সৈয়দ জামিল ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে।
Published : 10 Sep 2024, 07:08 PM
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বে যোগ দেওয়ার দিনই নাট্য নির্দেশক ও শিক্ষক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেছেন, এখন থেকে শিল্পকলার সর্বস্তরে কাজ হবে জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ।
মঙ্গলবার সকালে নতুন মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেন তিনি; এ সময় তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন একাডেমির কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিল্পীরা।
শুভেচ্ছা জানাতে আসে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনও। এ সময় সংস্কৃতিক অঙ্গনের সবাইকে নিয়ে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন নতুন মহাপরিচালক।
সৈয়দ জামিল বলেন, “একাডেমির কর্মকাণ্ডকে সব স্তরের মানুষের মাঝে আমরা পৌঁছে দিতে চাই। একাডেমির সকল কাজকর্ম হবে জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ। আইন অনুযায়ী সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। আইন ও নিয়মনীতি-বহির্ভূত কোনো কিছুই এখানে ঘটবে না।”
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে লিয়াকত আলী লীকার এক যুগে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিস্তর অভিযোগ ছিল। সেই সঙ্গে থিয়েটারকর্মীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সভাপতির পদও আঁকড়ে ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে আন্দোলনও গড়ে উঠেছিল।
তবে লাকীকে কেউ সরাতে পারেনি। অবশেষে প্রবল গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাকে বিদায় নিতে হয়েছে।
অবশ্য সরকার পতনের পর দেশের বেশ কিছু একাডেমিতে হামলা হয়েছে। ২২টি জেলা ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
দুপুরে একাডেমির কর্মীদের সঙ্গে প্রাথমিক মতবিনিময়ের সময় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একাডেমিগুলোর সংস্কার এবং সেগুলোতে দ্রুত কার্যক্রম চালু করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন সৈয়দ জামিল।
মতবিনিময়ে একাডেমির কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিতে এবং সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রবিধানমালা সংশোধন, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, আবাসন সংকটসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন একাডেমির কর্মকর্তারা।
লিয়াকত আলী লাকী যুগের অবসানের পর শিল্পকলায় এই দায়িত্বে কে আসছেন, তা নিয়ে বেশ আলোচনা ছিল। এর মধ্যে আগামী দুই বছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ জামিলকে এই দায়িত্ব দেওয়া হল।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সোমবার সৈয়দ জামিলকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সৈয়দ জামিল ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সৈয়দ জামিল ১৯৭৮ সালে ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বছরে তিনি ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার টেলিভিশন প্রডিউসারস ট্রেইনিংয়ে প্রথম হন। ১৯৮৯ সালে তিনি ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইক থেকে থিয়েটার আর্টসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
তার নির্দেশনায় মঞ্চে এসেছে ২০টিরও বেশি নাটক। এর মধ্যে রয়েছে সেলিম আল দীন রচিত ‘চাকা’, মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদসিন্ধু’, পালাগান থেকে করা ‘কমলা রানীর সাগর দিঘী’, মনসা মঙ্গল থেকে ‘বেহুলার ভাসান’, সংযাত্রা থেকে ‘সংভংচং’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা থেকে অবলম্বন ‘শ্যামার উড়াল’, কাশ্মীরি কবি আগা শহীদ খানের কাব্য অবলম্বনে ‘রিজওয়ান’, শহিদুল জহিরের উপন্যাস অবলম্বনে ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা', সারাহ কেইনের ‘ফোর পয়েন্ট ফোর এইট সাইকোসিস’ অবলম্বনে ‘চার দশমিক চার আট, মন্ত্রাস’ এবং একক অভিনীত নাটক বিস্ময়কর সবকিছু।
৭০টির বেশি মঞ্চ প্রযোজনার আলোক নির্দেশনা ও ৮০টিরও বেশি নাটকের মঞ্চপরিকল্পনা করেছেন সৈয়দ জামিল। নিজের বিভাগ ছাড়াও দেশের বড় নাট্যদলগুলোর জন্য প্রযোজনা নির্দেশনা দিয়েছেন। ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে অলাভজনক ও পেশাদার নাট্যদল ‘স্পর্ধা; ইনডিপেনডেন্ট থিয়েটার কালেকটিভ’।