জনশুমারি: চূড়ান্ত হিসাবে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ

গতবছর ২৭ জুলাই প্রাথমিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা দেখানো হয়েছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2023, 11:38 AM
Updated : 6 Feb 2023, 11:38 AM

সরকারের চূড়ান্ত হিসাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’২২’ প্রতিবেদনের তথ্য যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস এর ‘পোস্ট এনুমেরাশন চেক অব দি পপুলেশন অ্যান্ড হাউজিং সেনসাস, ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

গতবছর ২৭ জুলাই জনশুমারি ও গৃহগণনার যে প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল, সেথানে জনসংখ্যা দেখানো হয়েছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। সে হিসাবে চূড়ান্ত ফলাফলে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪৭ লাখ।

বিআইডিএস এর প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সোমবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সেমিনারে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, “নারী-পুরুষ মিলিয়ে বাংলাদেশের চূড়ান্ত জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন।’’

এ অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষের অনুপাত প্রকাশ করেনি বিবিএস ও বিআইডিএস। অনুষ্ঠানে দেওয়া প্রতিবেদনে জনসংখ্যার তথ্য না পেয়ে প্রতিমন্ত্রী বিবিএস ও বিআইডিএস এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জনসংখ্যার তথ্য প্রকাশ করা হয়।

তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘মানুষ উদগ্রীব ছিল জনসংখ্যার তথ্য জানার জন্য। মোট জনসংখ্যা কত, নারী–পুরুষ কত, প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা কত। আজকের অনুষ্ঠানের এটি মূল বিষয়।’’

ড. শামসুল আলম বলেন, ‘‘শুমারি হয়েছে ২০২১ সালে। জনসংখ্যার চূড়ান্ত তথ্য আজ প্রতিবেদনে আসতে পারত। আমি কেন এটি টেবিলে পেলাম না। তথ্য থাকতে পারত, এর জন্য উচ্চ মহলের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন কেন হত- তা আমি জানি না। এটি সংখ্যার হিসাব, যা হিসাব হবে তাই প্রকাশ করা উচিত।”

জনসংখ্যার হিসাব প্রতিবেদনে না থাকার বিষয়ে বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, “জনসংখ্যার তথ্য প্রকাশ করার আইনি দায়িত্ব বিবিএস এর। ২০১১ সালে কিংবা তার পূর্বেও বিআইডিএস এ তথ্য প্রকাশ করেনি। এটি আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।”

সেমিনারে জানানো হয়, জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর পদ্ধতিগত যাচাই-বাছাই করে তথ্য-উপাত্তের ত্রুটি (এরর) ও অসঙ্গতি বের করে দেখে বিআইডিএস।

এজন্য বিবিএস ও বিআডিএস এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। সেখানে জনসংখ্যার তথ্য প্রকাশের কোনো বিষয় ছিল না বলে জানান বিনায়েক সেন।

প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়, জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন যাচাইয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ তথ্যে অমিল বা গণনায় এই হারে মানুষ বাদ পড়েছে।

এই ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ হয়ে চূড়ান্ত জনসংখ্যা দাড়িয়েছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন।

গতবছর ২৭ জুলাই জনশুমারি ও গৃহগণনার যে প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল, সেখানে পুরুষের সংখ্যা দেখানো হয়েছিল ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪, নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। আর হিজড়ার আছেন ১২ হাজার ৬২৯ জন।

ওই সময়ে দেখানো হয় পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি ছিল, যা ২০১১ সালের উল্টো।

২০১১ সালের আদমশুমারি ও গৃহগণননায় দেশের জনসংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৬৩ জন।

সে সময় পুরুষ ছিলেন ৭ কোটি ২১ লাখ ৯ হাজার ৭৯৬ জন, নারী ছিলেন ৭ কোটি ১৯ লাখ ৩৩ হাজার ৯০১ জন। সে সময় ট্রান্সজেন্ডারদের আলাদাভাবে গণনা করা হয়নি।

২০২২ সালের ১৫ জুন সারা দেশে একযোগে জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রম শুরু হয়। ২১ জুন সে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে তা ২৮ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

Also Read: বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার

Also Read: দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে যেভাবে

স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে দেশের প্রথম শুমারিতে জনসংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ছিল ৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৭১ জন। ১৯৮১ সালের শুমামিতে তা বেড়ে ৮ কোটি ৭১ লাখ ১৯ হাজার ৯৬৫ জন হয়।১৯৯১ সালের শুমারিতে জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১০ কোটি ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২ জনে। আর ২০০১ সালে হয় ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৬৩ জন।

বিআইডিএস এর প্রতিবেদনে বলা হয়, জনশুমারি ও গৃহগণনার বাইরে ছিল ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে শীর্ষে সিলেট-ময়মনসিংহ।

সার্বিকভাবে সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছে সিলেট বিভাগে ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। যার মধ্যে গ্রামে এ হার ছিল ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ, শহরে ছিল ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ, উপজেলা সদরে ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, পৌর এলাকায় ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ, সিটি কর্পোরেশনে ৩ দশমিক শূণ্য ৩ শতাংশ।

এরপরেই রয়েছে ময়মনসিংহে ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ, ঢাকায় ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ, বরিশালে ২ দশমিক ৪২ শতাংশ, রংপুরে ২ দশমিক ২৭ শতাংশ, খুলনায় ২ দশমিক ২৩ শতাংশ ও রাজশাহীতে ২ দশমিক ১২ শতাংশ।

শহরের চেয়ে গ্রামে সবচেয়ে বেশি মানুষ শুমারি থেকে বাদ পড়েছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে বিআইডিএস।

গ্রামীণ এলাকায় হিসেবে গণনায় সব থেকে বেশি বাদ পড়েছিল সিলেট বিভাগে ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। এছাড়া ময়মনসিংহে ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ, বরিশালে ২ দশমিক ৬১, চট্টগ্রামে ২ দশমিক ৭৩, ঢাকায় ২ দশমিক ৭৭, রাজশাহীতে ২ দশমিক ০৬ এবং রংপুরে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ মানুষ প্রাথমিক গণনায় বাদ পড়েছিল।বন্যার কারণে সিলেট ও ময়মনসিংহে বেশি মানুষ গণনার বাইরে ছিল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনশুমারি থেকে সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছিল ২০০১ সালের গণনায়, সেবার ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ বাদ পড়েছিল। ২০১১ সালে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ মানুষ বাদ পড়েছিল।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করায় বিবিএস এর অগ্রগতি হচ্ছে ধীরে ধীরে।

শুমারি চলাকালে সিলেটে বন্যা থাকায় সবচেয়ে বেশি মানুষ গণনায় বাদ পড়েছিল বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার।

বিবিএস এর পরিসংখ্যান ও তথ্যব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, “আজ আমরা আমাদের জনশুমারি ও গৃহগণনার ত্রুটি বিষয়ে জানলাম। এতে জানা গেল আন্ডার কাউন্ট (কম গণনা) হয়েছে, বেশিও হতে পারত।

“জনশুমারি হওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করাও অতীতের ন্যয় ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ। আগামী ৭ দিনের মধ্যে জনশুমারি সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত চূড়ান্ত করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ বা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।”

অনুষ্ঠান শেষে সভার বাইরে বিবিএস এর তথ্যর গ্রহণযোগ্যতা ও সময়োপযোগী তথ্য প্রকাশ না করতে পারার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, “বিবিএস এর কার্যক্রমে অগ্রগতি হচ্ছে। তারা আগের চেয়ে এখন অনেক সক্রিয়।”

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি থাকার কথা ছিল পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের। কিন্তু তিনি উপস্থিত হননি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মতিউর রহমানও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।