জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের পর্দা উঠছে বৃহস্পতিবার

'তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে' প্রতিপাদ্যে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের একচল্লিশতম সম্মেলন শেষ হবে শনিবার।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2023, 07:51 AM
Updated : 3 May 2023, 07:51 AM

দেশের পাঁচ শতাধিক শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মীর অংশগ্রহণে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের একচল্লিশতম সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে।

'তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে' প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন শুরু হবে বৃহস্পতিবার। বিকেল সাড়ে ৪টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার।

মঙ্গলবার ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সহসভাপতি সারওয়ার আলীর সভাপতিত্বে আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সেখানে জানানো হয়, এবারের জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনে রবীন্দ্রপদক দিয়ে গুণী সম্মাননা জানানো হবে মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম এবং সংগীতজ্ঞ অধ্যাপক আবম নুরুল আনোয়ারকে। সমাপনী আনুষ্ঠানিকতায় প্রধান অতিথি থাকবেন অধ্যাপক অনুপম সেন। 

শর্মিলা বন্দ্যোপধ্যায় বলেন, “রবীন্দ্রনাথের বাণী আমাদের উদ্দীপ্ত করুক, জাগ্রত করুক-এই আকাঙক্ষা নিয়ে এবারের রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনে আমরা মিলিত হব। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘আমরা প্রথমে বাঙালি, পরে বিশ্বজাতি। বলেছিলেন, স্বাধীনতা হচ্ছে স্ব-অধীনতা, বাইরে থেকে অপরে কাউকে স্বাধীনতা দিতে পারে না।

“তিনি বলেছিলেন, দেশ একটি ভূখণ্ডমাত্র নয়, দেশের জনগণকে নিয়েই সমগ্র দেশ। সেই দেশের সর্বজনকে স্বাধীন করতে না পারলে দেশ স্বাধীন হয় না। তাই শিক্ষার আলোকে সকলের চিত্তকে আলোকিত করতে পারলেই সার্বিক স্বাধীনতা সাধন করা সম্ভব। ওই বিচিত্র বিধানে দীক্ষিত হতে পারলেই আমরা তাকে নব নব রূপে প্রাণে নিতে পারব।”

ছায়ানটের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সহসভাপতি মফিদুল হক, সংগীতশিল্পী বুলবুল ইসলাম, লিলি ইসলাম ও লাইসা আহমদ লিসা।

পরিষদের একচল্লিশতম বার্ষিক অধিবেশনে সহায়তা দিচ্ছে বিকাশ, আইএফআইসি ব্যাংক এবং কাজী ফার্মস।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ১৯৭৯ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল 'জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ' নামে। ১৯৮১ সালে বিভাগীয় রবীন্দ্রসংগীত প্রতিযোগিতা ও সম্মেলন অনুষ্ঠানসহ প্রথম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের আয়োজন করে 'জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ'।

১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে এই সংগঠনের উদ্যোগে ব্যাপকতর ভিত্তিতে 'দ্বিতীয় জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদ' গঠন করে দ্বিতীয় জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

দ্বিতীয় জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনকালে সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রতিনিধিরা প্রতিবছর জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন অনুষ্ঠান এবং সংস্কৃতির সুষ্ঠু বিকাশের জন্যে বছরব্যাপী কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য একটি স্থায়ী জাতীয় কমিটির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।

সে সময় জাতীয় কমিটির ঘোষণায় বলা হয়. “আমরা শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বসাবো সর্বজনের হৃদয়ে। তারপরে রবীন্দ্রনাথ আমাদের সঙ্গী হয়ে চিরকালের বাঙালির পাশে পাশে যুগ-যুগান্তর ধরে পথ হেঁটে চলবেন। সর্বকালের মানুষের সংস্কৃতি সাধনার মধ্যে আমরা আপন করে পাবো চর্যাগীতির কবি হতে আরম্ভ করে একালের শেষতম কবিকেও। আসুন, এমন সাংস্কৃতিক মিলনে পরস্পর সংবদ্ধ হয়ে ধন্য হই আমরা।"

দেশব্যাপী বৃহত্তর পরিসরে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার লক্ষ্য নিয়ে পরবর্তীকালে বাঙালির চিরকালের সঙ্গী রবীন্দ্রনাথের নাম যুক্ত করে সংগঠনের নাম করা হয় 'জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ'।

মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় বাঙালির আপন সংস্কৃতির চর্চা ও প্রসার। নাম পরিবর্তন হলেও অব্যাহত আছে প্রয়াত স্মরণীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী জাহিদুর রহিমের স্মৃতিবহ 'জাহিদুর রহিম স্মৃতি' পুরস্কার প্রতিযোগিতার আয়োজন। 

প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দিকের বার্ষিক অধিবেশনগুলো কেবল রাজধানী ঢাকাতেই হত। শাখাগুলিকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং সংস্কৃতিচর্চার ব্যাপকতর প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বার্ষিক অধিবেশন হচ্ছে - এক বছর ঢাকায়, পরের বছর অন্য কোনো জেলায়।

সেই থেকে সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন হচ্ছে এক বছর পর পর, কেবল ঢাকার অধিবেশনে। রাজধানীর বাইরে প্রথম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন হয় ১৯৮৫ সলে চট্টগ্রামে। এরপর থেকে এক বছর অন্তর বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

এ বছর ১৭, ১৮ ও ১৯ মার্চ ২০২৩ এ নওগাঁয় সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। সাংগঠনিক কিছু অসুবিধার কারণে একচল্লিশতম বার্ষিক অধিবেশন ঢাকাতে হচ্ছে।

তিন দিনের আয়োজনে যা থাকছে

দেশের ৭২টি শাখা থেকে পাঁচ শতাধিক শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক এ আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন। তিন দিনেই সান্ধ্য-অধিবেশন সাজানো হয়েছে গুণীজনের সুবচন রবিরশ্মি, আবৃত্তি, পাঠ, নৃত্য ও গান দিয়ে। 

আয়োজনের প্রথম দিন বিকেল সাড়ে ৫টায় পরিবেশিত হবে গীতি–আলেখ্য আন অমৃতবাণী। গ্রন্থনা মহুয়া মঞ্জরী সুনন্দা ও দীপ্র নিশান্ত। নৃত্য পরিচালনায় সুদেষ্ণা স্বয়ংপ্রভা। পরিবেশনায় জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ ঢাকা মহানগর শাখা। 

দ্বিতীয় দিন বিকাল ৫টায় আছে সেমিনার। এবারের বিষয়: নদী তীরের প্রেমের গান। প্রবন্ধ রচনা করেছেন অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সভাপতি ড. আতিউর রহমান।

আলোচনায় অংশ নেবেন অধ্যাপক মো. শাহ আযম শান্তনু ও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী আজিজুর রহমান তুহিন। বার্ষিক অধিবেশন উপলক্ষে যথারীতি প্রকাশিত হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির নানা দিক এবং সংস্কৃতি বিষয়ে বিশিষ্টজনের লেখা প্রবন্ধের সংকলন 'সংগীত সংস্কৃতি'।”

দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে রবিরশ্মির সুবচনে অংশ নেবেন সংস্কৃতিজন ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। সাড়ে ৮টায় পরিবেশিত হবে লাইসা আহমদ লিসার সংগীত ও শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়ের নৃত্য পরিচালনায় গীতি–আলেখ্য সবার উপরে মানুষ সত্য। 

শেষ দিন থাকবে প্রতিনিধি সম্মেলন এবং তামান্না রহমানের পরিচালনায় নৃত্যম নৃত্যশীলনের পরিবেশনায় নৃত্যালেখ্য বিদায় অভিশাপ।