চঞ্চলসহ পুরনোদের নিয়েই রাঢ়াঙয়ের ২০০তম প্রদর্শনী

দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মঞ্চে প্রদর্শিত হয়েছে নাটকটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2022, 11:35 AM
Updated : 16 Nov 2022, 11:35 AM

‘রাঢ়াঙ’ নাটকে পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে অভিনয় করে ঢাকার মঞ্চে তুমুল প্রশংসিত হন চঞ্চল চৌধুরী ও আ খ ম হাসান। ২০০৪ সাল থেকে নাটকটি নিয়মিত মঞ্চস্থ করছে আরণ্যক নাট্যদল। ২০২০ সালে সবশেষ এই নাটকে অভিনয় করেছিলেন চঞ্চল।

এবার ২০০তম প্রদর্শনীর মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে আরণ্যক প্রযোজিত এ নাটকটি। বিশেষ প্রদর্শনীতে আবারও মঞ্চে ফিরছে চঞ্চল চৌধুরীসহ নাটকটির পুরনো টিম।
সাঁওতালদের জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত এবং সংগ্রামের চিত্র নিয়ে ‘রাঢ়াঙ’ নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মামুনুর রশীদ। দেশ বিদেশের বিভিন্ন মঞ্চে প্রদর্শিত হয়েছে নাটকটি। ভারতের দিল্লি, কেরালা ও দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে নাটকটি প্রদর্শিত হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে নাটকটির ২০০তম প্রদর্শনী হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একই মিলনায়তনে নাটকটির ১৯৯তম প্রদর্শনী হবে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন আরণ্যকের সদস্য অপু মেহেদী।

চঞ্চল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সম্ভবত ২০২০ সালে মামুনুর রশীদের জন্মৎসবে নাটকটিতে সবশেষ অভিনয় করেছিলাম।”

অপু মেহেদী বলেন, ২০০তম প্রদর্শনী উদযাপনের অংশ হিসেবে শুক্রবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার রুমে আয়োজন করা হবে একটি সেমিনার।

এই নাটকে চঞ্চল, আ খ ম হাসান ছাড়াও অভিনয় করবেন মামুনুর রশীদ, শামীম জামান, জয়রাজসহ অনেকে। নাটকটিতে শ্যামলি চরিত্রে অভিনয় করছিলেন তমালিকা কর্মকার। বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করার কারণে বিশেষ প্রদর্শনীতে থাকছেন না তিনি।

মঙ্গলবার ফেইসবুকে তমালিকা কর্মকার লিখেছেন, “আমাকে ছাড়া রাঢ়াঙ এর ২০০ তম শো হবে ভেবে বুকটা ভারী হয়ে যাচ্ছে, মনের অগোচরেই গানগুলো গাইছি, ডায়লগ বলছি। সুদূর আমেরিকায় আমি, তবে মনটা পরে আছে ওই মঞ্চে। মনে হচ্ছে আমি নির্বাসনে আছি। মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতো বিদেশ বিভূঁইয়ে।”

রাঢ়াঙ নাটকে অভিনয় অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করে তমালিকা বলেন, “রাঢ়াঙ এর শো করতে গিয়ে কতবার হাত-পা ছিলে গেছে, পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে। তবুও করেছি রাঢ়াঙ। কারণ পরিমল দাদার মিউজিক শোনার সাথে সাথে শরীরের ভেতর কী যেন ভর করত। তখন কোথায় ব্যথা, কোথায় কী মনে থাকতো না।”

নাট্যকার ও নির্দেশক মামুনুর রশীদ বলেন, ২০০০ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের নওগাঁয় আলফ্রেড সরেনের নেতৃত্বে ভূমির জন্য লড়াই ও আলফ্রেড সরেনের আত্মত্যাগ, সাঁওতালদের দীর্ঘ সংগ্রামের বিশাল উত্তরাধিকারকে মঞ্চে তুলে ধরার প্রয়াসই ‘রাঢ়াঙ’।

ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যারা প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধে রুখে দাঁড়ায় তারা সাঁওতাল। ১৭৮৪ সালে হাজারীবাগ জেলার কালেক্টর ক্লিভল্যান্ডকে হত্যার মাধ্যমে এর সূত্রপাত। তারপর ১৮৫৫ সালে সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরবের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’, যার পরবর্তী অধ্যায় সর্বভারতীয় প্রতিরোধ এবং ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ।

এ অঞ্চলের আদিবাসীদের ভূমির অধিকারের লড়াইয়ে সাঁওতালদের অবদান একটি কিংবদন্তিসম উপাখ্যান। ভারত বিভক্তির পর ইলা মিত্রের নেতৃত্বে নাচোলের কৃষক আন্দোলনে সাঁওতালদের ভূমিকা আজও সংগ্রামী কৃষক ও আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে পথ দেখায়।