“প্রযোজক হিসেবে ঋতুপর্ণার ভুল ধরার কোনো সুযোগই নেই।”
Published : 01 Apr 2025, 08:02 PM
কিংবদন্তী নির্মাতা সত্যজিৎ রায় যে কিশোরীকে সিনেমায় এনে তার জীবনের ‘বাঁক বদলে দিয়েছিলেন’, সেই শর্মিলা ঠাকুর ৬৬ বছর পর উপলব্ধি করেছেন, সম্প্রতি যে বাংলা সিনেমাটি তিনি করেছেন, তাতে তিনি ‘শ্রেষ্ঠ অভিনয়’ করেছেন।
কলকাতার সংবাদমাধ্যম ‘সংবাদ প্রতিদিনকে’ দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘পুরাতন’ সিনেমা নিয়ে কথা বলেছেন শর্মিলা। দেড় দশকেরও বেশি সময় পর শর্মিলাকে বাংলা সিনেমায় পেতে যাচ্ছে দর্শক। এর আগে ২০০৯ সালে তিনি কাজ করেছিলেন অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর ‘অন্তহীন’ সিনেমায়।
এতদিন পর বাংলা একটি চলচ্চিত্র কাজ করার কারণ জানিয়েছেন শর্মিলা। তিনি বলেছেন, সিনেমার পরিচালক সুমন ঘোষের এর আগের কিছু কাজ যেমন ‘কাদম্বরী’, ‘বসু পরিবার’ তার ভালো লেগেছিল। সে জন্য ‘পুরতান’ সিনেমার স্ক্রিপ্ট পড়ে সিনেমাটি করার ব্যাপারে আগ্রহী হন।
এছাড়া সিনেমার প্রযোজক অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের প্রশংসা ঝরেছে তার কণ্ঠে।‘পুরাতনে’ শর্মিলার মেয়ের চরিত্রে কাজ করেছেন ঋতুপর্ণা।
মানিক দা সিনেমায় না নিলে জীবন হত আরেক রকম: শর্মিলা
শর্মিলা বলেন, “প্রযোজক এবং অভিনেত্রী দুই ভূমিকাতেই ঋতুপর্ণা দারুণ। আমরা অনেক কঠিন দৃশ্য করেছি। আমার প্রথম দিনের কাজও ঋতুপর্ণার সঙ্গে হয়েছে। নিজেদের টাইমিং ইত্যাদি যেমন হওয়া উচিত তেমন ছিল। আর প্রযোজক হিসাবে তো সবরকমের বন্দোবস্ত করেছে ঋতুপর্ণা। আমাদের একটু দূরে লোকেশন ছিল। সেখানে পৌঁছনো এবং ভ্যানিটির বাবস্থা করা, সময় মতো লাঞ্চ ব্রেক করা, সবকিছুই নিখুঁত ছিল। কোনও কমপ্লেন করার সুযোগ পাইনি।”
‘পুরাতন’ সিনেমায় নিজের চরিত্র এবং অভিনয় নিয়েও সন্তুষ্ট সত্যজিতের অপর্ণা।
“এই সিনেমাটা করে আমার এত ভালো লেগেছে, মনে হচ্ছে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিনয়। এখন জানি না দর্শকের কেমন লাগবে। আর একটা ব্যাপার হল, আমার স্ক্রিপ্টটা খুব ভালো লেগেছে। এই সিনেমায় যে ধরনের রোল করেছি, সেটা পড়ে আমার বেশ লেগেছে। আর কাজ করেও খুব আনন্দ পেয়েছি।
“কারণ নিজের ভাষায় অভিনয়ে যে আনন্দ আছে, সেটা হিন্দিতে বা ইংরেজিতে করে সেরকম নেই। সেই জন্য এই ছবিটা আমার খুবই স্পেশাল। আর দর্শকের যদি ভালো লাগে, আমি খুব খুশি হব।
সিনেমায় ঋতুপর্ণার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত।
এই অভিনেতাকে নিয়ে শর্মিলার ভাষ্য, “ইন্দ্রনীল সিনেমায় অন্যরকম একটা এনার্জি নিয়ে আসে। ছবিতে একটা ওয়েল ট্র্যাভেলড, ওয়েল এক্সপোজড ছেলে সে। আর একটু অবাঙালি ভাব আছে, সেটাও খুব ভালো ও যেমন ভাবে হাঁটেচলে, কথা বলে তার মধ্যে একটা স্মার্টনেস আছে। সেটা আমার খুব ভালো লেগেছে।”
একাল-সেকালের বাংলা সিনেমার পার্থক্য জানা গেল অভিনেত্রীর কথায়।
'অপুর সংসার' থেকে কত পেয়েছিলেন শর্মিলা
ক্যারিয়ার গড়ার ব্যস্ততায় যে ভুল করেছিলেন শর্মিলা
“তখনও আমি খুব ভালো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছি। তপন সিনহা, অজয় কর, তারা খুবই ভালো ছিলেন। এখনকার টপিকগুলো বদলে গিয়েছে, একটু অন্য ধরনের সিনেমা হচ্ছে, আরও আধুনিক। বা ধরো ‘ময়ূরাক্ষীর’ মত সিনেমা হচ্ছে, ওটাও ডিমেনশিয়া নিয়ে। ভালো ভালো সিনেমা দেখছি বাংলায়।”
আগামীতে কলকাতায় আরো কাজ করবেন কী না সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত নন শর্মিলা ঠাকুর।
“এই সিনেমাটা করে খুব আনন্দ পেয়েছি। যদি সেরকম সিনেমা আসে, হয়তো চেষ্টা করব। শরীরে কুলালে নিশ্চয়ই করব।”
১৯৫৯ সালে মুক্তি পায় ‘অপুর সংসার’। অপু চরিত্রে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, আর অপর্ণা চরিত্রে ১৩ বছর বয়সে প্রথমবার পর্দায় হাজির হন শর্মিলা ঠাকুর।
বাংলা সিনেমা দিয়ে অভিনয় শুরু হলেও পরে বলিউডে ক্যারিয়ার গড়েন শর্মিলা। তার অভিনীত প্রথম হিন্দি ছবি ছিল শক্তি সামন্ত পরিচালিত ‘কাশ্মীর কি কালি’।
এরপর একে একে অভিনয় করেন ‘অনুপমা’, ‘অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস’, ‘আরাধনা’, ‘দাগ’, ‘চুপকে চুপকে’র মত সুপারহিট সিনেমায়।
মাঝে অভিনয় থেকে বিরতি নিলেও আবার অভিনয়ে ফিরে এসেছেন ৮০ বছর পার করা এই অভিনেত্রী।
‘পুরাতন’ সিনেমাটি মুক্তি পাবে আগামী ১১ এপ্রিল।