আদেশের অনুলিপি পাওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
Published : 16 Jan 2023, 07:52 PM
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপিন্সের রিজল ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে যে মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, সেই মামলায় আদালতের বাইরে সমঝোতার জন্য বিবাদীদের সুযোগ দিয়েছে নিউ ইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট।
গত ১৩ জানুয়ারি নিউ ইয়র্কের আদালতের এই আদেশ আসে। তার অনুলিপি হাতে পাওয়ার পরদিন সোমবার এই তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
এই মামলা বাতিলে যে আবেদন করেছিল রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি), তা খারিজ করে সমঝোতার আদেশ হয়েছে। এজন্য বিবাদীদের সময় দেওয়া হয়েছে ২০ কার্যদিবস।
মেজবাউল সাংবাদিকদের বলেন, “নিউ ইয়র্ক স্টেট কোর্ট আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদীদের ২০ দিন বা আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জবাব দাখিল করতে আদেশ দিয়েছে। একইসাথে মধ্যস্ততার নির্দেশনা প্রদান করেছে।”
নিউ ইয়র্কে নিয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি প্রতিষ্ঠান মধ্যস্ততার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের পক্ষে এই মামলা পরিচালনার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের ল ফার্ম কোজেন ও’কনরকে দেয় বলে আগে জানিয়েছিল।
রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখের মধ্যে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধারে ২০২০ সালে এ মামলা করেছিল বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রিজল ব্যাংক ছাড়াও এ মামলায় সোলারি রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো ও ম্যানিলা বে পরিচালনাকারী ব্লুমবেরি রিসোর্ট কর্পসহ ২০টি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয়।
রিজার্ভ চুরি: মামলা করতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিধি দল
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় রিজল ব্যাংকে।
ওই অর্থ স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোতে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে ফিলিপিন্স সরকার বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দিলেও বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার আর পাওয়া যায়নি।
তার তিন বছর পর ২০১৯ সালে ওই অর্থ উদ্ধারের আশায় নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে একটি মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই মামলা খারিজে আবেদন করে আরসিবিসি।
গত এপ্রিলে নিউ ইয়র্কের আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলাটি খারিজ করে দেয়। রায়ে বলা হয়েছিল, ওই মামলা বিচারের ‘পর্যাপ্ত এখতিয়ার’ ওই আদালতের নেই।
এরপর বাংলাদেশ বাংকের পক্ষ থেকে নিউ ইয়র্কের ‘এখতিয়ারভুক্ত’ আদালতে মামলা করা হয় বলে জানান মেজবাউর। তা আটকাতে রিজল ব্যাংকের আবেদন খারিজ হওয়ায় এখন আর মামলা চলতে বাধা থাকল না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, “ওই আদালতে মামলাটি চলতে পারে না দাবি করে মোশন টু ডিসমিস আবেদন করে আরসিবিসি ও ৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। আরসিবিসির আবেদন ও অন্যতম অভিযুক্ত কিম অং এর দায়ের করা করা ফোরাম নন কনভেনিয়েন্স (আপত্তি আবেদন) খারিজ করে দিয়েছে আদালত।”
এদিকে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ মামলা করার দুই দিনের মাথায় ওই বছরের ৬ মার্চ ফিলিপিন্সের দেওয়ানি আদালতে আরসিবিসি পাল্টা মানহানির মামলা করে। আরসিবিসি মামলা করার পর আইনি লড়াইয়ের জন্য ম্যানিলার ‘বারনাস ল অফিস’কে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর ফিলিপিন্সের আদালতের আরসিবিসির পক্ষে সিদ্ধান্ত দিলে বাংলাদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। তাতে রিজল ব্যাংকের মানহানির আবেদন খারিজ হয়ে যায় ২০২২ সালের ৩০ জুন।
ফিলিপিন্সের আদালতের ওই রায়ের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে বিচারের আওতায় নেওয়ার এখতিয়ার ফিলিপিন্সের ওই আদালতের নেই বলে তা খারিজ করা হয়।
২০১৬ সালে রিজার্ভ চুরির ওই ঘটনা বাংলাদেশের মানুষে জানতে পারে এক মাস পর, ফিলিপিন্সের সংবাদ মাধ্যমের খবরে। তখন বিশ্বজুড়ে ঘটনাটি আলোড়ন তুলেছিল।
ওই ঘটনার জেরে তখনকার গভর্নর আতিউর রহমানকে পদত্যাগ করতে হয়। দুই ডেপুটি গভর্নরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
কিন্তু রিজার্ভ সংরক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যেই একজন মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন রিজার্ভ চুরির ঘটনায়। সেই মামলার এখনও তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দিতে পারেনি পুলিশ।
রিজার্ভ চুরির ওই ঘটনা তদন্ত করতে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয় ওই বছরের ১৫ মার্চ। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন- বুয়েটের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস।
২০১৬ সালের ৩০ মে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি উঠে আসে।
তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আর জনসম্মুখে আসেনি।