মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ: ৩ মাসের মধ্যে ফের বাড়ল রেপো সুদহার

রেপো সুদহার সাড়ে ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা ২ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2022, 12:30 PM
Updated : 29 Sept 2022, 12:30 PM

ইউক্রেইন যুদ্ধ ও টাকার ক্রমাগত মান হারানোর প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতির বাড়তি চাপ সামলাতে তিন মাসের ব্যবধানে আবার রেপো হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার নীতি সুদহার নামে পরিচিত রেপো সুদহার সাড়ে ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে।

অবশ্য অন্যান্য নীতিসুদ হার যেমন- রিভার্স রেপো ৪ শতাংশ, বিশেষ রেপো ৮ শতাংশ ও ব্যাংক রেটে ৪ শতাংশে কোনো বদল আনা হয়নি।

নতুন সুদহার আগামী ২ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে বলে সার্কুলারে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরি পলিসি কমিটির ৫৬তম সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সার্কুলারে জানানো হয়।

এর আগে গত ৩০ জুন চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় রেপো সুদহার ৫ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

আর তারও এক মাস আগে ২৯ মে রেপো সুদহার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশে উন্নীত করে।

উভয় ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এমন নীতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রেপো সুদহার হিসেবে পরিচিত নীতি সুদহার বাড়ানোর অর্থ হল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করতে এখন বাড়তি সুদ দিতে হবে ব্যাংকগুলোকে। ব্যাংকগুলো সাধারণত এক থেকে সাত দিনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এমন সুদে টাকা ধার করে থাকে। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে তারল্য ও বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে সুদ হারে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়, তাকে বলে ব্যাংক রেট।

আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে।

Also Read: মূল্যস্ফীতি সামলাতে রেপো হার বাড়িয়ে সতর্ক মুদ্রানীতি

Also Read: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক

বৃহস্পতিবার নীতি সুদহার বাড়ানোর আগে বিদেশি মুদ্রায় স্বল্প মেয়াদি নেওয়া ঋণের বিপরীতে সুদহারও ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এসওএফআর বা লাইবরের সঙ্গে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ যোগ করে এ সুদহার নির্ধারণ করা হয়।

ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে যুদ্ধ বাধলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম চড়তে থাকে। জ্বালানি ও তেল, খাদ্যশস্যসহ পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে প্রায় দেশই মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ে।

বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। গত জুনে তা ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে পৌঁছায়, যা নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরের  মাসে সেখান থেকে কমে জুলাইয়ে তা ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়। তবে অগাস্টের তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়াচ্ছে। গত জুলাই মাসে চতুর্থবারের মত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার বাড়ায়।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আবার সুদহার বাড়ানোর পথে হাঁটবে না বলে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালকুদার জানালেও বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে রেপো সুদহার বাড়ানোর ঘোষণা এল।

Also Read: বিদেশি মুদ্রায় ঋণ: সুদহার ফিরল আগের জায়গায়

বাংলাদেশে গত দুই বছর এ সুদহার অপরিবর্তিত ছিল। কোভিড মহামারীকালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এ বিষয়ে ভাবতে হয়নি। উল্টো ভাইরাস সংক্রমণে লকডাউনে জনজীবন ও অর্থনীতিতে স্থবিরতার মধ্যে ২০২০ সালের ২৯ জুলাই নীতি সুদহার কমিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

ওই সময় করোনাভাইরাস মহামারীতে অর্থের জোগান বাড়াতে রেপো (পুনঃক্রয় চুক্তি) ও রিভার্স রেপোর সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ‘সম্প্রসারণমুখী’ নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছিল।