বাংলাদেশের অর্থ চুরির দায় নিতে ফিলিপিন্সের রিজল ব্যাংক অস্বীকৃতি জানানোর পর ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কের বিরুদ্ধে মামলার চিন্তা করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
Published : 30 Nov 2016, 07:37 PM
নিউ ইয়র্কের ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভুয়া সুইফট বার্তার মাধ্যমে ফিলিপিন্সের রিজল ব্যাংকে স্থানান্তর হয়েছিল।
রিজল ব্যাংকের কয়েকটি হিসাবে পাঠানো ওই অর্থ তোলার পর জুয়ার টেবিলে চলে যায়। তারপর নানা তৎপরতায় এক-পঞ্চমাংশ অর্থ উদ্ধারের পর ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ।
বাকি অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশের তৎপরতার মধ্যে রিজল কর্মশিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে, নিউ ইয়র্ক ফেড থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার কোনো দায় তাদের নেই।
এর প্রতিক্রিয়ায় সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে মন্ত্রী মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, ফিলিপিন্সের ব্যাংকের বিবৃতিতে ‘মূল্যবোধের সঙ্কট’ সৃষ্টি হয়েছে।
“ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিজে এটা (মামলা করা) যাবে কি না আই অ্যাম নট ভেরি শিউর (আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই)। বাট এ ব্যাপারে আমরা ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে হয়ত কোনো মামলাও করতে পারি।”
“ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিৎ বলে আমার মনে হয়, কিন্তু কোন সময়ে, কখন করা উচিত আই অ্যাম নট সো শিউর,” সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় বলেন তিনি।
গত ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ চুরির পর নিউ ইয়র্ক ফেডের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নামে সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) মেসেজিং সিস্টেমে যাওয়া ‘ভুয়া’ অনুরোধ পাওয়ার পর ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সের ব্যাংকে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মানা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে আজমালুল হক কিউসিকে আইনজীবীও নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
তখন আজমালুল হোসেন বলেছিলেন, নিজেদের সুনামের ঝুঁকি বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক মামলা ছাড়াই ৮১ মিলিয়ন ডলার ফেরত দেবে বলে তার বিশ্বাস।
তবে নিউ ইয়র্ক ফেড এই ঘটনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটিকে দায়ী করে বলে, তাদের নিরাপত্তায় কোনো ত্রুটি ছিল না। ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধ’ পাওয়ার পর নিয়ম মেনেই তারা ‘যথাযথ’ পদক্ষেপ নিয়েছিল।
সুইফটও দায় নিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর অর্থ উদ্ধারে মনোযোগী হয়ে মামলার দিকে আর এগোয়নি বাংলাদেশ।
‘কী হল, বুঝতে পারছি না’
ফিলিপিন্সের এক ক্যাসিনো মালিকের ফেরত দেওয়া দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বুঝে পেয়েছে। বাকি প্রায় সাড়ে ৬ কোটি ডলার ফেরত পেতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নেতৃত্বাধীন একটি দল এখন ফিলিপিন্সে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “আশা ছিল যে অনেক পয়সা পাওয়া যাবে। ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো বোধহয়। আরেকটা যেটা রিজাল ব্যাংক দেবে … একটা তো শিউরই ছিল যেটা ডলারে পাওয়া যাচ্ছে।”
“তাদের (প্রতিনিধি দল) যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি বলেছিলাম, বিশেষভাবে রিজাল ব্যাংককে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য যে তারা কিছু পয়সা দিল। … এর মধ্যে কী পরিবর্তন হল, আমি বুঝতে পারছি না।
রিজল ব্যাংকের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় মন্তব্য করে মুহিত বলেন, “আর্গুমেন্টটাও কোনো মতেই জাস্টিফাইড না। কারণ এটা তো আগেই বিবেচনা করা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা ভুল মেসেজের ফলে হয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ প্রথমে আপত্তি করেছিল, পরে দিয়ে দিল। দিয়ে দিল কিন্তু এখান থেকে কোনো গ্রিন সিগন্যাল না পেয়ে।
“এটা আমার জন্য বিরাট ডিজঅ্যাপয়েনটেড। গতকালই ধন্যবাদ জানানোর কথা বলে দিলাম। … আজকে তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করল। তারা (প্রতিনিধি দল) দেশে আসলে জানতে হবে, এজন্য বেশি কিছু বলছি না।”
“অথরাইজড অর্ডার হয়নি বলে তারা ফেরত দিতে চেয়েছিল, এখন তারা বলছে ফেরত দিতে বাধ্য না। এই স্টেইটমেন্টে মূল্যবোধের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। মূল্যবোধের দৃষ্টিকোণ থেকে সিদ্ধান্তটি যথাযথ নয়,” বলেন মুহিত।
তদন্ত প্রতিবেদন ‘প্রকাশ হবে’
রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেশের স্বার্থেই প্রকাশ করা হয়নি বলে জানান অর্থমন্ত্রী মুহিত। তা প্রকাশের আশ্বাস আবারও দিয়েছেন তিনি।
এই ঘটনায় সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সংসদীয় একটি কমিটি চেয়েও না পেয়ে মঙ্গলবার অসেন্তাষ জানায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি সংসদীয় কমিটিকে জানায়, অর্থমন্ত্রী প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না বলে তারা প্রতিবেদনটি পাচ্ছে না।
অর্থ উদ্ধারের প্রক্রিয়ায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্যই এখনও প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়নি বলে দাবি করেন মুহিত।
তিনি বলেন, “আমি এটা প্রকাশ করিনি এজন্য যে এই তদন্তের আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেখানে মামলা-টামলারও ব্যাপার-ট্যাপার আছে।”
“প্রকাশ করব, যখন আমি মনে করব যে দিজ ইজ গুড টাইম টু পাবলিস। ওটা পাবলিশ করব, আমার সময়ে যত রিপোর্ট হয়েছে সব প্রকাশ করা হয়েছে,” বলেন তিনি।