পর্দার প্রেম যখন বাস্তবে পরিণতি পায়, তখন বিনোদন জগতের তারকাদের ঘর বাঁধা আর ঘর ভাঙা- দুটো নিয়েই গণমাধ্যমের আগ্রহ থাকে বিস্তর। সম্প্রতি হলিউডের প্রভাবশালী দম্পতি ব্র্যাঞ্জেলিনার বিচ্ছেদের ঘোষণা নিয়ে মিডিয়ার মাতামাতি প্রমাণ দিচ্ছে সেকথারই।
Published : 22 Sep 2016, 05:14 PM
রূপালি জগৎটাই এমন, যেখানে হর-হামেশাই এক অপরের প্রেমে পাগল হচ্ছেন তারকারা, আবার কিছু দিন পর কাঁচের দেয়ালের মতো ভেঙে যাচ্ছে সম্পর্কগুলো। ভালোবেসে ঘর বেঁধেছেন এমন তারকা-জুটির সংখ্যা নেহাত কম নয় বিনোদন জগতে। কিন্তু স্বার্থের সংঘাতে অনেকেই আবার ইতি টানছেন দীর্ঘদিনের দাম্পত্যের, এমন উদাহরণও রয়েছে বিস্তর। চলুন জেনে নেই ১০টি দুনিয়া কাঁপানো বিচ্ছেদের কথা যা কিনা এখনো নাড়া দিয়ে যায় সবাইকে।
১. এলিজাবেথ টেইলর-রিচার্ড বার্টন
১৯৬৪ সালে ‘ক্লিওপেট্রা’ ছবির সেটে একে অপরের সাথে পরিচিত হন তারা। ছবির সেটেই পরস্পরের প্রেমে পড়েন তারা। পর্দার অ্যান্টনিও ও ক্লিওপেট্রা যেন বাস্তবে এসে ধরা দেয়। প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার সময় দু’জনেই ছিলেন বিবাহিত। কিন্তু তাতে থেমে থাকেনি তাদের ভালোবাসা। ফলে কিছু দিনের মাঝেই চতুর্থ স্বামী এডি ফিশারের সাথে বিচ্ছেদ ঘটে টেইলরের আর বার্টনও তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন। সে বছরই বিয়ে করেন এ তারকা জুটি।
এরপর দীর্ঘ ১০ বছর সংসার করেছেন তারা। ১৯৭৪ সালে অল্প বয়সী অভিনেত্রীর সাথে সম্পর্কের অভিযোগে বার্টনের সাথে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটান টেইলর। কিন্তু বছর না ঘুরতেই আমার একে অপরের জন্য টান অনুভব করতে থাকেন দু’জন। ফলে ১৯৭৫ সালে আবারো বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তারা!
কিন্তু সে বিয়েও টেকেনি। এক বছরের মাথায় আবারো বিচ্ছেদ এর আবেদন করেন টেইলর। পরবর্তীতে মার্কিন ধনকুবের জন ওয়ার্নারকে বিয়ে করেন টেইলর।
১৯৮৪ সালে মারা যান রিচার্ড বার্টন, আর ২০১১ সালে লিজ টেইলর। বার্টনকে মরার আগ পর্যন্ত ভুলতে পারেরননি টেইলর। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, বার্টন বেঁচে থাকলে আবারও তাকে বিয়ে করার কথা ভাবতেন তিনি!
২. ডেমি মুর-ব্রুস উইলিস
তারকা দম্পতি ডেমি মুর ও ব্রুস উইলিসকে বলা হতো হলিউডের আদর্শ দম্পতি। ১৯৯৮৭ সালে ভালবেসে একে অপরকে বিয়ে করেন তারা। ১১ বছরের দাম্পত্য জীবনে তাদের ঘরে এসেছে তিন কন্যা সন্তান। কিন্তু হুট করেই উইলিস-এর সাথে বিচ্ছেদ এর সিদ্ধান্ত নেন মুর।
পরবর্তীতে তার চেয়ে ১৫ বছরের ছোট আরেক অভিনেতা অ্যাশটন কুচারকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু সে সম্পর্কও ছয় বছররে বেশি টেকেনি।
মুরকে ভুলতে পারেননি বলেই নাকি উইলিস এখনও বিয়ে করেননি। তবে দুজনের বন্ধুত্ব আজও টিকে আছে।
৩. নিকোল কিডম্যান-টম ক্রজ-কেটি হোমস
১৯৯০ সালে ‘ডেইজ অফ থান্ডার’ ছবির শুটিং করতে গিয়ে একে অপরের প্রেমে পড়েন দু’জন। সে বছরই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন টম ক্রুজ এবং নিকোল কিডম্যান। টম ক্রুজের এটি দ্বিতীয় বিয়ে হলেও নিকেল কিডম্যানের প্রথম বিয়ে ছিলো এটি। এ দম্পতির রয়েছে দুই দ্ত্তক সন্তান- মেয়ে ইসাবেলা ও ছেলে কর্নর।
কিন্তু ২০০১ সাল থেকেই তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। ২০০৩ সালের অগাস্ট মাসে বিচ্ছেদ ঘটে তাদের। পরবর্তীতে সংগীতশিল্পী কিথ আরবানকে বিয়ে করেন কিডম্যান। আর ক্রুজ বিয়ে করেন আরেক অভিনেত্রী কেটি হোমসকে।
২০০৬ এর নভেম্বর মাসে বেশ ঘটা করেই বিয়ে হয় টম ক্রুজ-কেটি হোমস জুটির। কিন্তু সে সম্পর্কও টেকেনি তাদের। ক্রুজের ‘সায়েন্টলজি’ ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে মেয়ে সুরি’কে সরিয়ে রাখতেই ক্রুজকে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেন কেটি। ২০১২ তেই আলাদা হয়ে যান এ তারকা দম্পতি।
৪. ব্র্যাড পিট-জেনিফার অ্যানিস্টন
টিভি তারকা জেনিফার অ্যানিস্টন ও অভিনেতা ব্র্যাড পিট একে অপরের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ১৯৯৮ সালে। সে বছরেই বিয়ে সেরে ফেলেন তারা। এর আগে দু’জনেরই একাধিক প্রেমের অভিজ্ঞতা থাকলেও এটি ছিলো দু’জনেরই প্রথম বিয়ে। হলিউডের অন্যতম সেরা জুটির অ্যাখ্যা পেয়েছিলেন তারা। কিন্তু চার বছরের মাথায় এসে এ সম্পর্ক বিচ্ছেদ এর দিকে গড়ায়।
‘মিস্টার এন্ড মিসেস স্মিথ’ ছবির সেটে কাজ করতে গিয়ে অ্যাঞ্জেলিনা জোলির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন পিট। পরবর্তীতে জোলিকে বিয়ে করেন পিট এবং ‘ব্র্যাঞ্জেলিনা’ জুটি আরো বেশি জনপ্রিয়তা পায় হলিউডে। কিন্তু সম্প্রতি এ জুটিও এখন হাঁটছে বিচ্ছেদের পথেই।
৫. ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট-রবার্ট প্যাটিনসন
২০০৮ সালে ‘টোয়াইলাইট’ ছবির শূট্যিং করতে গিয়েই একে অপরের সাথে পরিচয়। পরবর্তীতে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। চার বছরের সম্পর্কে হলিউডের অন্যতম আকর্ষণীয় জুটি হিসেবে পরিচিতি পান তারা।
কিন্তু ২০১২ তে ‘স্নো হোয়াইট এন্ড দ্য হান্টসম্যান’ ছবির পরিচালকের সাথে স্টুয়ার্টের একটি ঘনিষ্ঠ ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্পর্কের টানা-পোড়েন চলতে থাকে তাদের। ২০১৩তে সম্পর্কের পাট চুকিয়ে ফেলেন এ তারকা জুটি।
শেষ খবর হলো, এ মুহুর্তে সঙ্গীতশিল্পী টুইগ এর সাথে প্রেম করছেন প্যাটিনসন। অন্যদিকে ক্রিসেন্টন স্টুয়ার্ট তার সহকারী অ্যালিসিয়া কার্গিল এর সঙ্গে সমকামী সম্পর্কের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
২০০৩ সালে ‘ডেয়ারডেভিল’ ছবির সেটে পরস্পরের কাছে আসেন তারা। প্রেমের এ সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয় ২০০৪ সারের দিকে। ২০০৫ এ এসে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন এ জুটি। এর আগে সংগীত শিল্পী জেনিফার লোপেজ এর সাথে গভীর প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও বেন অ্যাফ্লেকের এটিই প্রথম বিয়ে, যদিও গার্নারের দ্বিতীয় বিয়ে ছিলো এটি। এ দম্পতির ঘরে জন্ম নিয়েছে তাদের তিন কন্যা সন্তান।
কিন্তু ২০১৫তে এসে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন গার্নার। সন্তানদের দেখে রাখার সহকারী মহিলার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন অ্যাফ্লেক, এমনই অভিযোগের ভিত্তিতে দীর্ঘদিনের দাম্পত্যের ইতি টানেন গার্নার। যদিও সন্তানদের কারণে এখনো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে তাদের মাঝে।
২০০০ সালের শেষের দিকে কোটি কোটি নারী ভক্তের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে ছোটবেলার বান্ধবী সুজান খানকে বিয়ে করেন বলিউড তারকা হৃত্বিক রোশান। বিয়ের আগে চার বছর চুটিয়ে প্রেম করেন তারা। বলিউডের অন্যতম আদর্শ জুটি হিসেবেই পরিচিত ছিলেন এ দু’জন। তাদের ঘরে রয়েছে দুই পুত্র হৃহান ও হৃদান।
কিন্তু ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ১৭ বছরের সম্পর্কের অবসান ঘটান তারা। বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে ‘কাইটস’ ছবির নায়কা বারবারা মোরি ও অভিনেত্রী কাঙ্গানা রানাউত এর সাথে হৃত্বিকের সম্পকের বিষয়টি উঠে আসলেও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনননি দু’জনের কেউ। তবে সন্তানদের জন্যই দু’জনে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
২০১১ মালে ‘দ্য রাম ডায়েরি’ ছবির সেটে পরস্পরের প্রতি আসক্ত হন এ দু’জন। এক বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর ২০১২ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন মডেল ও অভিনেত্রী অ্যাম্বর হার্ড ও অভিনেতা জনি ডেপ। জনি ডেপের এটি দ্বিতীয় বিয়ে হলেও হার্ডের এটিই প্রথম। তবে চার বছরের মাঝেই তাদের এ সম্পর্ক বিচ্ছেদের দিকে গড়ায়।
ডেপের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ দিয়ে ২০১৬ এর আগস্ট মাসে বিচ্ছেদের আবেদন করেন হার্ড। বিচ্ছেদের ক্ষতিপূরণ-এর অর্থ যোগাড় করতে নিজের বাড়ি বিক্রি করে দেন ডেপ। পরে সে অর্থ একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দান করেন হার্ড।
২০০৮ সালে ‘বাচনা আ্যাই হাসিনো’ ছবির সেটে পরিচয় হয় রানবির কাপুর ও দিপিকা পাড়ুকোনের। সেখান থেকেই তাদের প্রেমের সূত্রপাত। সে সময় বেশ সাড়া ফেলেছেলো তাদের প্রেমের সম্পর্ক। কিন্তু বছর না ঘুরতেই বিচ্ছেদ ঘটে তাদের। সে সময় বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে আরেক বলিউড অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফের সাথে রানবিরের সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা গেলেও তা উড়িয়ে দেন দু’জনই।
পরবর্তীতে ২০০৯ সালে পাপ্পারাজ্জিদের ক্যামরোয় ধরা পড়ে স্পেন-এর সমুদ্রতীরে রানবির ও ক্যাটরিনার অবকাশ যাপনের চিত্র। তখন থেকেই জোর প্রেমের গুঞ্জন উঠে তাদেরকে নিয়ে নিয়ে। কিন্তু এ ব্যাপারে দীর্ঘ ছয় বছর মুখ খোলেননি কেউ। অবশেষে ২০১৫ সালে সম্পর্কের কথা গণমাধ্যমকে জানান রানবির। এমনকি তাদের বাগদানের ঘোষনাও দেন তারা। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসে তাদের সম্পর্কচ্ছেদের কথা শোনা যায়।
অন্যদিকে দিপিকা পাড়ুকোন এ মুহুর্তে চুটিয়ে প্রেম করছেন আরেক বলিউড অভিনেতা রানভির সিং-এর সাথে।
১৯৯৯ সালে সাঞ্জায় লিলা বানসালির ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’ ছবির সেটে পরস্পরের প্রেমে পড়েন বলিউডত তারকা সালমান খান ও সাবেক বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাই। বলা হয়ে থাকে বলিউডে ঐশ্বরিয়ার প্রথম প্রেম ছিল সেটি। সালমান-ঐশ্বরিয়ার প্রেম ছিলো সে সময়ের অন্যতম এক আলোচিত ঘটনা। কিন্তু তিন বছরের বেশি টেকেনি তাদের সে সম্পর্ক। সালমানের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সম্পর্কের ইতি টানেন ঐশ্বরিয়া।