চলছে ৬৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসব। বিশ্বের নানা দেশের পাশাপাশি কানে উচ্চারিত হচ্ছে বাংলাদেশের নামও। আর সে জন্য ধন্যবাদের দাবিদার তরুণ নির্মাতা কামার আহমেদ সাইমন।
Published : 18 May 2014, 03:53 PM
প্রথম চলচ্চিত্র ‘শুনতে কি পাও’ গতবছর ফ্রান্সের ‘সিনেমা দ্যু রিলে’ আসরের গ্রাঁ প্রি খেতাব জিতেছিল। এবার কানের ‘লা সিনেমা দ্যু মন্দে’ যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘বিশ্বের চলচ্চিত্র’ – এই সিরিজে নির্বাচিত হয়েছে তার সিনেমা ভাবনা। ১২৫টি আবেদন থেকে বাছাই করা ১০টির মধ্যে কামার আহমেদের স্থান পাওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশে এই প্রথম।
‘বিশ্বের সিনেমা’ কান চলচ্চিত্র উত্সবের এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যার মাধ্যমে উত্সবে উদীয়মান চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রযোজকদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ করে দেয়। ‘ফ্রেঞ্চ মিনিস্ট্রি অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স’-এর পৃষ্ঠপোষকতায় এই প্রকল্পের জন্য নির্মাতারা একটি চলচ্চিত্রের মূলভাবনা, চিত্রনাট্য কিংবা কিছু প্রাথমিক কাজ জমা দেন। সেই সঙ্গে তাদের আরও কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। যেমন, তাদের কাজটির মাধ্যম হতে হবে বড় পর্দা এবং এর বাজেট থাকতে হবে ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে।
এ বছর প্রকল্পটি পরিচালনার নেতৃত্বে আছেন ‘সেন্ট্রাল স্টেশন’, ‘দ্য মোটরসাইকেল ডায়েরিস’-খ্যাত ব্রাজিলীয় চিত্রপরিচালক ওয়াল্টার সালেস।
প্রকল্পে নির্বাচিত দশ পরিচালকদের সাক্ষাত্কার নিয়েছে ‘ইন্সটিটিউট ফ্রান্সেস’। ‘গ্লিটজ’-এর পাঠকদের জন্য কামার আহমেদ সাইমনের সাক্ষাত্কারটি অনুবাদ করে দেওয়া হল--
মূল ভাবনা:
‘সাইলেন্স অফ দ্য সি-শেল’দুই বন্ধুর ভ্রমণের গল্প। সমুদ্রের দিকে ছুটে চলা এক নদীর খোঁজে তারা পেরিয়ে যায় বহু সীমান্ত, উপত্যকা।
প্রশ্ন: কোন তাড়না থেকে আপনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন?
উত্তর: আমি মুলত নিজের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করি। যে অদ্ভুত পৃথিবীতে আমরা বাস করি, তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য এটা আমার একটা নিজস্ব পন্থা। দ্বিতীয়ত, আমি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং তাদের স্মৃতির জন্য চলচ্চিত্র বানাতে চাই, যাতে যে উত্তরাধিকার আমরা রেখে যাচ্ছি তার জন্য যেন ক্ষমা পাই। তৃতীয়ত, আমি তাদের জন্য সিনেমা বানাতে চাই, যারা ৯০ মিনিটের সিনেমা দেখার জন্য পয়সা দিয়ে পরের ৯০ মিনিটে সেটার কথা ভুলে যেতে চায় না।
প্রশ্ন: এই গল্পের চিন্তাটা কোথা থেকে এল?
উত্তর: কৈশোরে আমি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে হারাই। উন্নত ভবিষ্যৎ আর নিরাপত্তার কথা ভেবে যে ঘর ছেড়েছিল। তাকে হারানোর বেদনা আমি এখনও বয়ে বেড়াই। এখনও আমি এটা মেনে নিতে পারি না। নিজের অস্তিত্ব নিয়ে নানা প্রশ্নের সঙ্গে যুঝতে যুঝতে বড় হবার সময় আমি অনুধাবন করলাম সবকিছু যুক্ত। বর্তমানটা অতীতেরই উত্তরাধিকার। অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকা অতীতের নানা পদক্ষেপের দ্বান্দ্বিক ক্রিয়াই বর্তমান। অতীত আর বর্তমানের নিজের ঝুলে থাকা ঠেকাতেই আমি লেখালেখি শুরু করলাম।
প্রশ্ন: মানবচরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্যটা আপনার কাছে জরুরি?
উত্তর: মানুষ আরেকটা প্রজাতি ছাড়া কিছুই নয়। অথচ মানুষ এটা ঠিক মানতে চায় না। তাদের মূল বৈশিষ্ট্য এই যে, নিজেদের প্রজাতি ছাড়া কোনো কিছুর মূল্য নেই তাদের কাছে।
প্রশ্ন: ‘সাইলেন্স অফ দ্য সি-শেল’ চলচ্চিত্রটির অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে কোনো সহযোগিতা পেয়েছেন কি?
উত্তর: বাংলাদেশ সরকারের ৬২ হাজার মার্কিন ডলারের প্রতিযোগিতামূলক একটা তহবিল আছে। এর মধ্যে ৪৮ হাজার মার্কিন ডলার নগদ দেওয়া হয় এবং বাকিটা সরকারচালিত স্টুডিওর সহায়তা। তবে এই স্টুডিও এখনও আধুনিক নয়। এই তহবিলেরও আবার অদ্ভুত একটা শর্ত আছে। তহবিল পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে চলচ্চিত্রের কাজ শেষ করতে হবে। এ কারণে আমরা এই তহবিলটাকে শেষ অবলম্বন হিসেবে রেখেছি।
প্রশ্ন: আপনার চলচ্চিত্রের এই দারুণ শিরোনামের উত্স কি?
উত্তর: প্রত্যেক আত্মারই একটা খোলস থাকে। একটা ঝিনুকের খোলসকে কানের সামনে ধরলে আপনি সমুদ্রের গর্জন শুনতে পাবেন। গীতায় বলা হয়েছে, “আত্মার কখনও জন্ম বা মৃত্যু হয় না। শরীর তৈরির সময়ও এর আগমন ঘটে না। আত্মা অমর, শাশ্বত, অবিনশ্বর এবং নিরবধি। শরীর ধ্বংস হলেও আত্মা ধ্বংস হয় না।”
আমি শুধু শাশ্বত আত্মার এই ধারণাকে নীরবভাবে ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করেছি।