেলিনা হোসেন বলেন, “এ প্রজন্মকে প্রীতিলতার আত্মত্যাগের কথা জানাতেই উপন্যাসটি লিখেছিলাম। প্রদীপ ঘোষ এটিকে সিনেমায় রূপ দিয়েছেন, তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সিনেমাটি প্রদর্শনের উদ্যেগ নেওয়া উচিত।"
নির্মাতা প্রদীপ ঘোষ বলেন, 'বীরকন্যা প্রীতিলতা' নির্মাণে ৯৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এর ৫০ লাখ টাকা এসেছে সরকারি অনুদান থেকে।
ইতিহাসনির্ভর সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে এই টাকা ‘খুবই অপ্রতুল বলে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “অনুদানের ৫০ লক্ষ টাকার দুই কিস্তির, অর্থাৎ ৬০ শতাংশ টাকা নিয়ে এবং বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ঋণ করে ছবির কাজ শেষ করা হয়েছে।"
মহামারীর কারণে নির্মাণ কাজ শুরু থেকেই বাধাগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে প্রদীপ ঘোষ বলেন, “ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়, তা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে তিন দফায় সময় বর্ধিত করার জন্য আমরা আবেদন করেছিলাম সরকারের কাছে। উপযুক্ত যুক্তি উপস্থাপন করার কারণে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আমাদের সময় বর্ধিত করে সহযোগিতা করেছে।"
এ চলচ্চিত্রে প্রীতিলতার চরিত্রে অভিনয় করছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা এবং বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের চরিত্রে অভিনয় করছেন মনোজ প্রামাণিক। মাস্টারদা সূর্যসেন চরিত্রে অভিনয় করছেন কামরুজ্জামান তাপু, কল্পনা দত্ত চরিত্রে অভিনয় করেছে ইন্দ্রাণী ঘটক।
সংগীত পরিচালনা করেছেন শিল্পী বাপ্পা মজুমদার। সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন দিলশাদ নাহার কনা, এলিটা করিম, অন্তু আহমেদ। সমবেত কণ্ঠে গান করেছেন পাপড়ি বড়ুয়া, নবনীতা দত্ত, শুচি শুভ্রা আচার্য্য। চলচ্চিত্রে মোট পাঁচটি গান রয়েছে।
নির্মাতা বলেন, “ছবির শুটিং হয়েছে ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোতে। আমরা স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতনভাবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকাকে বেছে নিয়েছি, যে সকল এলাকায় এই বিপ্লবীরা অবস্থান করেছেন, গোপন আস্তানা গড়ে তুলেছেন এবং লড়াই পরিচালনা করেছেন…। যে ইউরোপিয়ান ক্লাবে হামলায় বীরকন্যা প্রীতিলতা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, ঠিক সেখানটাতেই আমরা শুটিং পরিচালনা করেছি।"
চলচ্চিত্রের প্রচারের ক্ষেত্রে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের শৈশবের স্কুলকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন প্রদীপ ঘোষ। সেজন্যই চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রচার শুরু করেছেন তারা।
“ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ছিল প্রীতিলতার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯১৮ সালে তিনি এই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। যে স্কুল প্রীতিলতার শৈশবের বিপ্লবী চেতনার সূতিকাগার, সেখান থেকেই শুরু করেছি প্রচার।"
চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকায় ইডেন কলেজেও প্রচার চালানোর কথা জানিয়ে নির্মাতা বলেন, “১৯২৬ সালে মেট্রিক পাস করার পরে আইএ পড়ার জন্য প্রীতিলতা ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং সম্মিলিত মেধা তালিকায় পঞ্চম স্থান অধিকার করে ২০টাকা বৃত্তি পেয়ে কোলকাতায় যান বেথুন কলেজে পড়তে।"
ইতিহাসনির্ভর এ চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে গবেষণাকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রদীপ ঘোষ বলেন, “যাতে করে গল্প বলার ছলে বড় কোনো ভ্রান্তির জন্ম না হয়। আমাদের লক্ষ নতুন প্রজন্ম যাতে এই আত্মদানের বীরত্ব গাথা জানতে পারে। নিজেদের হৃদয়ে শক্তি ও সাহস সঞ্চয় করতে পারে। এ কারণেই এই চলচ্চিত্রটি দেখতে বেশি করে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে চেয়েছি আমরা। প্রচারে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফপাস চালু করেছি, যা বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে নতুনত্বের সংযোজন।”
২৫ নভেম্বর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’। এর মধ্যে স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাস এবং সিলভার স্ক্রিন সিনেপ্লেক্স চট্টগ্রামে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার কথা জানান নির্মাতা।
এরপর ডিসেম্বরে বড় পরিসরে দেশের বিভিন্ন হলে ছবিটি প্রদর্শনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রদীপ ঘোষ বলেন, “আমরা চাই শিক্ষার্থীদের বড় অংশ যেন সিনেমাটি দেখে। এজন্য প্রেক্ষাগৃহে 'হাফ পাস' থাকবে। যে সকল হল মালিক শিক্ষার্থীদের জন্য হাফপাস দিতে রাজি হবেন না, সেক্ষেত্রে আমরা বিকল্প হিসেবে নিজেদের উদ্যোগে মিলনায়তন ভাড়া নিয়ে ছবি দেখাব।"
এ সিনেমাকে একটি ‘আন্দোলন’ হিসেবে বর্ণনা করে নির্মাতা বলেন, “এটি শুধুমাত্র একটি চলচ্চিত্র হিসেবে আমরা দেখতে চাই না। এটি একটি আন্দোলন। একটি জাতির ইতিহাসসচেতন হবার আন্দোলন।”
সেই আন্দোলনের যোদ্ধা হয়ে সবাইকে ‘ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করার; আহ্বান জানান নির্মাতা। তিনি বলেন, “মাত্র ২১ বছর বয়সে যে প্রীতিলতা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে মাতৃভূমির জন্য, তার সাহসী রক্তের উত্তরাধীকার আমরা। এই মহান শহীদের স্মৃতি যেন হারিয়ে না যায়, তারই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা আমাদের বীরকন্যা চলচ্চিত্র।"