ভূতের প্রেমে পড়া কিংবা প্রেমিকা যখন ভবিষ্যতের বাসিন্দা- গল্পগুলো নিশ্চই হবে মনকাড়া।
Published : 20 Jun 2020, 05:21 PM
সব প্রেমের গল্পে মিলন হয় না। আবার দুজনে দেখা, প্রথমে ঝগড়া তারপর প্রেম, তারপর বিয়ের জন্য নানান আয়োজন- এরকম গতানুগতিক প্রেমের গল্প ছাড়াও রয়েছে ভিন্ন ধাঁচের প্রেম কাহিনি।
ভূতের সঙ্গে প্রেম করা, অতীতে বাস করা প্রেমিককে বাঁচাতে ভবিষ্যতে বাস করা প্রেমিকার আপ্রাণ চেষ্টা কিংবা দূর গ্রহের যাত্রা পথে অপরিচিত নারীর প্রেমে পড়ে দিওয়ানা হওয়ার মতো কল্পকাহিনি নিয়ে সিনেমা তৈরি করতে হলিউডের জুড়ি নেই।
যদিও সেসব গল্প ধার করা হয় অনেক সময়। তবে উপস্থাপনা আর সাবলিল অভিনয় মুগ্ধ করবে অনেককেই।
জাস্ট লাইক হেভেন
যদি একটা সুন্দর পেত্নির প্রেমে পড়েন! কেমন হয় ব্যাপারটা। ভয় তো দূরে থাক, সেই অতৃপ্ত আত্মার শান্তির জন্য তার দেহটা কোথায় আছে সেটা খুঁজে বের করার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। অবাস্তব ঘটনা বটে। তবে এরকম কাহিনি নিয়েই ‘জাস্ট লাইক হেভেন’ ছবিটি।
বহু চেষ্টার পর ডেভিড খুব সুন্দর একটা অ্যাপার্টমেন্ট পায় থাকার জন্য। কিন্তু কটা দিন যেতেই সে আবিষ্কার করে এই অ্যাপার্টমেন্টে আগে যিনি থাকতেন তিনি একজন ডাক্তার, নাম এলিজাবেথ। তার আত্মা প্রায়ই ঘুরে বেড়ায়। ডেভিডকে এসে তাড়া দেয় তার অ্যাপার্টমেন্টটা ছেড়ে দিতে।
প্রথমে ডেভিড মনে করে এটা কোনো মানুষ। পরে বুঝতে পারে- এই আত্মা আসলে পৃথিবীতে পড়ে আছে। কারণ এলিজাবেথ মারা যায়নি। কোথাও হয়ত অজ্ঞান হয়ে আছেন। আর সেই দেহ খুঁজে বের করতে এলিজাবেথের আত্মার সঙ্গে মাঠে নামেন ডেভিড। এক পর্যায়ে আত্মার প্রেমে পড়ে যায় সে। কিন্তু দেহে আত্মা প্রবেশের পর কি এই প্রেমের কথা আর মনে রাখবে এলিজাবেথ।
হাস্যরসাত্মক এই ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন মার্ক রাফলো এবং রিজ উইদারস্পুন। ফরাসি উপন্যাস ‘ইফ অনলি ইট ওয়্যার ট্রু’ অবলম্বনে ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন পিটার টোলান ও লেসলি ডিক্সন। ২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি পরিচালনা করেছেন মার্ক ওয়াটার্স।
দি লেক হাউজ
এখন তো মেসেঞ্জার যুগ। ‘টেক্সট’ লিখে কত ভাবের আদান প্রদান হয়ে যায় কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপে। অথচ ১৫ বছর আগেও এই সুবিধা ছিল না। তাই চল ছিল চিঠি লেখার।
এই চিঠি আদান প্রদানের মাধ্যমেই ডাক্তার কেইটের সঙ্গে ভাব-ভালোবাসা গড়ে ওঠে স্থপতি অ্যালেক্সের সঙ্গে। তবে সরাসরি তারা চিঠি আদান প্রদান করে না।
পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া অ্যালেক্সের একটা লেক হাউজ আছে। মানে হ্রদের ওপর বাড়ি। সেই বাড়ির পাড়ে রয়েছে একটা ডাকবাক্স। সেখানেই তাদের চিঠি আদান প্রদান চলে।
তবে সমস্যা একটাই। দুজনেই একসময় আবিষ্কার করে তাদের মধ্যে রয়েছে সময়ের ব্যবধান। দুই বছরের ব্যবধান। ডাকবক্সটা কাজ করছে অনেকটা টাইম মেশিনের মতো।
অ্যালেক্স বাস করছে ২০০৪ সালে। আর কেইট বাস করছে ২০০৬ সালে। অথচ ২০০৪ সালেও কেইট আছে; তবে এই কেইট তো আর অ্যালেক্সকে চেনে না। তাহলে কীভাবে দুই বছরের ব্যবধান কাটিয়ে এই প্রেমের পূর্ণতা পাবে? নাকি সারা জীবন ধরেই চলতে থাকবে সময়ের ব্যবধান।
হলিউড সিনেমার জনপ্রিয় জুটি কিয়ানু রিভস এবং স্যান্ড্রাবুলক অভিনীত এই ছবি পরিচালনা করেছেন আলেহান্দ্রো আগরেস্টি। দক্ষিণ কোরিয়ার ২০০০ সালে মুক্ত পাওআ ‘টু মারি’ ছবি অবলম্বনে নির্মিত ‘দি লেক হাউজ’ ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৬ সালে।
প্যাসেঞ্জার্স
এবার ভবিষ্যতের প্রেম কাহিনি।
২৩৪৩ সালের পৃথিবীতে বসবাস করার উপায় নেই বললেই চলে। তাই বিভিন্ন গ্রহে চলছে মানুষের নতুন বসতি স্থাপনের কাজ। অথচ একেকটা গ্রহের দূরত্ব এতদূর যে মানুষ সেখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বুড়ো হয়ে মারাই যাবে।
তাই বিশেষ ব্যবস্থায় মানুষকে ঘুম পাড়িয়ে মহাকাশ যানে করে পাঠানো হয় দূর দূরান্তের গ্রহে। যাকে বলে ‘হাইবারনেইশন’ পদ্ধতি। আর যে চেম্বারে মানুষগুলো ঘুমিয়ে থাকে তাকে বলে ‘হাইবারনেইশন পড’।
এরকমই একটি মহাকাশ যান ‘দি অ্যাভালন’; ৫ হাজার ঘুমন্ত ঔপনিবেশিক এবং ২৫৮ জন কর্মী নিয়ে দূর গ্রহ ‘হোমস্টেড টু’র দিকে ধেয়ে চলেছে। পৌঁছাতে সময় লাগবে ১২০ বছর। তবে যাত্রা শুরু হওয়ার ৩০ বছরের মাথায় অনেকগুলো গ্রহাণুর আঘাতের শিকার হয় এই মহাকাশ যান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মহাকাশ যানের অনেক যন্ত্রাংশ।
এর মধ্যে একটি হল জিম প্রিস্টনের ‘হাইবারনেইশন পড’। ফলে গন্তব্যে পৌঁছানোর ৯০ বছর আগেই জেগে ওঠে সে। একসময় সে বুঝতে পারে সারা মহাকাশ যানে সেই একমাত্র জেগে উঠেছে। অথচ আবার ঘুমিয়ে পড়ার কোনো পদ্ধতি আর নেই। ফলে দূর গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই তাকে মারা যেতে হবে স্বাভাবিক নিয়মে।
এই একাকিত্ব মেনে নিতে পারে না যন্ত্র প্রকৌশলী জিম। প্রায় এক বছর একা একা মহাকাশ যানে কাটানোর পর হঠাৎ সে আবিষ্কার করে ‘হাইবারনেইশন পড’য়ে ঘুমিয়ে থাকা অরোরা নামের এক সাংবাদিককে। ব্যক্তিগত রেকর্ড ঘেটে আর তার ভিডিও ব্লগ দেখে অরোরার প্রেমে পড়েন জিম। শেষে একাকিত্ব সামলাতে না পেরে অরোরাকে কৌশলে জাগিয়ে তোলে।
অরোরাও প্রথমে ভাবে কোনো ত্রুটির কারণে জেগে উঠেছে সে। নিয়তি মেনে নিয়ে একসময় সে জিমের প্রেমে পড়ে। তবে ঘটনা চক্রে জানতে পারে জিম তাকে কৌশলে জাগিয়ে তুলেছে। ঘৃণায় জিমকে ত্যাগ করলেও, এই মহাকাশ যানেই দুজন আলাদা জীবন কাটাতে শুরু করে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মহাকাশ যানে ততদিনে অনেকরকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। হয়ত নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস হয়ে যাবে এই যান।
তাহলে কী অরোরা আর জিম কোনোদিনও এক হতে পারবে না। মহাকাশ যানে থাকা হাজার হাজার যাত্রীর মৃত্যু কি অবধারিত।
জিম আর অরোরা তাই মহাকাশ যান বাঁচাতে এক হয়। তবে তারা কী আর দুজনের মনের মাঝে এক হতে পারে?
বিজ্ঞান-কল্পকাহিনী নির্ভর এই ছবিতে অভিনয় করেছেন জেনিফার লরেন্স, ক্রিস প্র্যাট, মাইকেল শিন এবং লরেন্স ফিশবার্গ। পরিচলনা করেছেন মর্টিন টিল্ডাম।