বাজেট সহায়তা পেতে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ

গত এক দশকে প্রথমবরের মত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা নিতে আলোচনায় বসেছে বাংলাদেশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2022, 03:25 PM
Updated : 29 June 2022, 03:25 PM

সরকার আশা করছে, আগামী কয়েক অর্থবছরের জন্য বাজেট সহায়তা হিসেবে ৬৮০ কোটি ডলারের মত দিতে পারে আইএমএফ। এর শুরুতে আগামী অর্থবছরের জন্য ১০০ কোটি ডলার ঋণ পেতে পারে বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএমএফ এর কাছ থেকে সর্বশেষ ২০১১-১২ অর্থবছরে ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বাজেট সহায়তা বাংলাদেশ নিয়েছিল। ‘এক্সটেনডেট ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ)’ শিরোনামে ওই ঋণ সহায়তা আইএমএফ দিয়েছিল সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য।

মাঝে বহু বছর এ ধরনের ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন না হলেও এবার মহামারীর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব, ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ব বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে পড়ার শঙ্কায় সরকারকে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে আবারও বাজেট সহায়তা হিসেবে ঋণ চাইতে হচ্ছে ।

বাংলাদেশের তরফ থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাতে ঋণের পরিমাণ, শর্ত, সুদহার ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক চলছে আইএমএফ, অর্থমন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এর মধ্যে। গত সোম ও মঙ্গলবারের ধারাবাহিকতায় বুধবারও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক হয়েছে।

বাংলাদেশে আইএমএফ  এর আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দের সঙ্গে এ আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরিফা খান।

বৈঠকে অংশ নেওয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়িন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে। ঋণ সহায়তার পরিমাণ ও শর্তের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে সবকিছু একটি কাঠামোতে আনার প্রক্রিয়া চলছে।”

অতীতে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক এ সংস্থার ঋণ সহায়তা নিতে বাংলাদেশকে আর্থিক খাতে সংস্কারের শর্ত মানতে হয়েছে। এবারও সেরকম সংস্কারের বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে।

আইএমএফের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ যে চাঁদা পরিশোধ করে, তাতে ঋণের কোটা ১০০ কোটি ডলার। এর সর্বোচ্চ ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ বাংলাদেশ এক বছরে ঋণ নিতে পারে।

শুধু আইএমএফ নয়, বিশ্ব ব্যাংক এবং এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকেও বাজেট সহায়তা নিতে আলোচনা শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

কর্মকর্তারা বলছেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার আইএমএফ থেকে কমপক্ষে কয়েক বছরের মেয়াদে বড় অংকের ঋণ অনুমোদন করিয়ে রাখতে চায়, যাতে প্রয়োজনের সময় অর্থ পেতে সমস্যা না হয় এবং বিদেশি মুদ্রার মজুদ স্থিতিশীল রাখা সহজ হয়।

বিদায়ী অর্থবছরের দশ মাসে  বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৫৭ কোটি ডলারে, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। বৈদেশিকি লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে রেকর্ড ১ হাজার ৫৩২ কোটি ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ নেমে এসেছে ৪২ বিলিয়ন ডলারের নিচে, আমদানি বিল পরিশোধ করলে তা আরও নেমে আসবে।

বিদায়ী অর্থবছরে (২০২১-২০২২) সরকার ২ লাখ সাড়ে ১৪ হাজার কোটি ৬৮১ কোটি টাকা ঘাটতি ধরে বাজেট তৈরি করেছিল। সংশোধনে তা হয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

আর আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সরকার বাজেট ঘোষণা করেছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঘাটতি রেখে। ওই ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার মত ঋণ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

বিভিন্ন দেশকে বাজেট সহায়তা দিতে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ তহবিল পরিচালনা করে আইএমএফ। এসবের মধ্যে রয়েছে ‘রেসিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি(আরএসএফ), এক্সটেনডেট ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) ও এক্সটেনডেট ফান্ড ফ্যাসিলিটিজ (ইএফএফ)।

বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য আরএসএফ তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে আইএমএফ। এসব ঋণের সুদহার হয় ১.৫৩ শতাংশ, তার সঙ্গে সার্ভিস চার্জ দিতে হয় শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে।