“মুম্বাই ছিল একটা জঙ্গলের মত, আর আমাকে হাঁটতে হচ্ছিল নিরস্ত্র অবস্থায়।”
Published : 10 Oct 2024, 02:43 PM
অসাধারণ ব্যক্তিত্বের জন্য ভারতের বিনোদন জগতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন যিনি, সেই আবেদনময়ী অভিনেত্রী রেখার ৭০তম জন্মদিন বৃহস্পতিবার।
সিনেমা জগত থেকে বিদায় নিলেও নানা সময় তার ঘটনাবহুল জীবন সামনে এসেছে। চলার পথে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জনরোষে পড়তে হয়েছে তাকে; কটূক্তি আর ঘৃণা একসময় বিষিয়ে তুলেছে চির লাবণ্যময়ী এ অভিনেত্রীকে।
রেখাকে নিয়ে বছর দুয়েক আগে ভারতের বিনোদন সাংবাদিক সুভাষ কে ঝা বলেছিলেন, এই অভিনেত্রী তার বয়স ২০ বছর কমিয়ে রেখেছেন বললে অবশ্যই বাড়াবাড়ি হবে না। এমন এক আকর্ষণ জিইয়ে রেখেছেন তিনি, এখনও যা ভারতের অন্য কোনো তারকা রাখতে পারেনি।
রেখার জীবনে প্রেম বলিউডে বহু চর্চিত একটি বিষয়। বলিউড কিংবদন্তি অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তার প্রেম এখনও আলোচনার বিষয় হয়ে রয়েছে। রেখা ১৯৯০ সালের মার্চে বিয়ে করেছিলেন ব্যবসায়ী মুকেশ আগারওয়ালকে; যিনি বিয়ের সাত মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই ২ অক্টোবর আত্মহত্যা করেন। সে সময় দুজনেই ছিলেন লন্ডনে, রেখার ওড়নায় ফাঁস লাগিয়েই আত্মহত্যা করেছিলেন মুকেশ।
অভিনেত্রীর জীবনী ‘রেখা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’তে দাবি করা হয়, মুকেশ যে অবসাদগ্রস্ত ছিলেন তা রেখা জানতে পেরেছিলেন বিয়ের পর। যদিও মুকেশের পরিবার সেই দাবি মানেনি।
সে সময় সোশাল মিডিয়া না থাকলেও প্রশ্নের বানে জর্জরিত হন অভিনেত্রী, বলিউডের বহু ব্যক্তি পাশে না দাঁড়িয়ে ছড়িয়েছিলেন ঘৃণা। লোকজনের কাছে রাতারাতি তিনি ‘ডাইনি’ তকমা পেতে শুরু করেন, সেসব বিষয় সংবাদমাধ্যমেও শিরোনাম হয়।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে রেখা একবার বলেছিলেন, “(সংবাদমাধ্যম) তাদের ইচ্ছে মত মশলা মিশিয়ে যা খুশি লিখবে… আমি খুব ক্ষুব্ধ আর আহত হয়েছিলাম।
“যখনই আমি ভীষণ কষ্ট পাই, আমি চুপ করে থাকি। তাই আমি ঠিক এটাই করেছি - আমি কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি।"
বিবিসি লিখেছে, চলার পথে রেখা বিভিন্ন সময় নিজের রূপান্তর ঘটালেও সম্ভবত এটাই ছিল চূড়ান্ত রূপ। এই রূপান্তরই হয়ত তাকে ‘রহস্যের দেবী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
তিনি রুপালি জগত থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকেন, তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব একটা বেশি কিছু জানাও যায় না। তবে এখনো পুরনো হিট গানের সঙ্গে নাচতে অভিনেত্রী যখন মঞ্চে ওঠেন, তখন দর্শকরা তাতেই রেখাকে খুঁজে ফেরেন।
তার পারিবারিক নাম ভানুরেখা গণেশন, জন্ম তামিল সিনেমার এক তারকা দম্পতির ঘরে, ১৯৫৪ সালের ১০ অক্টোবর। কালের পরিক্রমায় তিনিই রেখা হয়ে ওঠেন। ভারতের সবচেয়ে আবেদনময়ী অভিনেত্রী বলা হয় তাকে।
১৯৬৬ সালে রাঙ্গুলা রত্নম নামে একটি তেলুগু সিনেমা দিয়ে শিশুশিল্পী হিসেবে পর্দায় অভিষেক রেখার। নায়িকা হিসেবে যাত্রা শুরু ১৯৭০ সালে ‘শাওন ভাদো’ দিয়ে।
হিন্দি না জানা এক আনাড়ি কিশোরী থেকে জাতীয় পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী হতে নিজেকে বদলে ফেলেছিলেন রেখা। তিনি অনবদ্যভাবে হিন্দি বা উর্দু যেমন বলতে শেখেন, তেমনিভাবে হয়ে ওঠেন কঠিন আত্মবিশ্বাসী।
বিবিসি লিখেছে, বাবা জেমিনি গণেশন ছেড়ে যাওয়ায় মা পুষ্পাভ্যালির পক্ষে সংসার সামলানো কঠিন হয়ে উঠেছিল। আর্থিক অনটনে অভিনয়ে নাম লেখান ভানুরেখা- তখন তিনি সবে কিশোরী।
হিন্দি সিনেমার প্রাণকেন্দ্র মুম্বাইয়ে অপরিচিত ভাষা আর পুরুষশাসিত শিল্পে রীতিমতো লড়াই করতে হয় তাকে। তারকাখ্যাতি পাওয়ার আগেই বেছে নেন যোগব্যায়াম।
রেখা বলছিলেন, “মুম্বাই ছিল একটা জঙ্গলের মত, আর আমাকে হাঁটতে হচ্ছিল নিরস্ত্র অবস্থায়। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর পর্বগুলোর একটি... ছেলেরা আমার দুর্বলতার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল।”
৪০ বছরের অভিনয় জীবনে দুইশর মত সিনেমায় অভিনয় করেন রেখা। তিনবার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার জিতে নেন। উমরাওজানে অভিনয়ের জন্য ১৯৮১ সালে পান ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
বলা হয়, রেখার জীবনটি সিনেমার মত ঘটনা-অঘটনের মধ্যে দিয়ে গেছে বা যাচ্ছে।
সুভাষ ঝা বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত গুণের জন্যেই বছরের পর বছর ধরে তিনি অনেকের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন। অন্যরা তাকে ক্ষত-বিক্ষত করার আগে তিনি দ্রুত গুটিয়ে নেন নিজেকে।
রেখা একবার বলেছিলেন, “বারবার আঘাত পেয়েছি। এতবেশি যে গুনতে ভুলে গেছি । তাই আঘাত আমাকে এখন আর প্রভাবিত করতে পারে না।”