তবে কার বিরুদ্ধে মামলাটি হবে, কে বাদী হবে, কারা আসামি হবে, কারা সাক্ষী হবে, তার কিছুই এখনও ঠিক হয়নি।
তিন বছর আগে রিজার্ভ চুরির এই ঘটনার পর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেশ কয়েকবারই যুক্তরাষ্ট্রে মামলা দায়ের করবেন বলে জানিয়েছিলেন, কিন্তু তার মেয়াদে তা হয়নি।
নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল রোববার সচিবালয়ে রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে করণীয় বিষয়ক এক সভার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে মামলার প্রস্তুতির কথা বলেন।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) থাকা বাংলাদেশের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে এই অর্থ ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কার দুটি ব্যাংকে সরানো হয়েছিল।
অনেকগুলো পক্ষ এতে যুক্ত থাকায় মামলা কার বিরুদ্ধে হবে- জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, “কার বিরুদ্ধে কে মামলা করবে, তার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। এছাড়া কয়জনকে আসামি, কয়জনকে বাদী ও কয়জনকে সাক্ষী করা হবে, তা দুই লইয়ার বসে ঠিক করবে।”
“আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি, টাইম ফ্রেমের মধ্যেই মামলা করা হবে,” বলেন তিনি।
এর আগে ফিলিপিন্সের রিজল কমার্সিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক; তাদের মাধ্যমেই চুরি যাওয়া অর্থের বেশিরভাগ লোপাট হয়েছিল।
রিজার্ভ চুরির আলোচিত এই ঘটনা তদন্তে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের আশ্বাস দিয়েও করেননি মুহিত।
নতুন অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “প্রকাশের প্রয়োজন হলে করব, প্রয়োজন না হলে করব না। তদন্ত করে একটা কিছু তো আসবে। এছাড়া তদন্তে নেগেটিভ বা পজিটিভ কী আছে, আমি কিছু জানি না। যদি পজিটিভ বা নেগেটিভ কিছু আসে ....”
এই ঘটনায় বাংলাদেশেও একটি মামলা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সিআইডি ওই মামলার তদন্ত করছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, “ঘটনা ঘটেছে নিউ ইয়র্কে, সুতরাং প্লেস অব অকারেন্স নিউ ইয়র্ক। সুতরাং ঢাকাতে বসে কে কী কমিটি করলাম, কে কী ডিসিশন দিল, আমার মনে হয়, দ্যাট ইজ নট রাইট টাইম অফ দ্য মোমেন্ট।”
সাবেক অর্থমন্ত্রী এই চুরির ঘটনায় নিউ ইয়র্ক ফেড থেকে ক্ষতিপূরণ চাইছিলেন। তবে তারা ও সুইফটও বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘দুর্বল’ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই দায়ী করে আসছে।
পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার আটকানো যায় এবং তা ফেরতও পাওয়া যায়।
তবে ফিলিপিন্সে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার জুয়ার টেবিল ঘুরে হাতবদল হয়। পরে ওই অর্থের দেড় কোটি ডলার জুয়ার আসর থেকে ফিলিপিন্স সরকার তুলে ফেরত দিলেও বাকি অর্থ পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির এই ঘটনা ফিলিপিন্সেও সাড়া ফেলেছিল, তারাও ঘটনার তদন্ত করে, মামলা করে।
যে ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ জুয়ার টেবিলে গিয়েছিল, সেই রিজল কমার্সিয়াল ব্যাংক করপোরেশনের (আরসিবিসি) কর্মকর্তা মায়া সান্তোস দেগিতোকে দোষী সাব্যস্ত করেছে সে দেশের আদালত।
বাংলাদেশে মামলাটি করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা, ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায়।
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪ ধারাসহ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৪ ও ৩৭৯ ধারায় করা মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।