‘ফর্মুলা ছবি’র সব শর্ত মেনে পরিচালক ইফতেখার শুভর প্রথম এবং অনুদানের সিনেমা ‘মুখোশ’।
Published : 22 Mar 2022, 09:50 AM
২০১৯-২০ সালে ‘লেখক’ নামে সিনেমাটি সরকারি অনুদান পেয়েছিল, যার গল্প শুভর নিজ উপন্যাস ‘পেইজ নম্বর ফোরটি ফোর’ থেকে নেওয়া।
বাণিজ্যিক ঘরানার অভিনেতা জিয়াউল রোশান আর পরীমনির সঙ্গে আজাদ আবুল কালাম পাভেল, মোশারফ করিম, প্রাণ রায়, ইরেশ যাকের, ফারুক আহমেদ, রাশেদ মামুন অপু, তারেক স্বপন ও এলিনা শাম্মী অভিনীত মুখোশ।
চেষ্টা ছিল সিনেমাটি ভালো করার, একসঙ্গে মুক্তি পেয়েছিল ৪০টি হলে। আজাদ আবুল কালাম পাভেল, মোশারফ করিম, প্রাণ রায়, ইরেশ যাকের কিংবা রাশেদ মামুন অপু চেষ্টা করেছেন নিজেদের চরিত্রকে রাঙিয়ে দিতে।
নিজের লেখা গল্পের চলচ্চিত্রায়নে কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন একাই ইফতেখার শুভ। একজন পোড় খাওয়া লেখক আর লেখার ক্ষমতা নেই এমন একজন লেখক যশ প্রার্থীর দাপটের গল্প ‘মুখোশ’।
খালেদ ইবরাহীম (অভিনয় করেছেন মোশারফ করিম) এর লেখার ভক্ত পরীমনি। পরীমনিকে পছন্দ করে চলচ্চিত্রের ‘সুপারস্টার’ নায়ক জিয়াউল রোশান। এই পছন্দ করাটাও ফিল্মি।
ছবির মারপিটের দৃশ্য অসম্পূর্ণ রেখে সে যায় পরীমনির সঙ্গে দেখা করতে। শুটিং ফেঁসে যাওয়াতে ভিলেন ‘সাদা ভাই’ রূপী রাশেদ মামুন অপুও শুটিং না করার হুমকি দেয়। পরীমনির কাছে গিয়ে সে জানতে পারে পরী লেখক ইবরাহীম খালিদের কঠিন ভক্ত, কিন্ত একটা বইয়ের ৪৪ পাতার পর বাকিটা হয়ত ইবরাহীম খালেদের লেখা নয়। ভাষা বা ঘটনা মেলে না।
রোশানের মনে হয়, এই গল্প সে কোনো এক স্ক্রিপ্টে পড়েছে। তার মনে পড়ে একদিন প্রকৃত লেখক ইকবাল মিয়াজি স্ক্রিপ্ট নিয়ে গিয়েছিলেন প্রযোজকের সঙ্গে দেখা করতে, প্রযোজক ইরেশ যাকের ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কারণ স্ক্রিপ্টে কোনো ‘বাণিজ্যিক উপাদান’ ছিল না। স্ক্রিপ্ট পড়ে ভালো লাগার পরেও প্রযোজক এক বৃষ্টিতে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে লেখক ইকবাল মিয়াজিকে সুটিংস্পট ছাড়া করেন।
সন্দেহ থেকে শুরু হয় খোঁজ নেওয়া, ধারণা হয় প্রকৃত লেখক ইকবাল মিয়াজীকে হয় হত্যা করা হয়েছে কিংবা আটকে রাখা হয়েছে। সাংবাদিক পরীর সঙ্গে খোঁজ খবর করা শুরু করে রোশান, মাওয়া ঘাটে দেখা মেলে সেই চা বিক্রেতার, যার দোকানে যেতেন ইকবাল মিয়াজি। জানা যায় নতুন তথ্য, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ইকবাল, তার স্ত্রী ও কন্যাকে মাসোহারা পাঠানো হয়। সন্দেহ বাড়ে আরও।।
পরী যায় খালেদ ইবরাহীমের সঙ্গে দেখা করতে। খালেদ তাকে কবিতা ভাবে, প্রতিটা পাতা উল্টে উল্টে পড়তে চায়। প্রতিদিন এমন কবিতা পড়া খালেদের অভ্যাস, খালেদ আবার সংসদ সদস্য হতে মনোনয়ন চায়। তার শিষ্য প্রাণ রায় সাবধান করে দেয় সব কবিতা পড়ে হজম করা সম্ভব হয় না!
ক্ল্যাইমেক্সে খানিকটা তালগোল পাকানোর পর মদ খেয়ে চুর হয়ে থাকা খালেদ ইবরাহিমের চ্যালা চামুণ্ডাদের ধোঁকা দিয়ে প্রকৃত লেখক ইকবাল মিয়াজীর কাছে পৌছাতে সক্ষম হয় পরী, রোশান ও প্রযোজকের বান্ধবী কাম নায়িকা এলিনা শাম্মী।
শেষ দৃশ্যে খালেদ ইবরহীমের অপকীর্তির খবর ভাইরাল হয়, মানুষজন তার বাসা ঘিরে থাকে, পুলিশ ও র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে। ফিল্মী নাটকীয়তার শেষে এসে দেখা যায় প্রযোজক ইরেশ যাকের আর খালেদের সহকারী প্রাণরায়, খালেদরূপী মোশারফ করিমকে ধরিয়ে দিতে সহায়তা করেছেন!
এত আয়োজনের মাঝে ফিল্মী ট্রিটমেন্টের মধ্য দিয়ে মোশারফ একজনের পিস্তল কেড়ে নেয়,প্রকৃত লেখক আজাদ আবুল কালামকে না মেরে সে নিজে আত্মহত্যা করে!
গানও আছে ছবিতে। আহমেদ হুমায়ুনের সুরে নোবেলের গাওয়া গানটা ভালো লাগতে পারে। সারা ছবিতে ‘ইনডোর’ বাস্তবতা প্রকট।
আউটডোরে পরী ও রোশানের গাড়ি চলাচলের দৃশ্যটা কয়েকবার আছে। কয়েকবার আছে জামা বদলের দৃশ্যের ছায়া এবং ডায়ালগ-‘কিছু কী দেখেছেন’?
সিসেমায় মুখোশ পরা লেখক খালেদের বই কোন কারণে নিষিদ্ধ হয়, তা স্পষ্ট হয় নি। বার বার ‘ব্যান্ড’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে।
আসল লেখক ইকবাল মিয়াজির স্ত্রী ও কন্যার প্রতি দরদ দেখা গেলেও তাদের ছবির উপস্থিতি শেষে একটা মাত্র দৃশ্যে।
ছবির সিনেমাটেগ্রাফি, থ্রিলারধর্মী স্ক্রিপ্ট ও পরিচালকের মুন্সিয়ানা নিয়ে হয়ত প্রশ্ন তোলা যায়। প্রশ্ন তোলা যায় ‘নায়ক ভিলেন ট্রিটমেন্ট’ বা আরও কিছু নিয়ে।
তবু প্রথম সিনেমা হিসেবে ইফতেখার শুভ ও ‘মুখোশ’কে স্বাগত জানাই। এই সিনেমার বাণিজ্যিক ধাঁচের দৃশ্যের সঙ্গে ভালো অভিনয়ের ‘মিশেল চেষ্টা’ লক্ষণীয়।
অনুদানের চলচ্চিত্র বাণিজ্যিক হতে পারবে না- এমন কোনো কথা নেই। সংলাপ নিয়ে প্রশংসা পেতে পারেন শুভ। সাংবাদিক চরিত্রে পরীমনিকে সাংবাদিক মনে হয়নি। রোশানকেও হাবভাবে মনে হয়নি সুপারস্টার।
তবে খল চরিত্রে মোশারফ করিম, লেখকের চরিত্রে আজাদ আবুল কালাম পাভেল, প্রযোজকের চরিত্রে ইরেশ যাকের ও মোশাররফের সহযোগী চরিত্রে প্রাণরায় তাদের চরিত্রের প্রতি সুবিচার করেছেন।
গল্প এবং অভিনয়ের টানেই দর্শক ফিরতে পারে হলে।
মুখোশ ছবিটা একসঙ্গে চল্লিশ হলে মুক্তি পাওয়া ও কিছু দর্শক উপস্থিতি দেখে অনেকেই আশাবাদী হয়েছেন। মুখোশ জানুয়ারিতে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে মুক্তি পায় এ বছরের চার মার্চ।
বাংলা ছবির জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক।