বাংলাদেশের জন্মলগ্নেই দেশটিকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হত্যা করে লেখক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান, কবি মেহেরুন্নেসা, লেখক ও সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সার, গীতিকার ও সুরকার আলতাফ মাহমুদসহ আরও অনেককে। আর বুদ্ধিজীবী হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারীদের অন্যতম হোতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়েছে বুধবার দুপুরে। এ রায় বাংলাদেশের প্রাপ্য ছিল বলে মন্তব্য করেছেন সেই সব শহীদদের সন্তানসহ সংস্কৃতিকর্মীরা।
Published : 29 Oct 2014, 06:29 PM
স্বপ্ন সত্যি হলো: শমী কায়সার
‘সংসপ্তক’-এর রচয়িতা হিসেবে বেশি পরিচিত ১৯২৭ সালে জন্মগ্রহণকারী শহীদুল্লা কায়সার। তিনি পেশায় ছিলেন সাংবাদিক। বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে ১৯৪৭ সাল থেকেই কারাভোগ করতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগী আল বদর বাহিনী ধরে নিয়ে যায় তাকে। ১৯৭২ সালের ৩০শে জানুয়ারি তাকে খুঁজতে বের হন ছোট ভাই চলচ্চিত্রকার ও লেখক জহির রায়হান। তিনিও ফিরে আসেননি।
“নিজামীর বিচার হয়েছে, প্রত্যাশিতভাবে বিচারে তার ফাঁসি হয়েছে। বিচারে ফাঁসি দেওয়া ছাড়া আর কী উপায় ছিলো! কয়েকটি মামলায় তিনি সন্দেহাতীতভাবে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। রিভিউ হলেও তার ফাঁসির রায় বহাল থাকবে বলেই আমি মনে করি।”
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় থেকেই পরিচিত হয়ে ওঠেন সুরকার আলতাফ মাহমুদ। পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকেই গণসংগীত গাইতেন। আবদুল লতিফের সুরে কণ্ঠ মিলিয়েছেন ‘একুশের গান’-এ। পরবর্তীতে তিনি গানটিতে নতুন সুরারোপ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি তার ঢাকার বাসায় মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিতেন ও তাদের সহযোগিতা করতেন। কিন্তু ৩০শে অগাস্ট আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে তাকে তুলে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনি।
আলতাফ মাহমুদের একমাত্র সন্তান শাওন মাহমুদ বললেন, “বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য আইনের মাধ্যমে তার ফাঁসির রায়টা ইতিবাচক। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন দেশ হিসেবে ৪৩ বছর পার করছে। আগামী প্রজন্মের জন্য আজ একটি ইতিবাচক কাজ করতে পারলাম আমরা। তার ফাঁসির রায় এসেছে, এটা প্রত্যাশিত। আমি চাই, তার ফাঁসি হোক। একইসঙ্গে সব রাজাকারের বিচার দাবি করি আমি। আমি চাই, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে ফাঁসি দেওয়া হোক। একটা সময় এদেশে রাজাকার থাকবে না, রাখতে পারবো না আমরা।”
নাটকের দল ‘প্রাচ্যনাট’ শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার। তাদের বেশ কয়েকটি নাটকে যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আজাদ আবুল কালাম বললেন, নিজামীর এ রায় প্রত্যাশা করেছিলেন।
“যে অপরাধ তিনি করেছেন এবং অপরাধকে অস্বীকার করেছেন, তার উপযুক্ত শাস্তি প্রাপ্য ছিল। তার বিচার না হওয়াটা ছিল জাতির কলঙ্ক। এই একটি মানুষের অঙ্গুলি হেলনে এতো বুদ্ধিজীবী অকালে প্রাণ হরালো, তার বিচার হবে না! আমাদের রাজনীতির ভিত শক্ত থাকলে তার বিচার আরও আগেই হতো। আমার মনে হয়, এটা একটি প্রত্যাশিত রায় এবং প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই এমন রায় হওয়া উচিত।”