ফেরদৌস অবশ্য তার ২০১৯ সালের কলকাতাকাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন ‘বন্ধু’ ঋতুপর্ণাকে।
Published : 29 Nov 2023, 11:46 AM
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় সহকর্মী, স্বজন ও নবীন-প্রবীণ রাজনীতিকদের শুভেচ্ছায় ভাসছেন চিত্রনায়ক ফোরদৌস আহমেদ। শুভেচ্ছা আসছে কলকাতার ফিল্ম পাড়ার বন্ধুদের কাছ থেকেও। এমনকি ফেরদৌসের হয়ে ঢাকায় এসে নির্বাচনী প্রচার চালাতেও নাকি রাজি কলকাতার অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
আনন্দবাজারকে ফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঋতুপর্ণার ওই ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন ফেরদৌস।
বেশ কিছুদিন ধরে রাজনীতির মাঠে সরব ফেরদৌসকে ঢাকা-১০ আসন থেকে প্রার্থী করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে লড়তে পারার এ সুযোগ ‘গৌরবের’ বলে মনে করছেন তিনি।
একটা সময় কলকাতার সিনেমায় ব্যস্ত সময় কাটানো এই অভিনেতা আনন্দবাজারকে বলেছেন, নির্বাচনী টিকেট পাওয়ার তিনি যেমন খুশি, তেমনি খানিকটা ‘ভয়ও’ পাচ্ছেন।
ভয় কেন জানতে চাইলে ফেরদৌস বলেছেন, মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান সঠিকভাবে দিতে পারবেন কী না সেটিই তার প্রধান চিন্তা।
নির্বাচনী প্রচার নিয়ে ফেরদৌস বলেছেন, কলকাতা থেকে ঋতুপর্ণা এ কাজে ঢাকায় আসতে চেয়েছেন।
“কলকাতা থেকে প্রচুর মানুষ শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ঋতুপর্ণাতো আমার খুব ভালো বন্ধু। ও তো বলেছে প্রয়োজনে ঢাকায় এসে আমার জন্য ভোটের প্রচারও করবে। কিন্তু আমি কলকাতায় যে কাণ্ড ঘটিয়েছিলাম, সেটা আমি ওকে মনে করিয়ে দিলাম।“
২০১৯ সালে সিনেমার শুটিংয়ে ফাঁকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর প্রচারে অংশ নিয়ে তোপের মুখে পড়েন ফেরদৌস। সে সময় তার ভিসা বাতিল করে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়। তার ভারতে প্রবেশের ওপর জারি হয় নিষেধাজ্ঞা। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে গত বছর আবার ভারত সফর করেন ফেরদৌস।
নিজের ইচ্ছায় নয়, ভারতের এক প্রযোজকের অনুরোধেই তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন জানিয়ে ফেরদৌস বলেন,”আমি এখনও ওই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করি। কারণ, আমি তখন নিয়মকানুন জানতাম না। এ জন্য একাধিক সিনেমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে, ভুগতে হয়েছে প্রচুর।“
রাজনীতিতে আসার কারণ, কি ধরনের কাজের পরিকল্পনা এই অভিনেতা নিয়েছেন এবং অভিনয় জীবন নিয়েও নিজস্ব ভাবনা কী, সেসব বিষয়ে আনন্দবাজারের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন ফেরদৌস।
‘অনুপ্রেরণা শেখ হাসিনা’
আড়াই দশকের অভিনয় জীবনের পর রাজনীতির মাঠ বেছে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ফেরদৌস বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি জনগণের পাশে দাঁড়াতে চাইছেন।
নিজের নির্বাচনী আসন ঢাকা-১০ কে ‘ভালো কেন্দ্র’ হিসেবে বর্ণনা করে ফেরদৌস বলেন, “এই আসনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। অভিজাত এবং উন্নত এলাকা। কিন্তু আমি তারপরও চেষ্টা করব যথাসাধ্য কাজ করতে।“
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস একসময় ঢাকা-১০ আসনের এমপি ছিলেন জানিয়ে ফেরদৌস বলেন, তার (তাপস) নেতৃত্ব এবং সহযোগিতায় নির্বাচনী ইশতেহার এবং পরবর্তী পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।
শিক্ষা এবং সংস্কৃতি এই দুই মাধ্যমকে ‘গুরুত্ব দেওয়া হবে’ জানিয়ে ফেরদৌস বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশে এখন প্রচুর উন্নয়ন হচ্ছে। আগামী দিনে উনার কাছ থেকে নিশ্চয় একাধিক নির্দেশ পাব। তবে আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষা এবং সংস্কৃতি একটা সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার আবশ্যিক শর্ত। আমি এই দুটো ক্ষেত্রে আগে কাজ শুরু করতে চাই।“
‘বিদায়ও নিতে পারি’
আগামীতে রাজনীতি এবং অভিনয়ের মধ্যে ফেরদৌস কীভাবে সামঞ্জস্য করবেন জানতে চেয়েছিল আনন্দবাজার।
জবাবে তিনি বলেন, “ গত ৮/১০ বছরে আমি সিনেমার কাজ কমিয়ে দিয়েছি। ক্যারিয়ারের শুরুতে দুই/তিন শিফটে একসঙ্গে পাঁচটি সিনেমাতেও কাজ করেছি। ঢাকা-কলকাতায় সমানতালে কাজ হয়েছে।
“এখন পরিস্থিতি বদলেছে। সবাই এখন বছরে একটা বা দুটো সিনেমা করেন। তাই মনে হয় না অসুবিধা হবে। ইচ্ছে থাকলেই তো উপায় বেরিয়ে আসে।“
ফেরদৌসের কাছে আনন্দবাজারের প্রশ্ন ছিল, এই নায়কের অভিনয় থেকে অবসরে যাওয়ার গুঞ্জন সত্য কি না।
ফেরদৌসের উত্তর, “দেশ ও সমাজ নিয়ে বার্তা থাকবে, এমন একটা দুইটা সিনেমা করার ইচ্ছা থাকবে। আবার কখনও যদি মনে হয় যে রাজনীতিতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করছি, তখন ধীরে ধীরে সুচিত্রা সেনের মত অভিনয় থেকে সরেও দাঁড়াতে পারি। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে ভবিষ্যতের উপর।”
আরও পড়ুন:
ভিড় ঠেলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানালেন ফেরদৌস