ফেডারেল রিজার্ভ লজ্জায় টাকা দিয়ে দেবে: আজমালুল কিউসি

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ‘টাকা উদ্ধারের’ দায়িত্ব পাওয়া আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি বলেছেন, নিজেদের সুনামের ঝুঁকি বিবেচেনা করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক মামলা ছাড়াই ৮১ মিলিয়ন ডলার ফেরত দেবে বলে তার বিশ্বাস।    

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2016, 12:46 PM
Updated : 29 March 2016, 02:00 PM

মঙ্গলবার দুপুরে নিজের কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশের সঞ্চিত অর্থ ভুয়া আদেশে ফিলিপিন্সে পাঠানোর ক্ষেত্রে ফেডারেল রিজার্ভ কোথাও চুক্তির বরখেলাপ করেছে কি না এবং পুরো ব্যবস্থায় কোনো ফুটো আছে কি না- সে বিষয়েই তিনি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নামে সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) মেসেজিং সিস্টেমে যাওয়া ‘ভুয়া’ অনুরোধ পাওয়ার পর গত ৪ ফেব্রূয়ারি ১০ কোটি ডলার ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কার দুটি ব্যাংকে স্থানান্তর করে ফেডারেল রিজার্ভ।

বানান ভুলের কারণে শ্রীলঙ্কার ২ কোটি ডলার চুরি ঠেকানো গেলেও ফিলিপিন্সে যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলার স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তরিত হয়ে পাচার হয়ে যায়।  

এ ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়, যাতে অর্থ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কর্তব্যে অবহেলা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর ‘প্রয়োজনে’ মামলা করার প্রস্তুতি নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ২৩ মার্চ আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসিকে।

মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের নিজের কার্যালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন এই আইনজীবী।

এক প্রশ্নের জবাবে আজমালুল হোসেন বলেন, চুক্তি অনুসারে ফেডারেল রিজার্ভ কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশের সঞ্চিত অর্থ স্থানান্তর করতে পারে। এক্ষেত্রে যেহেতু তা হয়নি, সেহেতু মামলা ‘করাই যায়’।

“এটা ক্লিয়ার। ইন্সট্রাকশন দিয়েছে চোর। চোরের ইন্সট্রাকশন অনুসারে কাজ করলে আমরা তো বলতেই পারি- তুমি আমার ইন্সট্রাকশন অনুসারে কাজ করোনি। আমার টাকা ফেরত দাও।

“এটা সহজ। মামলা করা লাগবে না। ওরা লজ্জায় এমনিই টাকা দিয়ে দেবে। আমার তো মনে হয় এমনি দিয়ে দেওয়া উচিৎ। মামলা করার প্রয়োজন নেই।”

এই ধারণার পক্ষে যুক্তিতে আজমালুল হোসেন বলেন, “তাদের একটা বিরাট রেপুটেশন রিস্ক আছে। সবাই যদি মনে করে নিরাপদ না- তাহলে তাদের টাকা নিয়ে যাবে। আর তাই তারা ব্যবসা করতে পারবে না।”

আজমালুল বলেন, অর্থ যাতে নিরাপদ থাকে সেজন্য বহু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে নিজেদের টাকা জমা রাখে। ফেডারেল রিজার্ভকে নিরাপদ স্থান ভাবা হলেও দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের টাকা লোপাট হয়ে গেছে। 

“বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো পেমেন্ট ইন্সট্রাকশন দেয়নি। তা সত্বেও চলে গেছে। উনারা কি বুঝতে পারেনি ফেইকভাবে টাকা চলে গেছে? উনারা চুক্তি ভঙ্গ করেছেন কি না সেটা আমি দেখছি। আরেকটা জিনিস দেখছি যে সিস্টেমের মধ্যে কোনো ক্ষত আছে কিনা। সিস্টেম ডিফিসিয়েন্সি আছে কিনা। দেখা যাচ্ছে কিছু কিছু সিস্টেমে ডিফিসিয়েন্সি আছে।”

এই আইনজীবী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে টাকা উদ্ধার করার দায়িত্ব দিয়েছে; দোষীদের ধরে ‘জেল-জরিমানা করা’ তার কাজ নয়। এফবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থা সে কাজ করছে। আর তিনি চুক্তির বরখেলাপের বিষয়েই মনোযোগ দিচ্ছেন। 

“ফেডারেল রিজার্ভ যে ইন্সট্রাকশনগুলোর ওপর অ্যাক্ট করেছে, সেগুলোর কয়েকটা মনে করেছে যে জেনুইন না। সেখানে কনফারমেশন চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কনফারমেশন পাওয়ার আগে তারা পেমেন্ট করল।

“আরেকটা জিনিস আছে, বেআইনিভাবে যদি কোনো টাকা চলে যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে, সেখানে একটা সিস্টেম আছে যে টাকাটা রিকল করতে পারে।... বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক কমপ্লেইন করেছে...ইমেইল করেছে, চিঠি দিয়েছে। সুইফট মেসেজ দিয়েছে। সেগুলোর কোনো উত্তর আসেনি।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কায় অর্থ স্থানান্তরের কাজটি হয় ওয়েলস ফারগো, ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক মেলন ও সিটি ব্যাংক নিউ ইয়র্কের মাধ্যমে।

অর্থ পরিশোধের অনুরোধ কার্যকরের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলো যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেছিল কি না- তাও অনুসন্ধান করে দেখা হবে বলে ব্যারিস্টার আজমালুল জানান।

তিনি বলেন, “সব তথ্য পেয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে- বাংলাদেশ ব্যাংক মামলা করবে কি না।”