Published : 03 Apr 2025, 12:06 AM
ঈদের তৃতীয় দিন সকালে সড়কে রিকশা নিয়ে বের হন আব্দুল লতিফ, বিকাল ৫টা পর্যন্ত আয় করেন ৫০০ টাকা, এর মধ্যে রিকশার মালিককে দিতে হবে ২০০ টাকা।
রাজধানীর মিরপুর সাড়ে এগারো নম্বরে বুধবার বিকাল ৫টার দিকে দেখা হয় ৫০ বছর বয়সী এ রিকশাচালকের সঙ্গে।
ঈদে আয় রোজগারের কথা তুললে খানিকটা বিষণ্নতার সুরে তিনি বললেন, “অন্য দিন হাজার-বারোশ টাকা মারন যায়। আজগে ৫০০ টাকা হইছে। সকাল ৯টায় বাইর হইছি। অনেকক্ষণ, কিন্তু যাত্রীই নাই।”
তিন মেয়েকে বিয়ে দেওয়ায় এবার ঈদে গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঢাকাতেই থেকেছেন লতিফ। প্যাডেলের রিকশা চালান তিনি। ঈদের আগের দিন রিকশা চালালেও ঈদের দুদিন সড়কে বের হননি।
বুধবার রিকশা নিয়ে বের হলেও যাত্রী খরার কথা তুলে ধরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “লোকজন নাই তো বেশি, দেশে গেছে গ্যা না? কী করমু বলেন। সবডিই তো দেশে গেছে গ্যা। এনত (ঢাকায়) নাই। এক সপ্তাহের লাগাত এমনই কম হইব।”
এবারের রোজার ঈদ ঘিরে টানা নয় দিনের ছুটি শেষে আগামী রোববার খুলবে সব ধরনের অফিস। চাকরিজীবীদের পাশাপাশি নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ লম্বা ছুটি ঘিরে গ্রামের স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছেন।
ঈদের দিন ও পর দিন রাজধানীর বাসিন্দারা ঘুরতে বের হওয়ায় কিছুটা বাড়তি আয় ছিল রিকশাচালকদের। প্যাডেলের রিকশার চেয়ে কিছুটা জায়গা বড় আর গতির কারণে ব্যাটারির রিকশার চাহিদা ছিল বেশি। তবে প্রথম দুদিন আয় বেশি হলেও বুধবার পড়ে যাত্রী খরায়।
রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকায় কথা হয় ব্যাটারির রিকশাচালক আওয়াল হোসেনের সঙ্গে। ঈদের দুদিনের আয়ে খুশি হলেও তৃতীয় দিনে তার কথায় হতাশার সুর।
যাত্রী কেমন পাচ্ছেন, এ প্রশ্নে ৩৫ বছর বয়সী আওয়াল বলেন, “খ্যাপ নাই ভাই, খ্যাপ নাই। দুইদিন একটু আয় হইছিল, আজ (বুধবার) সকাল থিকা বাইর হইছি। মানুষ কম। মানুষ চলে যাওয়ায় খ্যাপ নাই।
“ঈদের দিন ভালোই গেছে, আবার ঈদের পরের দিনও ভালো গেছে। কালকে (মঙ্গলবার) আমি দুপুরের পরে চালাইছি। চিড়িয়াখানায় ভেতর পর্যন্ত যাইতে আরি নাই, অর্ধেক গিয়া ঘুইর্যা আছি। ওই যে ইয়েতে জ্যামের লাইগ্যা।”
ভালো গেছে বলতে কেমন? এবার তিনি বলেন, “দুই দিনই সমান হইছে। সমানে সমান। যারা সারা দিন চালাইছে, তারা মনে করেন ৩/৪ হাজার কামাইছে। আর আমি তো হাফ বেলা কামাইছি, তারপরও আল্লাহর রহমতে ২ হাজার টাকা কামাইছি। ঈদের দিনও ২ হাজার।
“তবে আজকে তো অবস্থা ভালো না। আজকে হজ্ঞলে (সবমিলিয়ে) ৬০০ টাকা মারছি। বাইরাইছি ১২টার দিকে।”
এর মধ্যে রিকশা মালিককে ৪০০ টাকা দিতে হবে বলে আলাপে তুলে ধরেন তিনি।
এবারের ঈদের দিনে আয় বেশি হলেও ঈদের তৃতীয় দিনে যাত্রী সংকটে পড়ার কথা বললেন অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ মামুনও।
বুধবার বিকালে তিনি বলেন, “সকাল ১০টায় বের হইছি, দেড়টা পর্যন্ত ১৫০ টাকা মারছি। পরে গাড়ি চালাই নাই। পরে এহন আবার বাইর করলাম গ্যারেজ থেকে। কালকের আর আজকের একই অবস্থা। ঈদের দিন ভালো ছিল। ঈদের দিন ভাড়া কওন লাগে নাই। উডেন, যে যা দেয়। ১০/২০ টাকা তো এমনই বাড়ায়া দিছে। কওনও লাগে নাই।”
নিজের অটোরিকশা চালান মামুন। দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। মেয়েরা ছোট, মাদ্রাসায় পড়ে। পরিবার নিয়ে ঈদের সময় কাটিয়েছেন ঢাকাতেই।
বুধবার তার আয় বেশি না হলেও গ্যারেজ ভাড়া দিতে হবে ১৮০ টাকা। তার কথায়, “নিজের গাড়ি না হইলে ঋণী থাকতাম। জমা দিতে হত ৪০০ টাকা। এহন যে অবস্থা (বুধবারের আয়), ঋণীই থাকতাম। জমা দেওয়াই লাগত, চালাই আর না চালাই।”
ঈদের ছুটির মধ্যে ঢাকার সড়কে বাসও চলছে কম। অল্প কিছু চললেও সেগুলো যাত্রী সংকটে ভুগছে।
সদরঘাটগামী বিহঙ্গ পরিবহনের হেল্পার খোকন বললেন, বুধবার মালিকের জমা ও বাসের খরচ তুলতেই হিমশিম অবস্থা।
“তিন ট্রিপ মেরেছি। অন্য দিনের তুলনায় খারাপ। মনে করেন তিন ট্রিপে আমার ইনকাম হইত না হলেও ৯ হাজার টাকা। এখন তিন ট্রিপে ইনকাম হইছে মনে করেন ৪ হাজার ২০০ টাকা। অথচ জমা দিতে হইব ৭ হাজার টাকা।”
বাকি টাকা কীভাবে দেবেন, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই যে ট্রিপ মারতে থাকুম। রাত ১১টা-১২টা যা লাগে।”
মিরপুর সাড়ে এগারো নম্বরে রাস্তার পাশে অনেক বাস বন্ধ দেখিয়ে তিনি বলেন, “দ্যাহেন না সব গাড়ি বন্ধ। এহানেই ৭/৮টা বসে আছে।”
গাবতলী থেকে মিরপুর-১৪ গামী ছোট বাসগুলোও ভুগছে যাত্রী খরায়। তারা অবশ্য বিরক্ত অটোরিকশার কারণে।
সাইদ খান নামে এক হেল্পার বলেন, “যাত্রী টুকটাক। অটোর লাইগ্যা তো যাত্রীই পাই না। টাহা দেহেন না? টাহাই তো নাই।”
সাইদের বাসটিতে দেখা গেল সিটে বসে আছে আটজন। বেশিরভাগ আসন ফাঁকা।
তিনি বলেন, “ঈদের আগে বন্ধ ছিল আট দিন। ঈদের দিন থেকে বের হইছি তিন দিন। গতকাল পাইছি ৫০০, ওরে (চালককে) দিছি ৪০০। ঈদের দিন হইছে ৭০০, ওরে দিছি ৬০০। আজ ঘরে কিছু নিয়ে যাইতে পারুম কিনা জানি না।”
অতীত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “আগে এই গাড়ি লইয়্যা খাওনের টাইম পাইতাম না। নাস্তা খাওনের টাইম পাইতাম না। আর এখন যাত্রীই পাই না।”