“৪৫ ভাগ প্রবাল সেন্টমার্টিন থেকে ক্ষয় হয়ে গেছে। প্রবাল আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব যদি আমরা সেখানকার কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করি”, বলেন তিনি।
Published : 07 Nov 2024, 10:59 PM
প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনকে রক্ষা করতেই নানা বিধিনিষেধ দেওয়ার কথা আবার তুলে ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রশ্ন তুলেছেন, দ্বীপটি ডুবে গেলে স্থানীয়রা কী করবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর পানি ভবনে জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত 'নতুন বাংলাদেশে পরিবেশ, জলবায়ু ও রাজনীতি' বিষয়ে সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
সেমিনারে নানা প্রসঙ্গে কথা বলেন পরিবেশ উপদেষ্টা, তার একটি ছিল সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে।
সেমিনারে ওপেন ডিসকাসন পর্বে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা দেশের প্রবাল দ্বীপটি নিয়ে সরকারের বিধিনিষেধের বিষয়টি তোলেন।
তখন রিজওয়ানা বলেন, “৪৫ ভাগ প্রবাল সেন্টমার্টিন থেকে ক্ষয় হয়ে গেছে। প্রবাল আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব যদি আমরা সেখানকার কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করি। পুরো প্রবাল ক্ষয় হলে সেন্টমার্টিন ডুবে যাবে। তখন স্থানীয়রা কী করবে?”
গত ২২ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান, এখন থেকে পর্যটকরা কেবল তিন মাসে দ্বীপটিতে যেতে পারবেন। এর মধ্যে নভেম্বর মাসে দ্বীপটিতে রাতে থাকা যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে থাকা গেলেও দিনে দুই হাজারের বেশি যাওয়া যাবে না।
এত বছর ফেব্রুয়ারিতে পর্যটকরা দ্বীপটিতে ভ্রমণ করলেও এখন থেকে এটি হবে না। এই মাসে দ্বীপকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হবে।
সরকারের এসব সিদ্ধান্তে পর্যটক সংশ্লিষ্টরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, দ্বীপটিকে ঘিরে নানা জল্পনা কল্পনাও ছড়িয়েছে।
এসব গুঞ্জনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, “সেন্ট মার্টিন কোনো দেশের কাছে লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা নেই।”
‘সেন্ট মার্টিন হবে প্লাস্টিকমুক্ত’
পানি ভবনের সেমিনারে পরিবেশ উপদেষ্টা একই দিন অন্য আরও একটি আয়োজনে সেন্ট মার্টিন নিয়ে কথা বলেন। তিনি দ্বীপকে একটি প্লাস্টিকমুক্ত হিসেবে গড়ে তোলার আগ্রহের কথা বলেছেন।
রিজওয়ানা বলেন, “সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে একটি টেকসই পর্যটনের মডেল ও পরিবেশ সংরক্ষণের আদর্শ স্থানে রূপান্তর করতে পারি। এই প্রচেষ্টা সফল করতে সকল ক্ষেত্রের সহযোগিতা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।”
সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এবং পরিবেশ অধিদপ্তর আয়োজিত ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সম্ভাবনা: একটি প্লাস্টিকমুক্ত স্বর্গের সূচনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে কথা বলছিলেন উপদেষ্টা।
ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞ এবং অংশগ্রহণকারীরা সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন।
ঢাকার খাল উদ্ধারে কমিটি
এর আগে সেমিনারে রিজওয়ানা জানান, ঢাকা শহরের খালগুলোকে উদ্ধার করে দূষণমুক্ত করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
“আজকেই ঢাকা শহরের খালগুলোকে উদ্ধার করে দূষণ মুক্ত করার কর্মপরিকল্পনা করতে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত কর্মপরিকল্পনা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হবে, তারপর আমরা যাব।
“নদীগুলোও বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নদীর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে আর ঢাকা সবচেয়ে অবসবাস যোগ্য নগরীর একটি। এগুলো বললেই দ্রুত ঠিক করা যাবে না। কিন্তু আমাদের অগ্রাধিকার প্রত্যেকটা সমস্যা সমাধানের কর্মপরিকল্পনা করার। এবং কাজগুলো শুরু করে দিয়ে যাব।”
গত সেপ্টেম্বরে দুই মাসের মধ্যে নদী দখলমুক্ত করার কর্মপরিকল্পনা দিতে বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “দুই মাস হল ৫৭ টি জেলা থেকে প্রস্তাব এসেছে। পরিকল্পনাগুলো যাচাই বাছাই করে আমরা কাজটা শুরু করব।”
অতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগে বাংলাদেশের ৭৮ ভাগ মাটি দূষিত হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন রিজওয়ানা।
আরও পড়ুন
সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণ সীমিত করলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
সেন্ট মার্টিন নিয়ে গুজবে বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ আইএসপিআরের