অভিনয়শিল্পী-নাট্যনির্দেশক আজাদ আবুল কালাম বলেন, দেশ চালাবে রাজনীতিবিদেরা, কিন্তু সংস্কৃতিকর্মীরা অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব থাকবে, এটাই হওয়া উচিত।
Published : 07 Aug 2024, 08:20 PM
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নৈরাজ্যকর অবস্থার মধ্যে সঙ্গীতশিল্পী রাহুল আনন্দের বাড়িতে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাস্কর্যসহ শিল্পস্থাপনায় হামলার প্রতিবাদ জানাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে 'বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীগণ' নামে একটি প্ল্যাটফর্ম।
বুধবার বিকেলে ঢাকার জাতীয় নাট্যশালার সামনে এই কর্মসূচি থেকে কিছু প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি সাম্যবাদী সমাজ গড়তে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রাচ্যনাটের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ও অভিনয়শিল্পী-নাট্যনির্দেশক আজাদ আবুল কালাম পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব ধরনের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সংস্কৃতিকর্মীদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। দেশ চালাবে রাজনীতিবিদেরা, কিন্তু সংস্কৃতিকর্মীরা অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব থাকবে, এটাই হওয়া উচিত।”
বর্তমান পরিস্থিতির পেছনে রাজনীতিবিদ, সুবিধাবাদী চক্র, বিভিন্ন এজেন্সির ভূমিকা রয়েছে এবং অনেকটা পরিকল্পিতভাবেই এই ঘটনাটি হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
অবস্থান কর্মসূচিতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাট্যসংগঠন বটতলার কর্মী কাজী রোখসানা রুমা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রশাসনিক অস্পষ্টতা, শূন্যতা এবং সিদ্ধান্তহীতার সুযোগে দুষ্কৃতিকারীরা ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটতরাজ চালানো শুরু করে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর, লুটপাট, থানা জ্বালিয়ে দেয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বর এবং বিখ্যাত ঐতিহ্য ময়মনসিংহের শশীলজসহ নির্বিচার ভাঙচুর, ভিন্ন মতাবলম্বীদের উপরে হামলা, তাদের সম্পত্তি লুটপাট ও পোড়ানো শুরু হয়।
এ পর্যন্ত ৭টি থিয়েটার দলে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং প্রাচ্যনাটের থিয়েটার কর্মী এবং জলের গানের মূল সমন্বয়ক রাহুল আনন্দের বাড়ি এবং তার সকল বাদ্যযন্ত্র পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনারও নিন্দা জানানো হয় এতে।
তিনি বলেন, “আমরা এখানে বিজয়ের উৎসব পালনে আসিনি, বরং অত্যন্ত উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা প্রকাশে এসেছি। একই সাথে ক্ষমতালিপ্সু এবং অগণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের জন্য ছাত্র আন্দোলনের সকলকে এবং এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণাকারী সকলকে 'বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মী'দের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।”
কাজী রোখসানা রুমা বলেন, “আমরা যে মুখস্ত জুজুর ভয়ে কাবু ছিলাম এতদিন, সেই জুজু যেন আমাদের শিল্পী, শিল্প স্থাপনা, সংখ্যালঘু ভাই-বোন এবং পরিবারগুলোকে ভীত, সন্ত্রস্ত এবং আস্থাহীন না করে তোলে, তার আবেদন জানাচ্ছি সংশ্লিষ্ট সকল মহলের কাছে।
“পুলিশের অনুপস্থিতিতে সেনাবাহিনী নাগরিকদের সুরক্ষায় এগিয়ে না এলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের গণঅভ্যুত্থান নস্যাৎ হয়ে যেতে পারে। সাময়িক বিজয় গণতান্ত্রিক রূপান্তরের চূড়ান্ত পর্যায়ে না গিয়ে, একটি পাল্টা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সুবিধাবাদী, মতলববাজ, অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী শক্তির কাছে রাষ্ট্রের ক্ষমতা আবার কুক্ষিগত হয়ে যেতে পারে। আমরা চাই অতি দ্রুত একটি সুস্থ, সভ্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা দেশে চালু হবে।”
অবস্থান কর্মসূচি থেকে কিছু প্রশ্ন তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো-
# শিল্প, শিল্প স্থাপনা, ঐতিহাসিক স্থাপনাসমূহের সুরক্ষা প্রদানে চরম অরাজকতার পরেও এখনো পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? এর পেছনে কোন নীল কশা থাকলে তা বানচাল করা হচ্ছে না কেন?
# সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সুরক্ষা প্রদানে এবং চলমান সকল ধরনের সহিংসতা বন্ধে কোনো ধরনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন? এমন পদক্ষেপ এখন কে নিবে, রাষ্ট্রপতি নাকি সেনাবাহিনী?
# সর্বোপরি, গণঅভ্যুত্থান সফল করা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে সমাজের বিভিন্ন শ্রমজীবী ও পেশাজীবী শ্রেণি, সিভিল প্রশাসন এবং মিলিটারি প্রশাসনের সমন্বিত আলাপ-আলোচনা শুরু না করে বঙ্গভবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ করার মাধ্যমে জনগণকে কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে?
# ছাত্ররা অসহযোগের ডাক দিয়েছে। তাহলে তাদেরকে বাদ দিয়ে আইএসপিআর কোন ক্ষমতাবলে সকল কিছু খোলার ডাক দিল?
# গণভবন, বিভিন পুলিশ থানাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা সুরক্ষায় পুলিশের উপস্থিতি নেই কেন? পুলিশের অবর্তমানে সেনাবাহিনী সুরক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হলো কেন?
পরে 'ধন ধান্য পুষ্প ঘেরা, আমাদেরই বসুন্ধরা' গানটি সমবেত কণ্ঠে গাইতে গাইতে পদযাত্রা করে প্রেস ক্লাবে গিয়ে কর্মসূচিটি শেষ হয়।
এর আগে কিছুক্ষণ নাট্যশালার সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান করেন সংস্কৃতিকর্মীরা। নাট্যকর্মী, সঙ্গীতশিল্পীসহ বিনোদন জগতের অনেকে অংশ নেন।
এসব প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- 'শিল্পীর বাসায় হামলা কেন', 'বিভক্তি নয় সম্প্রীতি চাই', 'সাম্প্রদায়িক সংঘাত চাই না', 'হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ পাহাড়ি খ্রিষ্টান এই বাংলায় সবাই সমান', 'সংস্কৃতি আমার পরিচয় শিল্প আমার সম্পদ', 'এই স্বাধীনতা যেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সবারই হয়'।