বন অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করে চার দফা দাবি জানিয়েছে টেলিভিশন নাট্য পরিচালকদের সংগঠন ‘ডিরেক্টরস গিল্ড’।
Published : 26 Aug 2022, 07:11 PM
নাট্যনির্মাতা অনন্য ইমন এবং চলচ্চিত্র পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে কোন ধারায় কোটি টাকার মামলা হল, বন অধিদপ্তরের কাছে তা জানতে চেয়েছে টেলিভিশন নাটক পরিচালকদের সংগঠন ‘ডিরেক্টরস গিল্ড’।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিরেক্টরস গিল্ড জানিয়েছে, নাটক নির্মাতারা বৃহস্পতিবার বন অধিদপ্তরের সঙ্গে এক ‘পূর্ব নির্ধারিত’ বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। সেখানে তারা চারটি দাবি তুলে ধরেছেন কর্মকর্তাদের কাছে।
বন অধিদপ্তর অবশ্য বলেছে, সেটি কোনো ‘আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল না’।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক সানাউল্লাহ পাটোয়ারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিরেক্টরস গিল্ডের নেতৃবৃন্দ বসতে চেয়েছেন। তাদের সাথে আমাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে।
“আমরা তাদের কথা শুনেছি এবং আমাদের দিক থেকে তাদেরকে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছি।”
সম্প্রতি ব্যাপক সাড়া জাগানো হাওয়া সিনেমায় শালিক পাখিকে খাঁচায় বন্দি রাখা, মেরে খাওয়া কিংবা শাপলা পাতামাছ ধরার দৃশ্যগুলো আইন লঙ্ঘনের নজির বলে প্রাণী অধিকারকর্মীরা অভিযোগ তোলেন।
এরপর সিনেমাটি দেখে পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে মামলা করে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।
এছাড়া ‘হাওয়া’র ছাত্রপত্র বাতিল এবং প্রদর্শন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে এক আইনজীবীও পরে উকিল নোটিস পাঠান।
এদিকে গেল মার্চে নির্মাতা অনন্য ইমনের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয় বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনি। কারণ ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডেতে একটি টেলিভিশনে প্রচারিত ‘শেষ গল্পটা তুমি’ নাটকের একটি দৃশ্যে খাঁচায় বন্দি টিয়া পাখি দেখান নির্মাতা।
এই প্রেক্ষাপটে বন অধিদপ্তরের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ডিরেক্টরস গিল্ডের পক্ষ থেকে চার দাবি তুলে ধরার কথা জানানো হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
নাট্যনির্মাতা অনন্য ইমন আর চলচ্চিত্র পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের উপর দায়ের করা মামলার দ্রুত সমাধান করা। কোন ধারায় কোটি টাকার মামলা হলো তা অবগত করা।
নাটক-সিনেমায় বন্যপ্রাণী বিষয়ক আইনের যদি কোনো ধারা অমান্য করা হয়, তখন সরাসরি মামলা না করে যথাযথ ব্যক্তি-সংগঠনের সাথে আলোচনা করে সুরাহা করা।
নাটক-সিনেমায় গল্পের বিশেষ প্রয়োজনে বন্যপ্রাণী দেখানোর প্রয়োজন হলে, বন অধিদপ্তরের ওয়ান স্টপ সার্ভিস পয়েন্ট চালু করা, যেন নির্মাতা-প্রযোজক বন্যপ্রাণী ব্যবহারে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা পেতে পারে।
অতিদ্রুত পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকারদের সঙ্গে বন অধিদপ্তরের গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করা। যেখানে আলোচনা হবে, কী কী দেখানো যাবে, আর কী কী দেখানো যাবে না। যে সব বণ্যপ্রাণী দেখানো যাবে না, তা দেখাতে হলে কী কী করতে হবে। ওই আলোচনায় দেশের ‘বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ’ উপস্থিত থাকবেন। গোলটেবিল শেষে প্রেস ব্রিফিং করতে হবে।
ডিরেক্টরস গিল্ড থেকে দেওয়া চারটি দাবির বিষয়ে সানাউল্লাহ পাটোয়ারী বলেন, “ঠিক দাবি কেন হবে, এটা শেয়ারিং বলা যেতে পারে।
”তারা আমাদের কাছে কিছু বিষয় শেয়ার করেছেন, আমরাও কিছু শেয়ার করেছি। এভাবেই আলোচনা হয়েছে।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিরেক্টরস গিল্ড বলেছে, “আমাদের দাবিগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে তারা (বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা) সাধুবাদ জানান এবং এর উত্তরে তারা বলেন- মামলা হয়ে গিয়েছে, এখন এই মামলা কোর্ট ফয়সালা করবে।”
“সেখানে বন অধিদপ্তর তাদের আইনজীবী নিয়োগ করবে না। ২০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে না, বা এটা কোনো চার্জ করবে না। প্রকৃতির ইকো সিস্টেমে এই পরিমাণ টাকার ক্ষতি হতে পারে। দেশের প্রচলিত আইনে উল্লেখ যা আছে, জজ সাহেব সে বিবেচনায় রায় দেবেন। হতে পারে এক হাজার বা এক লাখ।”
হাওয়া সিনেমা বন্ধের কোনো উদ্যোগ বন অধিদপ্তর নেয়নি জানিয়ে এডিটর গিল্ডের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এটা তাদের কাজও না। সংগঠন বা ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ করে থাকতে পারে। এই বিষয়ে বন অধিদপ্তর জড়িত না।”
তবে সানাউল্লাহ পাটোয়ারী বলেন, “বন অধিদপ্তর আইনজীবী নিয়োগ করবে না এরকম কোনো কথা হয়নি। আদালতের বিষয় নিয়ে এ রকম কথা তো বন অধিদপ্তর বলতে পারে না। আমরা তাদেরকে বুঝিয়ে বলেছি। এটা আদালতের বিষয়, এখন আদালতের আইনি প্রক্রিয়ায় মীমাংসা হবে।”
বন অধিপ্তরের পরিচালক, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট প্রধান এবং তার টিম, জনসংযোগ কর্মকর্তা ও ডিরেক্টরস গিল্ডের প্রতিনিধিরা প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন