সাড়ে ৩ বছরেও ছাড়পত্র পায়নি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিনেমাটি।
Published : 15 Nov 2022, 06:56 PM
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১২৯ জন সংস্কৃতিকর্মী।
এই সিনেমাকে ঘিরে এই বিবৃতিতে এক হয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী, চিত্রশিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠকসহ সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখার মানুষ।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে সিনেমাটি আটকে রেখে ‘অন্যায্য’ আচরণ করছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। পাশাপশি সিনেমাটি দ্রুত মুক্তির দাবিও রেখেছেন সংস্কৃতিকমীরা।
নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফের মাধ্যমে আসা বিবৃতিতে বলা হয়, “সিনেমা-নাটক-সংগীত, শিল্প সংস্কৃতির এমন নানা ক্ষেত্রে, নানা সময় হাজির করা হচ্ছে বহুমুখী বাধা, যা আমাদের উদ্বিগ্ন করছে। এ উদ্বেগ আরো বাড়ে যখন দেখি, আমাদের বন্ধু সুহৃদ চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর চলচ্চিত্র ‘শনিবার বিকেল’ বিনা কারণে সাড়ে তিন বছরের বেশী সময় সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকে।”
হলি আর্টিজান বেকারিতে ঝড় তোলা জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি বানিয়েছেন নির্মাতা ফারুকী। বিদেশে সিনেমাটির প্রদর্শনী হলেও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র না মেলায় এখনও দেশের দর্শক সিনেমাটি দেখার সুযোগ পাননি। ফারুকী এর আগে অভিযোগ করেছিলেন, ‘কোনো এক অদৃশ্য কারণে’ তার সিনেমাটি আটকে রাখা হয়েছে। সিনেমা মুক্ত করতে তিনি আদালতে যাওয়ারও ঘোষণা দেন।
সেই সিনেমার পক্ষে বিবৃতিদাতারা হলেন মামুনুর রশীদ, সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকি, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, সারা যাকের, সৈয়দ জামিল আহমেদ, শিমূল ইউসুফ, আফজাল হোসেন, ছটকু আহমেদ, মোরশেদুল ইসলাম, তারিক আনাম খান, ঢালী আল মামুন, শামীম আখতার, মুনিরা মোরশেদ মুন্নী, আনিসুল হক। এছাড়া শহীদুজ্জামান সেলিম, ফজলুর রহমান বাবু, জাহিদ হাসান, তৌকীর আহমেদ, ক্যাথরিন মাসুদ, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, নুরুল আলম আতিক, ত্রপা মজুমদার, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, কামার আহমেদ সায়মন, রুবাইয়াত হোসেন, শাহিন সুমন, আহসান হাবীব নাসিম, রওনক হাসান, চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান, মেজবাউর রহমান সুমন, জাকিয়া বারী মম, নুসরাত ইমরোজ তিশা, আজমেরী হক বাঁধন, আশুতোষ সুজন, আদনান আল রাজীব, রায়হান রাফি প্রমুখ।
‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে আদালতে যাবেন ফারুকী
আটকে গেল ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’
বিবৃতিতে বলা হয়, “সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি ১৭ তারিখ এই বিষয়ে আপিল কমিটির একটি সভা আহবান করা হয়েছে। এই বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ এবং সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমাদের মধ্যে অনেকেই ছবিটি দেখেছি এবং বুঝতে অপারগ হচ্ছি কেন এই ছবিটির সঙ্গে এরকম আচরণ করা হচ্ছে। আমরা তাই ছবিটির নির্মাতার হতাশা ও মর্মবেদনা অনুভব করতে পারছি।”
সেন্সর বোর্ড রাখা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় এই বিবৃতিতে।
“সারা পৃথিবীতে যখন সেন্সরের ধারণাটি একটি বাতিলযোগ্য পুরানো ধ্যান-ধারণা হিসেবে আলোচিত হচ্ছে, ঠিক তখন সেন্সর, দীর্ঘসূত্রতা এবং অজানা কোনো কারণে সময়ের একজন খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকারের কাজ আটকে রাখা- ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করে এবং সকল কর্তৃপক্ষের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।”
শনিবার বিকেল আটকে রাখার মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতাও নির্দেশ করে বলে মন্তব্য করা হয় বিবৃতিতে।
“উন্নয়নশীল বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে চলচ্চিত্রসহ যে কোনো শিল্প মাধ্যম যখন প্রতিনিয়ত অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি পৃথিবীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত এবং পুরষ্কৃত হচ্ছে। সিনেমাটির সাথে নিজ দেশে এই অন্যায্য আচরণে মনে হয়, সম্ভবত আমরা এই দেশে ৩য় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বাস করছি। আপনাদের বোধ এবং প্রজ্ঞার উপর আমরা এখনো বিশ্বাস, আস্থা হারাইনি। আমাদের কাজ রাজপথে সংগ্রাম করা নয়, বরং একটি প্রগতিশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিল্প ও শিল্পীর ভূমিকাকে জারি রাখা। আমরা ‘শনিবার বিকেল’ এর নিঃশর্ত মুক্তি কামনা করি।”
বাংলাদেশ-ভারত-জার্মান এই তিন দেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে ‘শনিবার বিকেল’। বাংলা ভাষা ছাড়াও ইংরেজি ভাষাতেও হয়েছে ডাবিং। টানা ১৫ দিন মহড়ায় মাত্র ৭ দিনেই শেষ হয়েছে ছবির শুটিং। ‘শনিবারের বিকেল’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, পরমব্রত, তিশা, ইরেশ যাকের এবং ফিলিস্তিনি অভিনেতা ইয়াদ হুরানি।এর আগে মস্কো, সিডনি ও জাপানের চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি দেখান হয়।