বলা হলেও শোনেনি রিজল ব্যাংক 

জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ সুইফট মেসিজিং সিস্টেমে স্থানান্তরের পর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক ওই অর্থ ছাড় না করতে বললেও শোনেনি ফিলিপিন্সের রিজল ব্যাংক।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2016, 06:01 PM
Updated : 15 March 2016, 07:31 PM

দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থ পাচারের ঘটনায় ফিলিপিন্সের সিনেট গঠিত কমিটির অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে ইনকোয়ারার, যে সংবাদপত্রটির মাধ্যমে এই ঘটনাটি প্রকাশ পেয়েছিল। 

এ বিষয়ে এক শুনানিতে সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান তিওফিস্তো গুইনগোনা প্রকাশ করেন, ৫ ফেব্রুয়ারি রিজল কর্মাশিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনে (আরসিবিসি) ওই অর্থ যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ‘স্টপ পেমেন্ট’ এর একটি আদেশ যায় ৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টায়।

ওই দিনটি চীনা নতুন বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ফিলিপিন্সে ব্যাংক হলিডে।

শুনানিতে আরসিবিসি’র প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী লরেঞ্জো তানকে সিনেট ব্লু রিবন কমিটির এই চেয়ারম্যান বলেন, “৮ ফেব্রুয়ারিতেই আপনার ব্যাংক স্টপ পেমেন্ট আদেশ গ্রহণ করেছিল। ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে ব্যাংকিং দিনে আপনার সেটি দেখা উচিত। কিন্তু ওই অর্থ তুলে নেওয়ায় আদেশটিকে সম্মান দেখানো হয়নি। সব অর্থই তুলে নেওয়া হয়েছিল।”

কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় ওই আদেশের জবাব দেয় বলে শুনানির বরাত দিয়ে জানায় ইনকোয়ারার।

অর্থ না তোলার ব্যাপারে ওই বার্তায় দিনশেষে সাড়া দেওয়ায় শুনানিতে এ বিষয়ে আরসিবিসির প্রেসিডেন্টের কাছে ব্যাখ্যা চান সিনেটর গুইনগোনা।

“স্টপ পেমেন্টে সাড়া দিতে আপনাদের দিন পেরিয়ে যায়। আপনি কি ভালোভাবে বলবেন, অর্থ তোলা বন্ধের ওই নির্দেশনায় যেখানে দিনের শুরুতেই সাড়া দেওয়ার কথা, সেখানে তা কেন হয়নি।”

সিনেটরের এই প্রশ্নের জবাবে আরসিবিসি প্রধান ব্যাংকের ‘গোপনীয়তার আইনের’ কথা বলে শুনানিতে ওই অর্থ ট্রানজেকশনের বিস্তারিত তুলে ধরতে অস্বীকৃতি জানান।

বাংলাদেশের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ৫ ফেব্রুয়ারি রিজল ব্যাংকের মাকাতি শহরের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ভুয়া নামে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে ঢোকার পর তা তুলে পাচার করা হয় বলে ইনকোয়ারার জানায়।   

তান সিনেট কমিটিতে শুনানিতে ব্যাংকিংয়ের সাধারণ প্রক্রিয়ার দিকে নির্দেশ করে পেমেন্ট অর্ডার বন্ধের আদেশ বাস্তবায়ন জুপিটার স্ট্রিট শাখার ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব বলে ব্যাখ্যা দেন তিনি।

“সাধারণ নিয়মে, যখন কোনো অ্যাকাউন্টের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়, সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপকের উচিত সেই আদেশ মেনে চলা।”

তবে আরসিবিসির প্রধান কার্যালয় থেকে মাকাতি সিটির জুপিটার স্ট্রিট শাখার ব্যবস্থাপক মাইয়া সানতোস দেগিতোকে ওই ওই পেমেন্ট অর্ডার বন্ধের আদেশ পাঠানো হয়েছিল কি না, শুনানিতে এ বিষয়ে জানতে চাপ দেওয়া হলে ব্যাংকটির প্রেসিডেন্ট সরাসরি উত্তর না দিয়ে ব্যবস্থাপক দেগিতোর দায়িত্বের দিকে ইঙ্গিত করেন।

“সাধারণ নিয়ম হিসেবে প্রধান কার্যালয় থেকে এসব আদেশ শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে পাঠানো হয়েছে।”

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পেমেন্ট অর্ডার বন্ধের আদেশের পরও কীভাবে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ মেকানিজমের মধ্য দিয়ে এই অর্থ বের হয়ে গেছে সেটি নিশ্চিত হতে শুনানিতে আরসিবিসির প্রেসিডেন্টকে এই প্রশ্ন করার আগ মুহূর্তে একই প্রশ্ন শাখা ব্যবস্থাপক দেগিতোকেও করেন সিনেটর গুইনগোনা।

“৯ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকিং দিন ছিল, এটা ছিল মঙ্গলবার। ৮১ মিলিয়ন তখন পর্যন্ত অ্যাকাউন্টে ছিল। ৯ ফেব্রুয়ারিতেই ৮১ মিলিয়ন ডলার তুলে নেওয়া হয়। ওইদিন আপনি কি কোনো পেমেন্ট অর্ডার বন্ধের অনুরোধ পাননি?”

এই প্রশ্নে শাখা ব্যবস্থাপক দেগিতোও ব্যাংক গোপনীয়তা আইনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “আমি দুঃখিত, আমি কী ব্যবস্থা নিয়েছি এ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর কেবল রুদ্ধদ্বার বৈঠকেই দিতে পারি।”

রিজল ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক দেগিতোর বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচারের অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তের জন্য মঙ্গলবার দেশটির বিচার বিভাগ একজন প্রসিকিউটর নিয়োগ দিয়েছে বলে জানিয়েছে ইনকোয়ারার।

দেশটির সহকারী প্রসিকিউটর গিলমারি ফে পাকমার এই দায়িত্ব পেয়েছেন।

আরসিবির দুই কর্মকর্তার কাছ থেকে সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে সিনেটর পেমেন্ট অর্ডার বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকের পাঠানো আদেশে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়েই আবার বলেন।

“৯ ফেব্রুয়ারি সকালেই পেমেন্ট অর্ডার বন্ধের অনুরোধ ছিল। তা মানলে ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে অন্তত ৫৮ মিলিয়ন ডলার রাখা যেত এবং জলে যেত না।”

মঙ্গলবারে এই শুনানি চলার সময় ফিলিপিন্সের মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কর্তৃপক্ষের (এএমএলসি) কর্মকর্তারা সিনেটরকে জানান, তারা ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অনুরোধ পান। এ বিষয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা ফিলিপিন্সে আসেন।

এরপরই এএমএলসি এই বিষয়ে নিজেদের অনুসন্ধান শুরু করে।

পালিয়েছেন কিম অং

বাংলাদেশের টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহভাজন ছয়জনের মধ্যে ব্যবসায়ী কিম অং ফিলিপিনো ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানিয়েছে ইনকোয়ারার।

দেশটির নিনয় অ্যাকুইনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, ৪ মার্চ ফিলিপাইন এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে করে হংকং পালিয়ে যায় কিম অং।