জরুরি ব্যাংক ঋণ নিতে সীমা বাড়াল সরকার

দুই ঋণ উপকরণের বিদ্যমান সীমা আলাদাভাবে ৩৩ শতাংশের বেশি বাড়িয়ে দৈনিক আট হাজার টাকা করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2023, 01:33 PM
Updated : 9 Feb 2023, 01:33 PM

জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার সীমা বাড়িয়েছে সরকার; এতে দৈনিক ১৬ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এজন্য দুই ঋণ উপকরণের সীমা সম্প্রতি ৩৩ শতাংশের বেশি বাড়িয়ে ছয় হাজার কোটি থেকে আট হাজার কোটি টাকা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ওয়েজ অ্যান্ড মিনস এডভান্সেস (ডব্লিউএমএ) এবং ওভার ড্রাফট (ওডি) উপকরণের বিদ্যমান সীমা আলাদাভাবে বাড়িয়ে আট হাজার টাকা করা হয়েছে।

এ দুটি উপকরণের মাধ্যমে সাধারণত জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। এতদিন এ দুটির মাধ্যমে প্রতিটির বিপরীতে ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার সীমা ছিল।

দুটি উপরকরণেই সীমা বাড়াতে গত ১ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয় আর সেদিন থেকেই তা কার্যকর করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে জানিয়েছেন মেজবাউল হক।

এ সীমা এমন সময়ে বাড়ানো হল যখন ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়ছে সরকারের। আরও ঋণ নিলে তা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে বলে ধারণা অর্থনীতিবিদদের। বাংলাদেশ ব্যাংকও মূল্যস্ফীতির চাপ এড়াতে ব্যাংক ব্যবস্থার বিকল্প থেকে সরকারকে ঋণ নেওয়ার পরমার্শ দিয়েছে।

মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয় কমে যাওয়ায় ব্যাংকে নতুন আমানত আসছে কম। সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণও বেড়েছে। আবার উচ্চ মূল্যের ডলার কিনতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর প্রচুর টাকা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এসব মিলে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে ব্যাংক খাতে। কলমানিতে স্বল্প মেয়াদে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকের ধার নেওয়ার সুদহার বাড়ছে।

এমন সময়ে সরকারের জরুরি ঋণ নিতে ডব্লিউএমএ ও ওডি ব্যবহার করে ঋণ নেওয়ার সীমা আগের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়ানো হল। এতে সরকার আগের চেয়ে বেশি পরিমাণ ঋণ নিতে পারবে একদিনের জন্য।

ডব্লিউএমএ এর মাধ্যমে রির্ভাস রেপোর সমপরিমাণ ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে এবং এর থেকে ১ শতাংশ বেশি ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে ওডি ঋণ নেয় সরকার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত ডব্লিউএমএ উপকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৫ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা এবং এখাতে ঋণের স্থিতি ৬ হাজার কোটি টাকা। অপরদিকে ওডি খাতে ঋণের স্থিতি শূন্য।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর শেষে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে নিট ঋণ নিয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা, যা বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রার ৩০ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে নিয়েছিল ১৭ হাজার ২৬১ কোটি টাকার সামান্য বেশি, যা ওই অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৫ কোটি, সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য মিলিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের গত নভেম্বর পর্যন্ত সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৩৪ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা। আর সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে পরিশোধ হচ্ছে বেশি। ফলে এ খাত থেকে সরকার অর্থ পাচ্ছে না।

সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা যে বাড়তে পারে তা গত জানুয়ারি মাসে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ধারণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। জানুয়ারি-জুন সময়ে সরকারের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ করা হয়।

Also Read: সরকারের ঋণ: ব্যাংকের বাইরে যেতে বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক