সেলিম আল দীনের জন্মজয়ন্তী ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের চার দশক পূর্তি উৎসবের অনুষ্ঠানে তাদের পুরস্কৃত করা হয়।
Published : 18 Aug 2023, 04:49 PM
‘নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন পদক’ ২০২১ ও ২০২৩ পেয়েছেন অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও নাট্য নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় শুক্রবার দুই গুণীজনের হাতে এই পুরস্কার ও আর্থিক সম্মাননা তুলে দেয় সেলিম আল দীন ফাউন্ডেশন।
এদিন নাট্যকার সেলিম আল দীনের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের ৪০ বছর পূর্তি উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় নাট্যশালা মিলনায়তনে। সেই অনুষ্ঠানেই তাদের পুরস্কৃত করা হয়।
সকালে বর্ণাঢ্য এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। তার আগে সারা দেশ থেকে আসা বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের কর্মীদের নিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হয়।
এ বছরের ‘সেলিম আল দীন পদক’ পেয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, “মঞ্চে উপবিষ্ট গুণিজনের কাছ থেকে এই পদক গ্রহণ করতে পারাটা বিশেষ সম্মানের। তবে আমার কাছে একটু খুঁতখুঁত থেকে গেল; সেলিম আল দীন পদক তো সবার আগে নাসির উদ্দীন ইউসুফের পাওয়ার কথা ছিল।”
মঞ্চে নাসির উদ্দীন ইউসুফের দিকে ইঙ্গিত করে জামিল আহমেদ বলেন, “আপনাকে না দিয়ে এই পদক আমার কাছে আসাটার কোনো মানেই হয় না। আশা করি এই ভুলটা পরে শোধরানো হবে।”
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ হয়েছি, খুশি হয়েছি এবং ধন্য হয়েছি। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের পথচলায় শুরু থেকেই ছিলাম সেলিম আল দীন ও নাসির উদ্দীন ইউসুফের সঙ্গে। আমাদের সঙ্গে আরও অনেকেই ছিলেন, যারা আজকে নেই। তাদের কথা খুব মনে পড়ে।”
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ড. অনুপম সেন, তবে শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি অনুষ্ঠানে ছিলেন না বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ, অভিনয়শিল্পী আফজাল হোসেন, গ্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক রশীদ হারুন উপস্থিত ছিলেন।
শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, “১৯৭১ সালের পর স্বাধীন বাংলাদেশে থিয়েটার একটা জাগরণ তৈরি করেছে। গ্রাম থিয়েটার ৪০ বছর ধরে কাজ করছে। ৪০ বছর অনেক, আবার খুব বেশি সময়ও না। নাটক অনেক দূর এগিয়েছে।
“চিত্রকলা বলেন, সিনেমা বলেন সব জায়গায় একটা নাটক আছে। যে পেইন্টিংয়ে নাটক নাই, সেই পেইন্টিংয়ের কোনো মূল্য নাই কিন্তু। কেউ যখন অভিনয় করে তার অভিনয় দেখে আমরা চোখের পানি ফেলে দিই কেন? তার নিশ্চয় কারণ আছে। সেই অভিনয়ের সাথে হৃদয়ের সংযোগ থাকে।”
গ্রাম থিয়েটারের যাত্রায় সেলিম আল দীনের ভূমিকা তুলে ধরে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, “গ্রাম থিয়েটারের যে যাত্রাটি শুরু হয়েছিল, সেটি হয়েছিল সেলিম আল দীনের প্ররোচনায়। সেলিম আল দীন না থাকলে আজকে আমরা একত্রিত হতে পারতাম না। যারা সেলিম আল দীন পদকটি গ্রহণ করলেন, তারা গুণিজন। তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।”
দুপুরে হয় গ্রাম থিয়েটারের কাউন্সিল অধিবেশন। সন্ধ্যায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে ‘হয়লা গান’ পরিবেশন করবে বরগুনা থিয়েটার, ‘সান্তাল আদিবাসী নৃত্য’ পরিবেশন করবে রাজশাহীর তানোরের যুবা বাহা। ‘বেহুলার ভাষান’ পরিবেশন করবে বগুড়ার সারিয়াকান্দির বিজয় থিয়েটার এবং জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থিয়েটার পরিবেশন করবে ‘মহুয়া’।
গ্রাম থিয়েটার সম্মেলনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধিবেশন হবে শনিবার সকাল থেকে। ওই দিন সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে গম্ভীরা, ভাওয়াইয়া, আলকাপ, ধামাইলসহ বিভিন্ন ঐতিহ্য পরিবেশনা।