সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের কর্মী সংকট আছে। তাই বিডিবিএল কর্মীদের চাকরি নিয়ে শঙ্কার কারণ নেই।
Published : 12 May 2024, 06:04 PM
একীভূত হতে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও বিডিবিএল ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের উপস্থিতিতে সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করেছে।
রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম, বিডিবিএলের চেয়ারম্যান শামীমা নার্গিস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমান কাজীও।
ব্যাংক একীভূত করার পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা ঘোষণা করার পর ব্যাংক দুটি একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করল।
ব্যাংক একীভূত করার ঘোষণা আসার পর এটি দ্বিতীয় সমঝোতা । গত ১৮ মার্চ প্রথম সমঝোতাটি হয় বেসরকারি খাতে এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকের মধ্যে।
সমঝোতা স্বাক্ষর সই হওয়ায় এখন নিয়ম মেনে ব্যাংক দুটির সম্পদ ও দায় দেনা নির্ধারণে স্বতন্ত্র নিরীক্ষক নিয়োগ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নিরীক্ষা কার্যক্রমের ব্যয় যোগাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক দুটির সব শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের নিরীক্ষা শেষ করে সম্পদ ও শেয়ার দর কত হতে পারে তা নির্ধারণ করা হবে। এরপর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক দুটি একীভূত হতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে।
পুরো প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিডিবিএল এর পর্ষদে এখন যারা আছেন তারাই থাকবেন, বলেছেন বিডিবিএলের চেয়ারম্যান শামীমা নার্গিস।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্যের চারটি সূচকের মধ্যে মাত্র একটিতে ভালো অবস্থানে নেই বিডিবিএল। আগামী ছয় মাসের মধ্যে খেলাপি ঋণের এ সূচকে খুব একটা উন্নতি করার সুযোগ নেই। তাই একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্ষদ।
“বিডিবিএলের প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি নেই। শুধু একটিতে একটু দুর্বল অবস্থায় আছে, তা হলো খেলাপি ঋণ। আগে যেটা ৪১ শতাংশ ছিল, আমরা সেটা কমিয়ে ৩৪ শতাংশে নিয়ে এসেছি। মার্জারের যে নীতিমালা আছে চারটি ইনডিকেটরের মধ্যে খেলাপি ঋণের বিষয়টা বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
“আগামী ছয় মাসে খেলাপি ঋণের হার ৩৪ থেকে ৫, ১০ বা ১৫ শতাংশেও নামিয়ে আনা সম্ভব না। খেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করে অর্থ আদায় করতে পাঁচ থেকে ১০ বছর সময় লাগবে।”
বেসরকারি দুর্বল ব্যাংক যেভাবে ‘সময়ের গ্যারান্টি’ দিচ্ছে তা বিডিবিএলের পক্ষে সম্ভব না জানিয়ে তিনি বলেন, “ব্যাংকগুলো যেমন গ্যারান্টি দিচ্ছে, ‘আগামী এক বছরে এত হাজার কোটি টাকা আনব’, আমি সেই গ্যারান্টি দিতে পারছি না। কারণ আমাদের ব্রাঞ্চের সংখ্যা কম, মাত্র ৫০ টি।’’
সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, ‘‘আমাদের দুই ব্যাংকের দুই ধরনের অভিজ্ঞতা আছে। সেগুলা কাজে লাগিয়ে আমরা এগিয়ে যাব।’’
ব্যাংক একীভূত হতে বিডিবিএলকে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলেও কেনো বিডিবিএল সময় নিল না- এমন প্রশ্নের উত্তরে শামীমা নার্গিস বলেন, ‘‘সোনালী ব্যাংকও যে একেবারে ক্লিন সেট, তা নয়। তাদেরও কিছু সমস্যা আছে, আমাদেরও আছে। কার কী সমস্যা আছে, তা কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ভালো করে জানে। যেহেতু খেলাপি ঋণে বিডিবিএল একটু দুর্বল, তাই তারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) মনে করছে সোনালীর সঙ্গে মার্জ করে দেওয়ার।’’
একীভূত হতে বিডিবিএল যে স্বেচ্ছায় রাজি হয়নি তা ফুটে উঠে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের কথায়।
২০২০ সালের অক্টোবরে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্ব থেকে সিনিয়র সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন শামীমা নার্গিস। তিনি বলেন, ‘‘গত ৩ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকে আমাদের ডাকা হল, সোনালী ব্যাংকের পর্ষদও সেখানে ছিল। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের জানিয়েছে মার্জারে যাওয়ার বিষয়টি।
“এরপর সোনালী ব্যাংক আমাদের পছন্দ করল। আমরাও দেখলাম এখন যদি একীভূত না হই তাহলে, আগামী ডিসেম্বরের পর আমাদের ফোর্সড মার্জারে (বাধ্যতামূলক একীভূত) যেতে হবে। সোনালী ব্যাংক যেহেতু আমাদের নিতে চাইছে, আমরা পর্ষদে সিদ্ধান্ত নিলাম মার্জ হওয়ার।’’
গত ৮ এপ্রিল বিডিবিএল ও সোনালী ব্যাংকের পর্ষদে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন হয়। একীভূত হতে পর্ষদে প্রস্তাব আনতে আগের সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কাজ করে ব্যাংক দুটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা।
একীভূত না হতে বেসিক ব্যাংকের মত বিডিবিএল এর কর্মচারীরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে খোলা চিঠি দিয়েছেন। সে প্রসঙ্গে শামীমা নার্গিস বলেন, ‘‘এখানে দুই ব্যাংকের পর্ষদ মিলে একীভূতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাজেই তারা অনেক কিছু প্লাস মাইনাস করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেটা তুলনামূলক ভালো হয়, সেটা করা হয়েছে।’’
বিডিবিএল কর্মীদের চাকরির ‘নিশ্চয়তা’
বিডিবিএল কর্মীদের চাকরির বিষয়ে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, তা নিয়েও কথা হয় বৈঠকে।
বিডিবিএল চেয়ারম্যান শামীমা নার্গিস বলেন, ‘‘কিছু কনসার্ন ছিল তা জানতে চেয়েছি। এর মধ্যে ছিল ব্যাংকের কর্মচারীদের চাকরির নিরাপত্তার বিষয়টি। আমাকে সোনালী ব্যাংক ও গভর্নর আশ্বস্ত করেছেন এ বিষয়ে।’’
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা আফজাল করিম বলেন, “বিডিবিএল কর্মচারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নাই। আমাদের প্রায় আট হাজার কর্মী আছে, তারপরও অনেক জনবল ঘাটতিতে আছে, আর বিডিবিএল এর ছয়শর মত কর্মী আছে। সুতরাং তাদের শঙ্কার কিছু নাই।‘’
১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে শিল্প খাতের বিকাশে ‘বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক’ ও ‘বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা’ নামে দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়।
কালের বিবর্তনে প্রতিষ্ঠান দুটি আশানুরূপ সাফল্য দেখাতে না পারায় ২০০৯ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠান দুটিকে একীভূত করে সরকার। নতুন নাম হয় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড বা বিডিবিএল। তখন ব্যাংকটির শাখা সংখ্যা ছিল ১৭টি।