তিন মাসে ৩৬ হাজার কোটি টাকা বেড়ে মার্চ শেষে খেলাপির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা।
Published : 06 Jun 2024, 11:29 PM
অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশের দিন বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ নিয়ে আবার উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ করল।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। আর খেলাপির স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘এ সময়ে ব্যাংক খাতে বিতরণকৃত ঋণ ছিল ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা।’’
এই হিসাবে মার্চ বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ১০ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে।
তিন মাস আগে গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, খেলাপির হার ছিল ৯ শতাংশ।
এই তিন মাসে কেবল টাকার অঙ্কেই খেলাপি ঋণ বাড়েনি, বেড়েছে শতকরা হারেও। অথচ গত ফেব্রুয়ারিতেই আড়াই বছরে খেলাপি ঋণের হার ৮ শতাংশে নামানোর ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০২৬ সালের জুনের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনে ১৭ দফার রোডম্যাপও দিয়েছিল আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমিয়ে ১০ শতাংশ ও বেসরকারি খাতে ৫ শতাংশে নামানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা আছে।
কিন্তু লক্ষ্যের থেকে উল্টো দৌড়ে খেলাপি ঋণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ৫০ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা বা ৩৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০২৩ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।
পরিস্থিতি তুলনামূলক বেশি খারাপ সরকারি ব্যাংকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ বিবরণী অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের তিন লাখ ১২ হাজার ২৬৬ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৪ হাজার ৩১১ কোটি টাকা, খেলাপির হার ২৭ শতাংশ।
বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে ১২ লাখ ২১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৮৮ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা, খেলাপির হার ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
বিদেশি ব্যাংকে ৬৬ হাজার ৪৩৭ কোটি ঋণের মধ্যে খেলাপি ৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা, খেলাপির হার ৫ দশমিক ২০ শতাংশ।
বিশেষায়িত ব্যাংকে ৪০ হাজার ৩২ কোটি টাকার মধ্যে খেলাপি ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা ও খেলাপির হার ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত খেলাপি ঋণের তথ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বরাবরই আপত্তি জানিয়ে আসছে।
অবলোনকৃত ঋণ, পুনঃতফসিলকৃত ঋণকেও খেলাপির আওতায় এনে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করার কথা বলেছে আইএমএফ । উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে হিসাবের বাইরে থাকা ঋণকেও খেলাপি দেখানোর পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এসব ঋণকে খেলাপি ধরলে পরিমাণ আরও বাড়বে।
খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ীদের নানা ছাড় ও সুবিধা দিয়ে আসা বাংলাদেশ ব্যাংক কোভিড মহামারী ও পরে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সময়েও বিশেষ ছাড় দিয়েছিল, এরপরও তা কমেনি। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক মন্দ ঋণ বা খেলাপি ঋণের পুনঃতফসিলের দায়িত্ব কিছু শর্ত রেখে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংককেই দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘আর্থিক খাত ও ব্যাংক খাতে সংস্কার না হলে খেলাপি ঋণ কমবে না। ব্যবসায়ীদের যতই সুযোগ দেওয়া হোক, তা কাজে লাগেনি। খেলাপির কারণে তারল্য সংকট বৃদ্ধির সঙ্গে ইমেজ সংকটও বাড়ছে ব্যাংক খাতে।’’