চার সদস্যের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ, একই ইউনিটের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রব এবং একাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন।
মামলায় সহায়তা করতে তাদের সঙ্গে লন্ডন থেকে যোগ দেবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোববার রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা নিউ ইয়র্ক রওনা হন। আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।”
৩১ জানুয়ারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলাটি করা হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনতে এবং দোষীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় কমাতে মামলা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে এ দেওয়ানি মামলা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের একটি আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান এ মামলা করবে।
মামলাটি করা হচ্ছে ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) থেকে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার আদায়ের জন্য।
এ মামলায় সম্ভাব্য আসামি হিসেবে আরসিবিসি ও তাদের কয়েকজন কর্মকর্তা, অর্থ স্থানান্তরকারী কোম্পানি ফিলরেম ও তার কর্মকর্তা, ক্যাসিনো মালিক ও সুবিধাভোগী বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হচ্ছে।
এ মামলায় সহায়তা নিতে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি চুক্তিও সই হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (নিউ ইয়র্ক ফেড) থাকা বাংলাদেশের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে এই অর্থ ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কার দুটি ব্যাংকে সরানো হয়েছিল।
পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার আটকানো যায় এবং তা ফেরতও পাওয়া যায়।
তবে ফিলিপিন্সে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার জুয়ার টেবিল ঘুরে হাতবদল হয়। পরে ওই অর্থের দেড় কোটি ডলার জুয়ার আসর থেকে ফিলিপিন্স সরকার তুলে ফেরত দিলেও বাকি অর্থ পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির এই ঘটনা ফিলিপিন্সেও সাড়া ফেলেছিল, তারাও ঘটনার তদন্ত করে, মামলা করে। যে ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ জুয়ার টেবিলে গিয়েছিল, সেই আরসিবিসির কর্মকর্তা মায়া সান্তোস দেগিতোকে দোষী সাব্যস্ত করেছে সে দেশের আদালত।
এই ঘটনায় বাংলাদেশেও একটি মামলা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন।
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪ ধারাসহ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৪ ও ৩৭৯ ধারায় করা মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি। এই মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।
তার তিন বছর পর এখন যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।