সেই রিটে উদাহরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে বাঁধনের নেওয়া মেয়ের একক অভিভাবকত্বের বিষয়টি। কারণ বাংলাদেশে বাঁধনই একমাত্র নারী যে তার সন্তানের পূর্ণ অভিভাবকত্ব পেয়েছেন।
Published : 27 Apr 2024, 11:09 AM
প্রায় সাত বছর আগে ২০১৭ সালে মেয়ের পূর্ণ অভিভাবকত্ব চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। দীর্ঘ নয় মাস লড়াইয়ের পর ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল মেয়ের একক অভিভাবকত্ব পান তিনি।
সে সময় আদালত তার পক্ষে যে রায় দেয়, সেটি রায়টি ছিল ব্যতিক্রম। কারণ, বাংলাদেশে নাবালক সন্তানের বাবা জীবিত থাকলে মাকে অভিভাবকত্ব দেওয়া হয় না।
সম্প্রতি দেশের অভিভাবকত্ব আইন পরিবর্তনের জন্য হাই কোর্টে পাঁচটি সংগঠনের করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রুল জারির পর ফের আলোচনায় আসেন বাঁধন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা সংবাদে অভিনেত্রী বাঁধনের সন্তানের অভিভাবকত্ব পাওয়ার বিষয়টি আবারও সামনে চলে আসে।
তবে যেভাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেছেন, তার মামলার কারণেই আদালত রুল জারি করেছে, বিষয়টি এমন নয়। বরং তার মামলাটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে রিট দায়ের করার পরই আদালত রুল জারি করেছে।
অভিনেত্রী বাঁধন গ্লিটজকে বলেন, “আমার উদ্যোগে এই রুল জারি হয়েছে বিষয়টা কিন্তু তেমন না। এই আইন পরিবর্তনের জন্য যে পাঁচটি সংগঠন উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের সাধুবাদ জানাই। সংগঠনগুলো মিলে হাই কোর্টে রিট করেছে। যেখানে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল আমার পাওয়া সন্তানের পূর্ণ অভিভাবকত্ব রায়টা একটা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। যে রায়টা শুধু আমি পেয়েছিলাম। কিন্তু এই আইনটা কেন সবার জন্য না, তা নিয়েই হাই কোর্টে রিট করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই রুল জারি হওয়ায় আমি ভীষণ উচ্ছ্বসিত, আনন্দিত। অনেক পরে হলেও এই প্রক্রিয়াটি শুরু হচ্ছে। ধর্মীয় এবং আইনগতভাবে অনেক জায়গায় মেয়েদের বৈষ্যমের শিকার হতে হয়। উত্তরাধিকার আইনে বা বাচ্চার অভিভাবকত্ব আইনেও এই বৈষম্য রয়েছে। এগুলোর পরিবর্তন অবশ্যই আসা দরকার।”
রিটের পক্ষের সংগঠনের কর্মকর্তারাও বলছেন, বাঁধন যে মেয়ের একক অভিভাবকত্ব পেয়েছেন, সেটি রিটে উদাহরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কারণ বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র নারী, যিনি সন্তানের পূর্ণ অভিভাবকত্ব পেয়েছেন।
অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০ এর ১৯ (খ) ধারা চ্যালেঞ্জ করে রিট করে পাঁচটি সংগঠন। সংগঠনগুলো হলো থিঙ্ক লিগ্যাল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নারীপক্ষ এবং একাডেমি অফ ল অ্যান্ড পলিসি (আলাপ)।
গত সোমবার এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদেশ দেয় বিচারপতি নাইমা হায়দার এবং বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ।
যেখানে সন্তানের অভিভাবকত্ব নির্ধারণের নির্দেশিকা এবং নীতিমালা প্রণয়নে একটি কমিটি গঠনের জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে রুল জারি করা হয়।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারা হোসেন, আনিতা গাজী রহমান, রাশনা ইমাম, মাসুদা রেহানা বেগম, আয়েশা আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ প্রসঙ্গে নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন হক গ্লিটজকে বলেন, “বাংলাদেশে পূর্ণ অভিভাবকত্ব পাওয়া একমাত্র নারী হচ্ছে বাঁধন। যেটার জন্য তাকে এবং তার আইনজীবীকে তুমুল লড়াই করতে হয়েছে। আমরা পাঁচটি সংগঠন সন্তানের অভিভাবকত্ব আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রিট করেছিলাম। আমরা রিট করে রুল পেয়েছি সেটা ভালো খবর। এখন সরকার কতটুকু বাস্তবায়নের দিকে যাবে সেটা দেখার বিষয়।”
নারীপক্ষের সদস্য কামরুন নাহার বলেন, “আমাদের রিটের পরেই বাঁধনের বিষয়টি সামনে আসে। তাছাড়া কেউ জানত না বাঁধনই একমাত্র নারী, যিনি সন্তানের পূর্ণ অভিভাবকত্ব পেয়েছেন।”
সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার ধারণা নিয়েই এই উদ্যোগ বলে জানান শিরিন হক।
তিনি বলেন, “সমান অধিকারের ধারণা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। নারী সমাজের মান সম্মান, নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জন্মাতে সমাজে নারীদের সমঅধিকারের বিকল্প কিছু নেই। এসব খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। মায়েরা সন্তানের অভিভাবকত্ব পাবে, এটা সমাজ মেনে নিতে পারে না। এই জায়গায় একটা রুল পাওয়া, এটা বিশাল পদক্ষেপ। এটা ধরে রেখেই আমাদের এগোতে হবে।”
২০১০ সালে মাশরুর সিদ্দিকীর সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন বাঁধন। চার বছর পর তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তাদের একমাত্র কন্যাসন্তান মিশেল আমানি সায়রা। মা হিসেবে সন্তানের অধিকার পাওয়ার জন্য মেয়ের কাস্টডি চেয়ে ২০১৭ সালে মামলা করেন বাঁধন। ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল আদালত বাঁধনকে মেয়ের একক অভিভাবকত্ব দেয়।