“সাময়িকভাবে খেলাপির পরিমাণ কমে যায়। কিন্তু এতে ব্যাংকের স্বাস্থ্য খারাপ হয়”, বলেন তিনি।
Published : 21 Apr 2024, 10:38 PM
ব্যাংকিং খাতে মন্দ ঋণ বারবার পুনঃতফসিলের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান।
রোববার রাজধানীতে এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘‘বারবার পুনঃতফসিল করলে সাময়িকভাবে খেলাপির পরিমাণ কমে যায়। কিন্তু এতে ব্যাংকের স্বাস্থ্য খারাপ হয়। ঋণ মন্দ মানে পরিণত হয়।”
‘ইজ দ্য বাংলাদেশ প্যারাডক্স সাসটেইনেবল?’ শিরোনামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে এই আলোচনার আয়োজন করে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং বা সানেম।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নে তৈরি পোশাক, কৃষি, রেমিটেন্স, মেগাপ্রকল্প, বিদেশে কর্মসংস্থান ইত্যাদি কীভাবে ভূমিকা রেখেছে, উন্নয়নের এ প্রক্রিয়াটি কেমন ছিল তা তুলে ধরা হয় বইটিতে।
বইটি আড়াই বছর গবেষণা করে প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানানো হয় আয়োজনে।
বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত যে তথ্য প্রকাশ করে তা সময়োচিত হওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন মসিউর রহমান।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, “খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয় নির্বাচনের আগে। ব্যাংক তখন কিছু পয়সা পয়সা পায়। এভাবে চলায় খেলাপি কমছে না।”
তিনি বলেন, “খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনা ও ব্যাংক খাত তদারকিতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যর্থতায় যাচ্ছে কি না, তাও দেখার সময় হয়েছে।”
সানেমের গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসনের অভাব রয়েছে। একটি শক্তিশালী, স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে।”
উন্নয়নের পরের ধাপে পারবে বাংলাদেশ?
‘দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা’ নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করলেও তা ধরে রাখা এবং উন্নয়নের পরের ধাপে যাওয়া কঠিন হবে বলে অর্থনীতি নিয়ে একটি আলোচনায় সংশয় প্রকাশ করা হয়।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘‘অনেক সাব-সাহারান দেশের তুলনায় দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক গুণমান সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত উন্নয়নের পেছনে ভূমিকা রাখা চলকগুলোর উপর নির্ভর করে পরের ধাপে যেতে পারবে? এই প্রশ্নের উত্তর হল, ‘না’।”
অর্থনীতির অনানুষ্ঠানিক খাত আনুষ্ঠানিক খাতের চেয়ে বড় জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানের একটি ‘পকেট’ হয়ে গিয়েছে।
“বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত কম, রাজস্ব-উৎপাদনকারী বাজেটের আকার কম, মূল বাজেটের চেয়ে বাস্তবায়নও অনেক কম। আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একটি শক্তিশালী সংস্কারবিরোধী জোট রয়েছে, যা দুর্নীতির চক্রকে ভাঙতে সব সময় বাধা দেয়।”
তবে মসিউর রহমান বলেন, “উন্নয়নের পরবর্তী চলক হতে পারে রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনা। সেই উদ্যোগ চলছে।”
তৈরি পোশাক খাতে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের ব্যবহার বেড়ে গেলে নারী কর্মসংস্থানের উপর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
কর-জিডিপির অনুপাত কম- এই বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, “কর ছাড় না দেওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। ট্যাক্স ইজ দ্য হার্ট অব পলিটিকস। কর নিয়ে সিদ্ধান্ত আমলাদের উপর ছাড়বে না রাজনৈতিক দল।”
অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশ বলেন, ‘‘বইয়ে যেটা আছে, তা হল দেশের অর্থনীতির সূচকে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তা হওয়ার কথা ছিল না। এখন প্রশ্ন হল তা টেকসই হবে কি না? উত্তর হচ্ছে ‘না’।”
তিনি বলেন, ‘‘আর্থিক খাতে অরাজকতা আছে। উন্নয়ন টেকসই করতে হলে এখানে পরিবর্তন আনতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রকদের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দিলেও আর্থিক খাত ঠিক হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি না।”
নীতিমালার বাস্তবায়নে সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘যারা বাস্তবায়ন করছে তাদের উদ্দেশ্য কী, এটা দেখলেই বোঝা যায়। অসৎ ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনীতিবিদদের জোট… এই জোট যেভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করছে-তাদের ইচ্ছের বাইরে কিছুই হচ্ছে না।”
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার, যুক্তরাজ্যের উলস্টার ইউনিভার্সিটির উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক এস আর ওসমানি, অর্থনীতিবিদ উমর সালাম, মির্জা এম হাসানও আলোচনায় অংশ নেন।