উচ্চাঙ্গসংগীতের তিন দিকপাল পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা, বিদুষী অরুণা সাইরাম, পণ্ডিত উলহাস কাসলকর ঢাকার সংগীতপ্রেমীদের অকুণ্ঠ প্রশংসা করলেন বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের তৃতীয় দিনে।
Published : 30 Nov 2014, 07:05 PM
পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা বলেন, “৬০ বছরের সংগীতজীবনে এমন দর্শক আমি দেখিনি। শুধু উচ্চাঙ্গসংগীত শুনতে এতো লোকের উপস্থিতি অলৌকিক ব্যাপার।”
তিনি আরও বলেন, “রক মিউজিক, বলিউডের দাপুটে বাজারেও মানুষ এমন করে ভারতীয় উচ্চাঙ্গসংগীত শোনে!”
বিদুষী অরুণা সাইরাম বলেন, “অপেক্ষা করতে থাকি, কবে নভেম্বর মাস আসবে, আমিও ঢাকা আসব। এখানেই যদি বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারতাম। এ উৎসব এক রেঁনেসা, উচ্চাঙ্গসংগীতের পুর্নজন্ম।”
তিন সংগীতশিল্পীর প্রত্যেকেই তৃতীয়বারের মতো বাৎসরিক আসরটিতে অংশ নিচ্ছেন।
পাঁচদিনের উৎসবের তৃতীয় দিনের পরিবেশনা শুরু হয় সুচিশ্রী রায়ের নির্দেশনায় বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত কণ্ঠে কল্যাণ ঠাটের বিভিন্ন রাগের রূপ ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে। তাদের সঙ্গে তবলা সঙ্গত করেন এনামুল হক ওমর এবং গৌতম সরকার। হারমোনিয়ামে ছিলেন বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী এবং তালহা বিন আলী।
গুরুস্থানীয় মিথুন দের নাতি নিশিত দে সেতারে রাগ পুরিয়া ধানেশ্রী পরিবেশন করেন। তার সঙ্গে তবলা সঙ্গত করেন ইফতেখার আলম প্রধাণ।
মঞ্জুষা পাতিল রাগ ছায়ানট দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন। তিনি ঝুমরা তালে বিলম্বিত শেষে খেয়াল শোনান। সবশেষে মিশ্র খাম্বাজ রাগে ঠুমরীও পরিবেশন করেন তিনি। তার সঙ্গে তবলা সঙ্গত করেন সঞ্জয় অধিকারী।
এভাবে কথার ফাঁকে পণ্ডিত শর্মা রাগ চারুকেশী ও পাহাড়ী ধুন পরিবেশন করেন। সঙ্গে তবলা সঙ্গত করেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান অসিত রায় ধ্রুপদ পরিবেশন শুরু করেন এরপর।তিনি রাগ বাগেশ্রী পরিবেশন করেন চৌতাল ও সুরফাক্তা তালে। তাকে পাখোয়াজে সঙ্গত দেন পণ্ডিত মোহন শ্যাম শর্মা।
কর্নাটকি কণ্ঠশিল্পী বিদুষী অরুণা সাইরাম পরিবেশনা শুরু করেন রাগ হিন্দোলমের মাধ্যমে। স্বামী পুরন্দর দাসের একটি কম্পোজিশন ও রাগ কাটানা কুটুহলম পরিবেশন করেন।
ছোট করে রাগ তোড়ি পরিবেশন করেই কাজী নজরুল ইসলামের গান ‘আমার কালো মেয়ে রাগ করেছে’ গেয়ে শোনান দক্ষিণী শিল্পী বিদুষী অরুণা। তার পরিবেশনার ফাঁকে ফাঁকে রাঘবেন্দ্র রাওয়ের বেহালা, সাই গিরিধরের মৃদঙ্গ ও এস ভি রামানির ঘটমের বাজনা উপভোগ করেন শ্রোতারা।
সবশেষে মঞ্চে আসেন পণ্ডিত উলহাস কাশালকার। তাকে তবলা সঙ্গত করেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি এবং হারমোনিয়াম বাজান গৌরব চট্টোপাধ্যায়। তিনি ললিত রাগে বিলম্বিত, খেয়াল ও তারানা পরিবেশন করেন। এরপর পরিবেশন করেন দেশকার রাগে তিনতালে মধ্য লয়ের খেয়াল। সবশেষে ভৈরবী রাগ পরিবেশনের মাধ্যমে শেষ করেন।
সুললিত কণ্ঠের শিল্পী পণ্ডিত উলহাস ছেলে সামিহান কাশালকারকে নিয়ে একের পর তান পরিবেশনায় মুগ্ধ করেন শ্রোতাদের।
৩০শে নভেম্বর চতুর্থ দিনের উৎসব শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে। অংশ নেবেন অমিত চৌধুরী (নাচ- ভরতনট্যম), স্বরূপ হোসেন (তবলা), আমান আলী খান এবং আয়ান আলী খান (সরোদ), সামিহান কাশালকার (কণ্ঠ), তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার এবং গনেশ রাজাগোপালন (দ্বৈত: সরোদ ও বেহালা), কৌশিকী চক্রবর্তী (কণ্ঠ) এবং হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া (বাঁশি)।
ছবি: বেঙ্গল ফাউন্ডেশন।