সরকারের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হলেও আইএমএফ বলছে, বাংলাদেশ ঋণ চেয়ে তাদের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ ) এক মুখপাত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই খবর নিশ্চিত করেছেন।
চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে আইএমএফফের কাছ থেকে বাংলাদেশের ঋণ চাওয়ার বিষয়টি বেশ কিছু দিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে।
গত সপ্তাহে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে এসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করলে সেই আলোচনা আরও জোর পায়।
তবে গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তা নাকচ করে বলেন, “বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আইএমএফের কাছে কোন অর্থ সহায়তা চায়নি। আইএমএফও বাংলাদেশের কাছে এ ধরনের কোনো প্রস্তাব করেনি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের আইএমএফের কোন সহযোগিতার প্রয়োজন নেই।”
কিন্তু মঙ্গলবার কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে আইএমএফ এর কাছে বাংলাদেশের ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা চাওয়ার খবর আসে।
বিষয়টি নিশ্চিত হতে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল ও অর্থ সচিব ফাতেমা ইয়াসমিনকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে কল করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।
অর্থমন্ত্রীর দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তারাও খবরটি অস্বীকার করে যান।
পরে আইএমএফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কাছ থেকে ঋণের প্রস্তাব পাওয়ার কথা জানানো হয়।
আইএমএফ এর সদর দপ্তরের একজন মুখপাত্র মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ আইএমএফের রেসিলিয়ান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবলিটি ফ্যাসিলিটিস বা আরএসএফ ফান্ড থেকে অর্থ পাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার বিভিন্ন পদক্ষেপ এগিয়ে নিতে অর্থ ব্যবহার করা হবে বলে তারা জানিয়েছে। আইএমএফের এই প্রকল্পের অর্থ পেতে আলাপ-আলোচনা শুরু করার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।”
আইএমএফ বাংলাদেশকে অর্থ সহায়তা দিতে ‘প্রস্তুত’ জানিয়ে ওই মুখপাত্র বলেন, আইএমএফের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করার কাজে হাত দেবে।
মহামারীর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের অভিঘাতে শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হওয়ার প্রান্তে না পৌঁছলেও বাংলাদেশের অর্থনীতিও ঝুঁকির মুখে বলে আইএমএফের মূল্যায়ন।
সঙ্কট বড় নয় বলে বাংলাদেশ সরকার দাবি করে এলেও জ্বালানি বাজারে অস্থিরতার কারণে জ্বালানির আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে ইতোমধ্যে রিজার্ভে টান পড়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানোসহ ব্যয় সাশ্রয়ী নানা পদক্ষেপ নেওয়ার মধ্যেই আইএমএফ থেকে ঋণ চাওয়ার খবরটি এল।
যে তহবিল থেকে বাংলাদেশ অর্থ চেয়েছে বলে আইএমএফের তরফে বলা হচ্ছে, তা থেকে নিম্ন আয়ের দেশ ও ঝুঁকিপূর্ণ মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে ঋণ দেওয়া হয়।
কোভিড মহামারী এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলার জন্য নীতি সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেওয়া হয় এই প্রকল্পে।
২০ বছর মেয়াদে এই ঋণ দিয়ে থাকে আইএমএফ, তার প্রেস পিরিয়ড ১০ বছর। আর ঋণে সুদের হার আলোচনার মধ্য দিয়ে ঠিক হবে।