বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যানজট নিরসনের পাশাপাশি নগরবাসীর যাতায়াতের সুবিধা বাড়াতে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
Published : 04 Jan 2022, 07:51 PM
চট্টগ্রামের নতুন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এটিই অনুমোদন পাওয়া বড় কোনও প্রকল্প বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
সভায় উপস্থিত মেয়র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একক ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) এটি সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভ্ন্নি সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পসহ ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পগুলোর সমন্বিত ব্যয় প্রায় ১১ হাজার ২১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
চট্টগ্রামের প্রকল্প
বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- “মহিউদ্দিন সাহেবের সময় চট্টগ্রামে অনেক কাজ হয়েছে। সেই ধারা এখন অব্যাহত রাখা যাচ্ছে না।”
এসময় প্রধানমন্ত্রী নতুন মেয়রের প্রতি চট্টগ্রামের জন্য কাজ করার পরামর্শ দেন বলে জানান মান্নান।
প্রকল্পটির অধীনে চট্টগ্রাম নগরীর ৭৬৯ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন, বিমানবন্দর সড়কে ৬০০ মিটার ওভার পাস নির্মাণ, ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ, ১৪টি ব্রিজ, ২২টি কালভার্ট এবং ১০টি গোল চত্বর নির্মাণ করা হবে।
ইতোমধ্যে কাজ শুরু হওয়া এ প্রকল্প ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এরমধ্যে বিমানবন্দর সড়কের সিমেন্ট ক্রসিং থেকে ড্রাই ডক পর্যন্ত বিদ্যমান দুই লেনের সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হবে। সিমেন্ট ক্রসিং অংশে হবে ওভার পাসটি।”
প্রকল্পটির অধীনে নগরীর নতুন ও ইতোমধ্যে সংস্কার করা সড়ক অর্ন্তভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছিল। সে বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, “সেগুলো সংশোধন করা হয়েছে। কোনো নতুন বা ভালো সড়ক রাখা হয়নি।”
নগরীতে মোট এক হাজার ৭০০ কিলোমিটারের বেশি সড়ক আছে বলে জানান তিনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর চট্টগ্রামের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আকতার কবীর চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এত টাকা সড়কে খরচ করা হলে সেই উন্নয়ন জনগণের কাছে দৃশ্যমান হয় না কেন?
“নগরীর সড়কগুলো প্রতি বর্ষায় খানাখন্দে রূপ নেয় কেন? মেয়র পদে যেই থাকুন এসবের কোনো ব্যত্যয় ঘটে না।”
প্রকল্পে অনিয়ম বন্ধে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদারকির পরামর্শের পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।
কোভিডের কারণে প্রকল্প সংশোধন
একনেক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, কোভিড-১৯ এর অভিঘাতে ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় অনেক প্রকল্প সংশোধন করতে হচ্ছে।
এছাড়া পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া ও ভূমি জটিলতা এবং বিশ্ব ব্যাংকসহ অনেক দাতা সংস্থার কম সুদে ঋণের শর্ত পালন করতে গিয়েও অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি হওয়ার কারণে প্রকল্প সংশোধন করতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া অন্যান্য প্রকল্প
>> বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য লজিস্টিক্স ও ফ্লিট মেইনটেন্যান্স ফ্যাসিটিটিস গড়ে তোলা (১ম সংশোধিত); ব্যয় বেড়েছে ১৩৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
>> কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ককে জাতীয় মহাসড়ক মানে ৪-লেনে উন্নীতকরণ; ব্যয় ৭২৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
>> বাংলাদেশ টেলিভিশনের কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন (১ম পর্যায়) (১ম সংশোধিত); ব্যয় বেড়েছে ৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
>> মোবাইল গেইম অ্যাপ্লিকেশনের দক্ষতা উন্নয়ন (৩য় সংশোধিত); ব্যয় বেড়েছে ৪৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
>> আশ্রয়ণ-২ (৪র্থ সংশোধিত); ব্যয় বাড়ছে ৬ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা।
>> বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মিরসরাই- প্রথম পর্যায় (প্রথম সংশোধিত); ব্যয় বাড়ছে ৫৫২ কোটি টাকা।
>> বরগুনা জেলার অধীন পোল্ডার ৪৩/১ ও ৪৪টি পুনর্বাসন এবং ঝুঁকিপূর্ণ অংশ পায়রা নদীর ভাঙ্গন হতে প্রতিরক্ষা; ব্যয় হবে ৭৫১ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
>> কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর ভাঙ্গনরোধ (১ম সংশোধিত); ব্যয় বাড়ছে ১৪৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা এবং
>> পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা (৩য় সংশোধিত); ব্যয় বাড়ছে ৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
[প্রতিবেদনটি তৈরি করতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছে চট্টগ্রাম ব্যুরো।]