লালনের গান থেকে নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সংলাপে উঠে আসে লড়াই-সংগ্রামের নানা প্রতিচ্ছবি।
Published : 16 Nov 2024, 10:33 PM
ফকির-সন্ন্যাস বিদ্রোহ থেকে সরকার পতনের জুলাই-অগাস্ট গণ আন্দোলন-এই ভূখণ্ডের রক্তঝরা ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে ছড়িয়ে থাকা নানা সাহসের গল্প উঠে এল এক পরিবেশনায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজপথে পরিবেশিত ‘লাল মজলুম’ নামের এ গণপরিবেশনায় অভিনয়, গান, প্রতিবাদী প্রদর্শনী, পথনাটকে আন্দোলনের আবহ ফুটিয়ে তোলেন শিল্পীরা।
লালনের গান থেকে নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সংলাপে উঠে আসে লড়াই-সংগ্রামের নানা প্রতিচ্ছবি।
শনিবার বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে এটি শুরু হয়; পরে খণ্ড খণ্ড পরিবেশনার মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ ও চারুকলা হয়ে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে পরিবেশনার মাধ্যমে তা শেষ হয়।
রাস্তায় সংঘটিত মিছিল ও গণপরিসরে উপস্থাপিত বিভিন্ন শিল্পকর্মসহ পথনাটক, পোস্টারনাটক, ইনস্টলেশন ও পারফরম্যান্স আর্টের ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে এ উন্মুক্ত নাট্য পরিবেশনায়।
পরিবেশনায় দেখা যায়, একে একে কুশিলবরা বর্ণনা করে চলেন এই ভূখণ্ডের পূর্বপুরুষদের বীরত্বগাথা, তার সঙ্গে কিছু শিল্পকর্মও মিছিলের মত করে এগিয়ে চলে।
এমন এক পরিবেশনায় ঊনসত্তরের আন্দোলনের শহীদ আসাদ যখন বলেন, “আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ’, তখন উপস্থিত দর্শকও যেন একাত্ম হয়ে যান পরিবেশনাটির সঙ্গে।
মিছিল করতে করতে চারুকলা অনুষদের সামনে গিয়ে দেখা মেলে ‘আয়নাঘর’ নামে একটি দেয়ালের; যা ভেঙে ফেলার সময় লালনের আরশীনগরের জয়ধ্বণি বাজে মাইকে।
পরিবেশনার কুশিলবরা যখন শাহবাগ থানার সামনের চত্বরে উপস্থিত হন, তখন জলকামান ছুঁড়ে মারার দৃশ্যটি মনে করিয়ে দেয় সাম্প্রতিক জুলাই অভ্যুথানের কথাও।
সবশেষে জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে একটি প্রতীকী সংসদ সাজিয়ে শিল্পীরা একে একে বক্তব্য দেন। যেখানে পাহাড়ে সেনাশাসন প্রত্যাহারসহ একটি নিরাপদ সর্বপ্রাণের বাংলাদেশের দাবি তোলা হয়।
এ গণপরিবেশনার নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহমান মৈশান।
তিনি জানিয়েছিলেন, “এটি কোনো পূর্বনির্ধারিত নাট্যিক পরিবেশনা নয়। বরং স্থান-স্থাপত্য-চলমানতা ও দর্শকের সংযোগে পূর্ণ হবে 'লাল মজলুম'।”
নির্দেশক বলেন, “ক্রাউড ফান্ডিংয়ে নির্মিত রাজপথ-গণপরিবেশনা 'লাল মজলুম', একদিকে শিক্ষার্থী-শ্রমিক জনতার জুলাই অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত স্মৃতি যেমন পুনঃসৃজন করে, তেমনি এই জনপদে ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকে সংঘঠিত গণঅভ্যুত্থানকেও একসূত্রে গ্রথিত করে।”
প্রতীকি অধিবেশনে রিকশাচালক ফয়সাল বলেন, “আমরা যে যুদ্ধ করেছি, এখনো করছি। আমাদের কথা আমাদেরকেই বলতে হবে। পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার করতে হবে।”
শিশির রায় নামে আরেকজন বলেন, “আমরা মানুষ, আমরা লড়াই করছি সমতার জন্য। আমরা আরো লড়াই করবো, এই লড়াই লাল মজলুমদের আন্দোলন।”
সবশেষে নির্দেশক শাহমান মৈশানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পরিবেশনাটি শেষ হয়।
তিনি বলেন, “জনগণের রাজনৈতিক আত্মত্যাগের স্মৃতি ভুলে যাওয়ার বিরুদ্ধে এক অবিরত সংগ্রামের প্রযোজনীয়তাকে জনপরিসরে শিল্পরূপ দিতে 'লাল মজলুম একটি প্রচেষ্টারূপে গণ্য হতে পারে।”
সবাইকে কথা বলা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এর মধ্য দিয়েই মানুষকে তার অধিকার বুঝে নিতে হবে।”
'লাল মজলুম' পরিবেশনায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গণতন্ত্রকামী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের শিল্পী ও সংগঠকরা অভিনয় করেন।