করোনাভাইরাস মহামারীকালে রপ্তানিতে খরা না কাটলেও বিদায়ী মে মাসে পণ্য রপ্তানি করে তার আগের মাসের চেয়ে তিন গুণ বেশি আয় করেছে বাংলাদেশ।
Published : 08 Jun 2020, 08:35 PM
তবে মে মাসেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের চেয়ে রপ্তানি আয় কম ছিল। এ নিয়ে পরপর দুই মাস রেমিটেন্স টপকে গেলে রপ্তানি আয়কে।
সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গত মে মাসে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করে ১৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।
এপ্রিলে এই রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৫২ কোটি ডলার।
এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে পণ্য রপ্তানি প্রায় তিন গুণ বাড়লেও তা গত বছরের মে মাসের চেয়ে ৬১ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এপ্রিল মাসের পুরোটা সময় পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ ছিল। বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতিও ছিল খুব খারাপ। সে কারণে এপ্রিলে রপ্তানি তলানিতে নেমে এসেছিল।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে মূল ভূমিকা থাকে তৈরি পোশাক শিল্পের; মে মাসে পোশাক কারখানাগুলোতে উৎপাদন হয়েছে। আগের ‘অর্ডার’ও ছিল। ইউরোপের দেশগুলোর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় রপ্তানিও কিছুটা বেড়েছে।
তবে নতুন ‘অর্ডার’ না আসার পাশাপাশি অনেক ক্রেতা ‘অর্ডার’ বাতিল করেছে বলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা জানিয়েছেন। ফলে সামনে বড় সঙ্কটের আশঙ্কা করছেন তারা।
গোটা বিশ্বের অর্থনীতিই ওলট-পালট এখন কোভিড-১৯ মহামারীতে; এই ধারায় বাংলাদেশে এই প্রথম পর পর দুই মাস প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্সের চেয়ে পণ্য রপ্তানি আয় কম হল।
এপ্রিল মাসে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা; আর আর পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৫২ কোটি ডলার।
মে মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১৫০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। তবে রপ্তানি আয় এবার তার কাছাকাছি ১৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারে পৌঁছেছে।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ মোট ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ (৪০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, মে মাসে রপ্তানি আয় গত বছরের মে’র চেয়ে ৬১ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম।
এই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম রপ্তানি আয় এসেছে। লক্ষ্য ছিল ৪১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার আয়ের। গত বছরের মে মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৩৮১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) ৩ হাজার ৯৫ কোটি ৯১ লাখ (৩০.৯৬ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে কম ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্য ছিল ৩৪ দশমিক ৮৯বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের এই ১১ মাসে আয় হয়েছিল ৩১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার।
এ হিসাবে এই ১১ মাসে লক্ষ্যের চেয়ে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৬ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আয় কমেছে ১৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাসের ধাক্কায় বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে বড় ধস নেমেছে। গত তিন মাস ধরে পোশাক রপ্তানি আশংকাজনকহারে কমছে। মার্চ মাসে কমেছিল ২০ শতাংশ। এপ্রিলে ৮৫ শতাংশ। সর্বশেষ মে মাসে ৬২ শতাংশ।
“ইপিবির এই তথ্য প্রমাণ করে, খুবই কঠিন সময় পার করছি আমরা। খুব সহসা এই সঙ্কট কাটবে বলেও মনে হয় না। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা বলছে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বে পোশাকের চাহিদা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে যাবে।”
নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে রপ্তানি বৃদ্ধি একটি পজিটিভ দিক।
“তবে এখানে মনে রাখতে হবে যে, এপ্রিল মাসের বেশিরভাগ সময় কিন্তু কারখানা বন্ধ ছিল, উৎপাদন হয়নি, শিপমেন্টও তেমন হয়নি। মে মাসে পুরোটা সময় কারখানা খোলা ছিল, উৎপাদন হয়েছে, শিপমেন্টও হয়েছে। তাই রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে।”
“আগামী মাসগুলোতেও যে রপ্তানি বাড়বে তার কোনো সম্ভাবনা নেই। কেননা, অর্ডার না থাকলে রপ্তানি হবে কীভাবে,” বলেন তিনি।
বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, “এপ্রিল মাসের চেয়ে মে রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে মানে এই নয় যে, সঙ্কট কেটে যাচ্ছে। মে মাসে যে রপ্তানি হয়েছে তা আগের অর্ডার।
“কোভিড-১৯ এর কারণে অনেক অর্ডার বাতিল হয়েছে। এখনও হচ্ছে। অনেক অর্ডার স্থগিত করে রেখেছে ক্রেতারা। সে পরিস্থিতি জুন, জুলাই বা তার পরের মাসগুলোতে অবস্থা আরও খারাপ হবে।”
অন্যান্য পণ্য
এই সঙ্কটেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
জুলাই-মে সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৮১ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় করেছে।
এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
অর্থবছরের নয় মাসে অর্থাৎ মার্চ পর্যন্ত পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে ২৫ শতাংশের মতোপ্রবৃদ্ধি ছিল।
বাকি অন্য সব খাতেই কমেছে।
চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। হিমায়িত মাছ রপ্তানি কমেছে ১০ শতাংশ। স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি কমেছে ২৩ শতাংশ।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি ৮২ লাখ (৪০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করে। তাতে প্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ৪ শতাংশ।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি (৪৫.৫০ বিলিয়ন) ডলার।