বর্ষবরণের আয়োজনে সময়ের বিধিনিষেধ যে মানা হবে না, সাংস্কৃতিক জোট তা আগেই জানিয়েছিল।
Published : 14 Apr 2024, 11:51 PM
অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশের প্রত্যয়ে ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বরণ করে নিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
রোববার বিকেল ৪টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই মনোজ্ঞ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, চলে রাত ৯টা অবধি। বর্ষবরণের আয়োজনে সময়ের বিধিনিষেধ যে মানা হবে না, সাংস্কৃতিক জোট তা আগেই জানিয়েছিল।
'মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা'- এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আইটিআই) এর সাম্মানিক বৈশ্বিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার।
তিনি বলেন, “আজকে সারাদিন ধরে আমরা নতুন বছরকে আবাহন করছি। আপনারা দেখেছেন যে নববর্ষের অনুষ্ঠান কেবলমাত্র ঢাকাতে নয়, সারাদেশেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিদেশে যেখানে বাংলা ভাষাভাষী লোক আছেন, তারাও নববর্ষের আয়োজন করে থাকেন। সুতরাং বাংলার যে সংস্কৃতিক ঐতিহ্য এটা আরও প্রসারিত হচ্ছে।”
রামেন্দু মজুমদার বলেন, “এটাকে নিয়ে যারা সমালোচনা করেন, যারা ধর্মের সঙ্গে এটাকে মিলিয়ে ফেলেন, তাদের জন্যে বলি, ধর্মের সঙ্গে সংস্কৃতির কোনো বিরোধ নেই। আজকে ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে জনমনে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের এ ধরনের অসাম্প্রদায়িক উৎসবগুলো আমরা যত বেশি করতে পারব, ততই অসাম্প্রদায়িক চেতনা বৃদ্ধি পাবে। কুসংস্কার দূর হবে।
“শুধু ঢাকায় উপরে-উপরে দিবসভিত্তিক অনুষ্ঠান করে খুব একটা লাভ হবে না। এজন্য প্রয়োজন যে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপকভাবে সংস্কৃতি চর্চার আয়োজন করা।”
নাট্যকার, অভিনেতা মামুনুর রশীদ বলেন, “গতবারও আমরা এখানে (শহীদ মিনার) নববর্ষের উৎসব করেছিলাম। আজকে সে তুলনায় অনেক বেশি জনসমাগম হচ্ছে। যদিও ছুটির দিন, তবু চারদিকে মানুষের ঢল দেখে মনে হচ্ছে যে সত্যিই বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র৷ এবং এদেশের মানুষ একটা অসাম্প্রদায়িক উৎসবের প্রতীক্ষা করে সারাবছর ধরে।”
তবে আশপাশের দৃশ্যপট যে পাল্টে যাচ্ছে, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটা একটু বিভক্ত এবং সেই বিভক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনা, ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা এমনভাবে প্রসার লাভ করছে। দুঃখের ব্যাপার হল, যে সরকারের সময়ে এই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসার লাভ করল, সেই সরকার কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতন্ত্রের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা চাই সারাদেশে একটা অসাম্প্রদায়িক শিক্ষা ব্যবস্থাও রচিত হোক। না হলে সমাজ এবং জাতি বিভক্ত শুধু নয়, অন্ধকারের দিকে ধাবিত হবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। তিনি বলেন, “শত-শত বছর ধরে কৃষিপ্রধান আমাদের এই গ্রাম বাংলায় নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে আমরা বাংলা নববর্ষ আয়োজন করেছি। এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে বৈশাখী মেলা হয় না। এই বৈশাখী মেলা গ্রামীণ সংস্কৃতি। নারীরা অপেক্ষা করে থাকেন কখন বৈশাখী মেলা হবে, তারা গৃহস্থালি সামগ্রী সংগ্রহ করবেন৷ ছোট-ছোট ছেলে মেয়েরা অপেক্ষা করে থাকে কখন তারা নাগরদোলায় চড়বে। এই উৎসবগুলো হল বাঙালির শ্বাশত উৎসব।
“এটাই বাঙালির শেকড়, যার উপর ভিত্তি করে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ ঘটেছিল। আমাদের বড় দুর্ভাগ্য যে স্বাধীন দেশেও আমাদের এই ঐতিহ্যপূর্ণ অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির চর্চা করবার জন্য নানাভাবে হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের শক্তি বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতির যে উপাদান, আমাদের শক্তি বাংলাদেশের জনগণ। আমরা জনগণকে নিয়ে এই পশ্চাৎপদ শক্তি, যারা আমাদের সংস্কৃতিকে বিনাশ করতে চায়, তাদের মুখোমুখি দাঁড়াতে চাই।”
অন্যদের মধ্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি ঝুনা চৌধুরী, আহমেদ গিয়াস, আজহারুল হক আজাদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
আলোচনা শেষে একক ও দলীয় গান, নাচ ও কবিতা আবৃত্তি এবং পথনাটকসহ হরেক আয়োজন ছিল পাঁচ ঘণ্টার অনুষ্ঠানে।