যমুনা ফিউচার পার্কে চলন্ত সিঁড়িতে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন এ অভিনেত্রী।
Published : 04 Dec 2022, 12:39 AM
যমুনা ফিউচার পার্কে চলন্ত সিড়িতে ‘দুর্ঘটনার’ শিকার হয়েছেন অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ; তবে বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যান বাবা ও ভাইয়ের তাৎক্ষণিক তৎপরতায়।
শুক্রবার সন্ধ্যার সেই ঘটনার ভয়াবহতা বর্ণনা করে দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন তার ফেইসবুক পেইজে।
বাবা ও ভাইয়ের সহায়তায় বড় ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যান জানিয়ে লেখেন, “যদি তাৎক্ষনাৎ আমাকে আমার ভাই পেছন থেকে টান দিয়ে না সরাত বা বাবা আমাদের দুই জনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে না দিত, আমি জানি না আজকে এই স্ট্যাটাস লেখার জন্য আমি বেঁচে থাকতাম কি না।
“হয়ত থাকতাম, তবে আমার পা থাকত না বা আমি কখনো মা হতে পারতাম না। সে পরিস্থিতির ভয়াবহতা হয়ত লিখে বা বলে বোঝানো সম্ভব না। আমি নিচে নেমে দাঁড়ানোর কয়েক সেকেন্ডের কিছুই আমার মনে নেই। সম্বিত ফেরার পর দেখি আমার হাঁটুর উপর থেকে প্যান্ট ছেড়া এবং পুরো পা ঝা ঝা করছে। ততক্ষণে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে।”
ফারিণ লিখেছেন, “গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার আশে পাশে যমুনা ফিউচার পার্কের প্রথম ফ্লোর থেকে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নামার সময় গেট দিয়ে ঢুকেই মেইন চলন্ত সিঁড়িটায় আমার দুর্ঘটনা ঘটে।
“সিঁড়ির নিচের অ্যালুমিনিয়ামের পাত খুলে বের হয়ে ধারালো কোণা আমার পায়ে আঘাত করে। আমি সিঁড়ির ডান পাশে ছিলাম। আর ওইটা ছিল ঊর্ধমুখী।”
তিনি লেখেন, “কলিসন হয় আমার পরনের প্যান্ট ছিঁড়ে যায় অনেকটুকু আর পায়ের বিভিন্ন স্থানে ছিলে যায় ও ডিপ কাট হয় যেটা পরবর্তীতে টের পাই। কিন্তু ঐ মুহূর্তের শুধু একটা দৃশ্যই আমার মাথায় ঘুরে ফিরে বারবার আসছে তা হলো কিছু বোঝার আগে সবাই গগনবিদারী চিৎকার করে উঠল আর আমি দেখলাম ডান পা স্ক্র্যাচ করে পায়ের পাশ দিয়ে মাঝখান হয়ে বাম পায়ের উপরের দিকে একটা পাত ঢুকে যাচ্ছে আর চলন্ত সিঁড়িটিও আমাকে আরও সেদিকেই ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।”
এ ঘটনাকে দুদুর্ঘনা মানতে আপত্তি কেন, তার ব্যাখায় ফারিণ লেখেন, “মজার ব্যাপার হলো আমার এই ঘটনাকে আমি এক্সিডেন্ট মানতে নারাজ। কারণ আমার এই ঘটনা ঘটার কমপক্ষে পনের মিনিট আগে আরেক ব্যক্তির সাথে একই ঘটনা ঘটে। তার পায়ের মাংস ভেদ করে ওই পাতের কোণা ঢুকে যায়। উনি নিজে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে লোকজনকে সাবধান করছিলেন এবং দায়িত্ববান কাউকে খুঁজছিলেন। শেষে কাউকে না পেয়ে হেল্প ডেস্কে যান এবং এরমধ্যে আমার এই ঘটনা ঘটে। সাথে আরও একজন ভুক্তোভুগীকে খুঁজে পাই।
“আমার চিৎকার চেঁচামেচিতে ফাইনালি একজন স্টাফ আসে এবং অনেকবার বলার পর ম্যানেজারকে কল করে। ততক্ষণে প্রচুর মানুষ জড়ো হয়ে যাচ্ছে আর ব্যথার চেয়ে বেশি ফিল হচ্ছিল হিউমিলিয়েশন। ওখানে কোনো সিন ক্রিয়েট করার চেয়ে আমার মনে হয়েছে ঠাণ্ডা মাথায় এটা সমাধান করা দরকার। তাই আমি বলার পর দুই জন কর্মচারী আমাদের তিন জন আহত ব্যক্তি ও তাদের সাথে যারা ছিল সবাইকে বেসমেন্ট ১ এ নিয়ে যায়।”
প্রতিষ্ঠানটির অব্যবস্থাপনার কথা জানিয়ে লেখেন, “আমাদের ধারণা ছিল নিশ্চয়ই দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। আশ্চর্য বিষয় হল এতবড় মলে কোনো অ্যাম্বুলেন্স অথবা ইমার্জেন্সি ব্যাবস্থা তো দুরে থাক একটা ফার্স্ট এইড বক্সও নেই। পনের বিশ মিনিট তারা শুধু এই ফার্মেসি সেই ফার্মেসি ফোন করল। কেউ নাকি দোকান ছেড়ে আসতে পারবে না। অবশেষে আধা ঘন্টা পর একজন আসে আর ওই দুই ব্যক্তির চিকিৎসা করে। কিন্তু ফিমেল ডক্টর ছাড়া আমার চিকিৎসা সম্ভব ছিল না। এর মধ্যে আমার ভাইকে পাঠালাম একটা ট্রাউজার কিনে আনার জন্য?
“যমুনা ফিউচার পার্ক কর্তৃপক্ষের মতে এই দুর্ঘটনা নাকি বেশি লোক ওঠার কারণে হয়েছে! তার মানে কি আপনারা আগে থেকেই জানতেন? নাকি ধারণ ক্ষমতার বেশি লোড নিয়ে আগে থেকেই এই অবস্থায় ছিল তা আপনারা টেরই পাননি? আর একজনের সাথে এটা হওয়ার পরও কেন কোনো পদক্ষেপ নেননি আপনারা? এস্কেলেটর এর দায়িত্বে থাকা কাউকে ডাকতে বললে বলে সে আসেনি। আর আমার এই পরিস্থিতিতে তারা আমাকে চা কফি অফার করে যেখানে আমার বসার মত পরিস্থিতিতে নেই।”
‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন’ সিরিজের এ অভিনেত্রী লেখেন, “আজকে আমার বা অন্য কারও প্রাণ গেলেও তাদের কিছুই আসত যেত না। আমার সারা রাত ঘুম হয়নি। মেন্টালি ট্রমাটাইজড। আমার ভাই যদি আমার পেছনে আজকে না থাকত বা আমাকে ধরতে যদি একটু দেরি করে ফেলত তার পর কি হত আমি চিন্তাও করতে চাই না।”
ভক্তদের উদ্দেশে তাসনিয়া ফারিণ লেখেন, “আল্লাহ যাতে কাউকে জীবনে এই পরিস্থিতিতে না ফেলে। আর আপনারা লিফট বা এসকেলেটর যাই ব্যবহার করেন না কেন নিজের সাবধানতা অবলম্বন করবেন।
“আমি শারীরিকভাবে সুস্থ আছি। ডক্টর পাঁচ দিন বেড রেস্ট আর এন্টি বায়োটিক দিয়েছে। বোন ইনজুরি হয়নি। বসতে পারছি না আর ডান দিকে কাত হয়ে শুতে হচ্ছে। তবে মানসিক এই ট্রমা আদৌ কোনোদিন কাটবে কিনা জানি না। সবচেয়ে বেশি ফিল হচ্ছে হতাশা। মরে গেলেই মানুষ কোনো বিচার পায় না। আমি তো বেঁচে আছি আমার আর কী বিচার হবে।”
ফারিণের পোস্টে ভক্তরা সান্ত্বনা জানানোর পাশাপাশি দুঃখ প্রকাশ ও সাহস দিচ্ছেন। কেউ কেউ এ ঘটনার বিচার চাইছেন।
ছোট পর্দায় পা দিয়েই জনপ্রিয়তা পাওয়া অভিনেত্রী ফারিণ ওটিটিতেও দাপট দেখাচ্ছেন। ২০২১ সালের জুলাই মাসে ভারতভিত্তিক ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘জি ফাইভ’-এ মুক্তি পায় মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর পরিচালনায় ওয়েব সিরিজ ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন’। সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন তাসনিয়া ফারিণ।
ওয়েব ফিল্ম ‘নিঃশ্বাস’ ও ওয়েব সিরিজ ‘কারাগার’-এ তার অভিনয় প্রশংসিত হয়। আগামী ২২ ডিসেম্বর আসছে কারাগারের প্রথম পর্ব।
এছাড়া গত শুক্রবার এ অভিনেত্রীর প্রথম সিনেমা মুক্তি পেয়েছে কলকাতায়। এসকে মুভিজের প্রযোজনায় ‘আরও এক পৃথিবী’ নামের ওই সিনেমায় ফারিণের সহশিল্পী কৌশিক গাঙ্গুলী, সাহেব ভট্টাচার্য, অনিন্দিতা বোসের মতো শিল্পীরা।
দেশে একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য নির্মিত ‘দাহকাল’ নামে একটি ওয়েব ফিল্মে কাজ করেছেন ফারিণ। দাহকালে তার সহশিল্পী হিসেবে দেখা যাবে সংগীতশিল্পী পান্থ কানাইকে।