মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন থেকে বাছাই শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকারি ছুটির দিনেও রিটার্নিং অফিসারের দপ্তর বা নিজ দপ্তরে উপস্থিত থাকতে হবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের।
Published : 30 Nov 2023, 08:12 PM
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে কেউ ঋণ খেলাপি কি না, তা যাচাই করে দেখতে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আইন অনুযায়ী ঋণ খেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তবে ক্ষুদ্র কৃষি ঋণ খেলাপি হলে ছাড় পাওয়া যাবে।
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়, পত্রিকা ও অন্যান্য উৎস থেকে ব্যাংকের উদ্যোগে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ব্যক্তিদের তালিকা সংগ্রহ করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ঋণ খেলাপিদের হালনাগাদ তালিকা তৈরি করে তার সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ব্যক্তিদের নাম মিলিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়ে বৃহস্পতিবার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
গণ প্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ অনুচ্ছেদ এর ১ ধারায় বলা হয়েছে, “কোন ব্যক্তি কৃষি কাজের জন্য গৃহীত ক্ষুদ্র কৃষি ঋণ ব্যতীত, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখের পূর্বে কোনো ব্যাংক হইতে গৃহীত কোনো ঋণ বা ঋণের কোন কিস্তি পরিশোধে খেলাপি হইয়া থাকিলে, তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হইবেন।”
একই অনুচ্ছেদের ১ ধারার উপ-ধারায় (এম) বলা হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো কোম্পানির পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার হন যা কোনো ব্যাংক হইতে গৃহীত কোনো ঋণ বা ঋণের কোনো কিস্তি তাহার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখের পূর্বে পরিশোধে খেলাপি হয়েছে, তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হইবেন।”
আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। তা বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। তার তিন সপ্তাহ পর হবে ভোটগ্রহণ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলারে বলেছে, ঋণ খেলাপি কোনো প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ত পরিচালক বা অংশীদার বা ব্যক্তি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিলে তথ্য প্রমাণসহ প্রত্যেক রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে পাঠাতে হবে।
যাচাই-বাছাইকালে তথ্য-প্রমাণসহ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, “ব্যাংক/ বিশেষায়িত ব্যাংক/ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শাখা ব্যবস্থাপক/ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র দাখিলের পরপরই রিটার্নিং অফিসারের নিকট হইতে প্রার্থীদের (পিতা/ মাতা/ স্বামীর নাম ও ঠিকানসহ) তালিকা সংগ্রহ করবেন এবং প্রার্থীদের ঋণ খেলাপি সম্পর্কিত তথ্য প্রধান কার্যালয়ে জানাবেন।”
খেলাপিদের তালিকা হালনাগাদ করে মনোনয়ন জমা দেওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, “শাখা ব্যবস্থাপক/ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত অথবা অন্য কোনো উৎস হইতে প্রাপ্ত প্রার্থীদের তালিকার সহিত শাখাসমূহে হালনাগাদকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতার তালিকা মিলাইয়া দেখিবেন এবং তাহার শাখাভুক্ত কোনো ঋণ খেলাপি প্রার্থী হইয়াছেন কিনা উহা নিশ্চিত হইবেন।”
মনোনয়নপত্র দাখিলের পরপরই রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে প্রার্থীদের তালিকা সংগ্রহ করে প্রধান কার্যালয়ে বিশেষভাবে জানাতে বলা হয়েছে।
কোনো খেলাপি মনোনয়নপত্র জমা দিলে তা দ্রুত সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারকে জানাতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রিটার্নিং অফিসার মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক/ বিশেষায়িত ব্যাংক/ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শাখা ব্যবস্থাপক/ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ঋণ খেলাপির তথ্য ও কাগজপত্রসহ উপস্থিত থাকতে হবে।
খেলাপি সংক্রান্ত সকল তথ্যর দায় সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের কর্মকর্তাকে বহন করতে হবে। তথ্য ভুল বা তথ্য উপস্থাপনে ব্যর্থতায় ‘শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা’ নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন থেকে বাছাই শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকারি ছুটির দিনেও রিটার্নিং অফিসারের দপ্তর বা নিজ দপ্তরে উপস্থিত থেকে সহায়তা করতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সার্কুলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায়, খেলাপির হার ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।