আইএমএফের ঋণ: প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ডলার পেল বাংলাদেশ

পর্ষদে অনুমোদনের তিন দিনের মধ্যে ঋণদাতা সংস্থাটি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের মধ্যে প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড়ল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2023, 02:03 PM
Updated : 2 Feb 2023, 02:03 PM

আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফের বহুল আলোচিত ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ; অনুমোদনের তিন দিনের মধ্যে ছাড় হয়েছে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে সংস্থাটির মোট ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার (৪৭০ কোটি ডলার) ঋণের মধ্যে প্রথম কিস্তির অর্থ জমা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আজকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, আইএমএফ‘র ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার জমা হয়েছে।”

সিডিউল অনুযায়ী দ্বিতীয় কিস্তি ও পর্যায়ক্রমে বাকি অর্থ আসবে বলে জানান তিনি।

২ দশমিক ২ শতাংশ সুদে নেওয়া এই ঋণ আসবে সাত কিস্তিতে। শেষ কিস্তি আসবে ২০২৬ সালে।

বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে বাংলাদেশের বহু প্রত্যাশিত ঋণের প্রস্তাব গত ৩১ জানুয়ারি অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদ।

Also Read: বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করল আইএমএফ বোর্ড

৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের এই ঋণের সুবাদে দুর্বল হয়ে পড়া রিজার্ভের বিপরীতে বিদেশি মুদ্রার একটি ‘বাফার’ তৈরির সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।  

৪২ মাসের চুক্তিতে সরকারের নেওয়া ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিতে’ সহায়তা হিসেবে আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) থেকে ৩৩০ কোটি ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ।

ঋণ অনুমোদনের কথা জানিয়ে প্রথম কিস্তির ৪৭৬ মিলিয়ন ডলার তাৎক্ষণিকভাবে ছাড়া হবে বলে গত মঙ্গলবার বিবৃতিতে জানিয়েছিল আইএমএফ।

এছাড়া আইএমএফ’র নবগঠিত রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাস্টেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় বাংলাদেশ পাবে ১৪০ কোটি ডলার। বাংলাদেশই প্রথম এশীয় দেশ, যার এই তহবিল থেকে ঋণ পাচ্ছে।

ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কটে পড়া বাংলাদেশ রিজার্ভ বাড়াতে এমন অর্থের প্রত্যাশায় ছিল।

কোভিড মহামারীর ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বড় ধরনের চাপে পড়েছে; ডলারের বিপরীতে মান হারিয়ে চলছে টাকা, মূল্যস্ফীতিও পৌঁছেছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে।

রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানিতে লাগাম টানায় অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে; জ্বালানি সংকটের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের মত দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকিও বাংলাদেশের সামনে রয়েছে।

Also Read: আইএমএফের ঋণ: দুয়ার খুলবে আরও বিদেশি অর্থায়নের

Also Read: ঋণ আলোচনা: জানুয়ারিতে ফের আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক

Also Read: ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে আইএমএফ, প্রাথমিক সমঝোতা

এমন পরিস্থিতিতে গত জুলাই মাসে আইএমএফ এর কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। এরপর সংস্থাটির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অক্টোবরের শেষে ঢাকায় আসেন।

দুই সপ্তাহ সরকারে বিভিন্ন দপ্তর, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর ঋণের বিষয়ে প্রাথমিক সমঝোতার কথা জানানো হয় সরকারের তরফ থেকে।

এরপর থেকে সংস্থাটির পরামর্শ মেনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় সরকার। মুদ্রানীতি ঘোষণা আগের মত বছরে দুবার ঘোষণা করার পদ্ধতিতে ফিরে যায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর মত পদক্ষেপও আসে সরকারের তরফ থেকে। আরও বেশ কিছু খাতে সংস্কারের পরামর্শ রয়েছে সংস্থাটির।