কয়লা উত্তোলন ও পরিশোধনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি কোল ইনডিয়া লিমিটেড বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরাসরি কয়লা রপ্তানির পরিকল্পনা করছে বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স।
Published : 04 Feb 2022, 03:08 PM
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহু দশক ধরে কেবল অভ্যন্তরীণ বাজারে কয়লা সরবরাহ করে আসা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি কোল ইনডিয়া একটি খসড়া নীতিমালা ভারতের কয়লা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানেও কয়লা রপ্তানির পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে।
ওই খসড়া নীতিমালা দেখার কথা জানিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানে ওই প্রস্তাব করা হয়েছে ভারত সরকারের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির কথা উল্লেখ করে, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে টেক্কা দিতে ওই নীতি এগিয়ে নিচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
২০২০ সালের অক্টোবরে কর্পোরেট কৌশল নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে ওই প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। কোল ইনডিয়ার চেয়ারম্যান চলতি সপ্তাহে রয়টার্সকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তাদের ওই প্রস্তাব যদি অনুমোদনও পায়, বর্তমানে ভারতে কয়লার যে মজুদ পরিস্থিতি, এ বছরের শেষ দিক ছাড়া রপ্তানি শুরু করা কোল ইনডিয়ার পক্ষে সম্ভব হবে না বলেই ধারণা দেওয়া হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।
কোল ইনডিয়ার চেয়ারম্যান প্রমোদ আগারওয়াল রয়টার্সকে বলেছেন, মজুদের সংকট না থাকলে চলতি অর্থবছরই (আগামী মার্চে শেষ হচ্ছে) রপ্তানি শুরুর ইচ্ছে তাদের ছিল। কিন্তু আপাতত দেশের বাজারকেই অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী, কোল ইনডিয়া তাদের বার্ষিক উৎপাদনের ৩ শতাংশ আলাদা করে রাখবে রপ্তানির জন্য। ওই রপ্তানির জন্য তারা দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে যেতে চায়।
রয়টার্স লিখেছে, এ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে কোল ইনডিয়ার আয়ের খাত বাড়বে এবং পাশাপাশি প্রতিবেশীদের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন।
ভারতে উৎপাদিত বিদ্যুতের তিন-চতুর্থাংশ আসে কয়লা থেকে। সম্প্রতি কয়লা সংকটের কারণে উত্তরের অনেক রাজ্যে দিনে ১৪ ঘণ্টাও বিদ্যুৎহীন কাটাতে হয়েছে।
কয়লা রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা ইন্দোনেশিয়া রপ্তানির ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। পাশাপাশি ইউক্রেন নিয়ে উত্তেজনায় রাশিয়া ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে বলে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, সে কারণেও আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দামে উল্লম্ফন ঘটেছে।
ভারতে গত কিছু দিনে স্থানীয়ভাবে কয়লা সরবরাহে উন্নতি হলেও পুরোপুরি উৎপাদনে আছে অর্ধেক প্রতিষ্ঠান।
আগারওয়াল বলেন, “অক্টোবরের আগে ভারতে কয়লা সংকট পুরোপুরি যে মিটবে না, তা বলায় যায়।”
ভারতে কয়লার ৮০ শতাংশই উৎপাদন করে কোল ইনডিয়া, ২০২৪ সালের মধ্যে তারা উৎপাদন ১০০ কোটি টনে নিয়ে যেতে চায়। কয়লা উৎপাদন, ব্যবহার ও আমদানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারত।
এর আগে কোল ইনডিয়া খুবই অল্প পরিমাণ কয়লা প্রতিবেশী দেশের কাছে রপ্তানি করেছে অস্থায়ী ভিত্তিতে, তখন বাণিজ্যিক বিষয়টি মুখ্য ছিল না।
গেল বছর কোল ইনডিয়া প্রথমবারের মতো দেশি গ্রাহকদের ই-নিলামের মাধ্যমে খনির কাছ থেকে কেনা কয়লা রপ্তানি করার অনুমতি দেয়।
২০২০ সালের অক্টোবরের বোর্ড সভায় বলা হয়, খনির বিপণন বিভাগকে ঢেলে সাজাতে হবে; বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বর্তমানের চেয়ে কম দরে কয়লা বেচতে হবে।
কয়লা সচিবের কাছে পাঠানো খসড়া নীতিমালায় কোল ইনডিয়া বলেছে, ভারতে বিদ্যুতের বাইরে অন্য খাতে যে দরে তারা কয়লা বেচে, সেই দরেই প্রতিবেশীদের কাছে তারা কয়লা রপ্তানি করতে চায়।
ভারতের কয়লা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চায়নি বলে জানিয়েছে রায়টার্স।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে কয়লা রপ্তানি বাড়িয়ে দেড় থেকে দুই কোটি টনে উন্নীত করতে চায় কোল ইনডিয়া।
নিজেদের বাজারে তারা বিদ্যুতের বাইরে অন্য খাতে তুলনামূলক বেশি দরে কয়লা বিক্রি করলেও তা ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার তুলনায় সস্তা। অবশ্য ভারতীয় কয়লাকে তুলনামূলক নিম্নমানের হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
রয়টার্স জানিয়েছে, কোল ইনডিয়ার তরফ থেকে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের সরকারি কর্মকর্তা এবং শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এই তিন দেশে বছরে এক কোটি ৭০ লাখ মেট্রিক টন কয়লার চাহিদা আছে বলে সভার নথিতে হিসাব দেখানো হয়েছে।