ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংখ্যার তথ্যেও বড় ব্যবধান।
Published : 28 Nov 2023, 10:11 PM
দেশে সবশেষ জনশুমারিতে উঠে আসা তথ্যের সঙ্গে বিদেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংখ্যার তথ্যে বড় ফারাক দেখা দেওয়ায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, শুমারির সময়কাল ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে প্রবাসী হিসেবে থাকা বাংলাদেশির সংখ্যা ৫০ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫৮ জন। অথচ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যে তা ১ কোটি ৫৭ লাখ।
অপরদিকে জনশুমারির তথ্য দিয়ে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটির জনসংখ্যা ৪৩ লাখ ৫ হাজার। অথচ দক্ষিণ সিটির ওয়েবসাইটে এ সংখ্যা বলা হয়েছে ‘প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ’।
মঙ্গলবার ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক; কথা বলেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
এদিন ঢাকার আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ প্রকল্পের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পুস্তক আকার প্রকাশ করা হয়। এতে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
এর আগে ২০২২ সালের ২৭ জুলাই এবারের জনশুমারির প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পরে ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ২০২২ সালের ১৫ জুন দেশে একযোগে জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রম শুরু হয়। ২১ জুন সে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে তা ২৮ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
জনশুমারির চূড়ান্ত তথ্য অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এরমধ্যে ৫০ দশমিক ৪৬ শতাংশ বা নারী ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৪ জন এবং ৪৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ বা ৮ কোটি ৪১ লাখ ৩৪ হাজার পুরুষ। দেশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছেন মোট ৮ হাজার ১২৪ জন।
প্রকল্প পরিচালক দিলদার জানান, সবশেষ পরিচালিত শুমারি অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ বা ১১ কোটি ৬১ লাখ পল্লী এলাকায় এবং ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ বা ৫ কোটি ৩৭ লাখ লোক শহরাঞ্চলে বাস করেন।
শুমারি অনুযায়ী, দেশে সবচেয়ে বেশি ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ রয়েছেন ঢাকা বিভাগে। সবচেয়ে কম ৯৩ লাখ ২৫ মানুষের বাস বরিশাল বিভাগে।
বিভাগওয়ারী চট্টগ্রামে ৩ কোটি ৪১ লাখ ৭৮ হাজার, রাজশাহীতে ২ কোটি ৭৯ হাজর, রংপুরে ১ কোটি ৮০ লাখ ২০ হাজার, খুলনায় ১ কোটি ৭৮ লাখ ১৩ হাজার ২১৮, ময়মনসিংহে ১ কোটি ২৬ লাখ ৩৭ হাজার এবং সিলেটে ১ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার মানুষ বাস করেন।
দুই তথ্যে বিরাট ফারাক
প্রবাসী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির জনসংখ্যার তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাংবাদিকরা এত ব্যবধানের বিষয়ে বিবিএসের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান । বিএমইটির তথ্য তুলে ধরে তারা বলেন, বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি বলে বলা হয়ে থাকে। অথচ শুমারিতে ৫০ লাখ দেখানো হচ্ছে কেন?
এর উত্তরে প্রশ্নোত্তর পর্বের সঞ্চালক পরিসংখ্যান বিভাগের যুগ্ন সচিব ড. দীপংকর রায় বলেন,
“আমাদের এই তথ্য বিএমইটির সঙ্গে তুলনীয় নয়। কারণ জরিপ চলাকালীন সাত দিনের শুমারিতে সকলের গণনাভুক্তি নিশ্চিত করতে সমগ্র দেশে মোট ৩ লাখের বেশি গণনা এলাকা থেকে ৩ লাখ ৬৫ হাজার গণনাকারী প্রত্যেকের ঘরে গিয়ে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা যা পেয়েছি তাই আমরা উপস্থাপন করেছি।
“আমরা প্রত্যেকটি বাসা বাড়িতে গিয়ে তথ্য নিয়েছি। বিগত ছয় মাসের মধ্যে রেমিটেন্স পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে যারা তথ্য দিয়েছেন এবং কতজন বিদেশ রয়েছেন এমন নির্দিষ্ট তথ্যের সন্বিবেশ করে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করেছি।”
তিনি বলেন, আর বিএমইটি ১৯৭৬ সাল থেকে শুধু যারা বিদেশ গিয়েছেন তাদের তথ্য রাখে। কিন্তু কেউ ফেরত আসলে তার তথ্য সংগ্রহ করে না। তাই বিএমইটির তথ্যের সঙ্গে জনশুমারির তথ্য মিল থাকবে না।
অনুষ্ঠানে শুমারি নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে প্রকল্প পরিচালক দিলদার জানান, জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর হিসাব অনুযায়ী ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গেছেন চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে-২০ লাখ ৫১ হাজার ৫২৮ জন। ঢাকা বিভাগ থেকে প্রবাসে আছেন ১৪ লাখ ৩১ হাজার। সবচেয়ে কম ১ লাখ ১৫ হাজার প্রবাসে আছেন রংপুর বিভাগ থেকে।
তবে সরকারের দুই সংস্থার তথ্যের গরমিল নিয়ে বিতর্ক ওঠার বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান সমস্যার গভীরে যাওয়ার কথা বলেন।
তিনি বলেন, “বিএমইটি এবং জরিপের তথ্যের মধ্যে মিল নেই কেন তা আমি দেখব। বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরে গেলে আমরা আরও বিষয় জানতে পারব বলে আমি মনে করি।”
অপর এক প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়, জনশুমারির প্রতিবেদন বলছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মোট জনসংখ্যা ৪৩ লাখ ৫ হাজার ৬৩ জন। অথচ দক্ষিণ সিটির ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে, প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ। সরকারের দুই সংস্থার মধ্যে তথ্যের মিল নেই কেন?
এর উত্তর দিতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “আমিও বুঝতে পারছি না। তবে হতে পারে সিটি করপোরেশন হয়তো বাড়ির হোল্ডিং ধরে গণনা করেছে। বিবিএস তো সরাসরি বাসায় গিয়ে তথ্য নিয়েছে।
এরপরও সমস্যা কোথায় তা দেখার কথা বলেন তিনি।
এর আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, “এক সময় বিবিএসের তথ্য নিয়ে মাথা চুলকানি ছিল। কিন্তু এখন নেই। এখন বিবিএস এর সক্ষমতা অনেক বেড়েছে এবং ক্রমেই বাড়ছে। বিবিএস সম্পূর্ণরূপে একটি স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে কাজ করছে।
তিনি বিবিএসকে সরকারি সম্পদের ‘তসরুফ’ এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেন।
বিবিএস এর মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ সামাজিক বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. মো. কাউসার আহাম্মদ এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন
জনশুমারি: চূড়ান্ত হিসাবে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ
বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার
শুরু হচ্ছে প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি, নেওয়া হবে ৩৫ তথ্য
ডিজিটাল পদ্ধতির জনশুমারিতে মিলবে ‘বিশুদ্ধ’ তথ্য: পরিকল্পনামন্ত্রী