হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় নিরাপত্তা শঙ্কায় স্থলবন্দরগুলোতে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কম।
Published : 07 Aug 2024, 07:54 PM
গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর দেশে হামলা, ভাঙচুর আর লুটপাটের ঘটনায় নিরাপত্তা সংকটের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক চললেও অন্যান্য বন্দরে স্থবিরতার খবর পাওয়া গেছে।
সরকার পতনের খবরের পরই দেশের বিভিন্ন থানা ও স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে। কিছু কাস্টমস হাউজেও হামলা চেষ্টা ও কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিরাপত্তার শঙ্কায় বন্দরে কর্মকর্তাদের উপস্থিতিও কম।
এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছে সেনাবাহিনী। এরপর বুধবার থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি ও রপ্তানি, পণ্য খালাসের কাজ ‘পুরোদমে’ চলছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার ইমাম গাজ্জালি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। আমরা ফাইলের লোড সামলে উঠতে পারছি না, এত চাপ।”
বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীর এদিন কাজে যোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
আগের দিন সকালে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা অফিস করলেও পরে নিরাপত্তার শঙ্কায় বেলা আড়াইটার পর অফিস ত্যাগ করেন। ফলে আমদানি পণ্যের শুল্কায়নের কাজও প্রায় বন্ধ থাকে।
গাজ্জালি বলেন, “সেনাবাহিনী আমাদের আশ্বস্ত ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় আমরা পরে বিকালে আবার এসেছিলাম। বুধবার সকাল থেকে সব ওপেন। ইউ ক্যান ভিজিট আস।”
অপরদিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমস হাউসে মঙ্গলবার পণ্য খালাস বন্ধ থাকলেও বুধবার থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার এক উপ-কমিশনার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আজ (বুধবার) কোনো সমস্যা নেই। আমাদের কাজে কোনো বাধা নাই। তবে নিরাপত্তার শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা কম আসছেন। কেউ আসলে পণ্য খালাস করতে পারছেন।”
ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে মোংলা, সোনা মসজিদ, হিলি, ভোমরা, বিবিরবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ার হওয়ার কথা জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক সদস্য।
নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, “সত্যিকার অর্থে আমাদের নিরাপত্তা এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সারা বাংলাদেশেই তো সেইম, এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি কম।
“চট্টগ্রাম ছাড়া অন্যান্য বন্দরে নিরাপত্তার শঙ্কায় আমদানি ও রপ্তানি স্থবির রয়েছে। আমাদের কিছু কাস্টমস হাউজে হামলা হয়েছে বা চেষ্টা হয়েছে। বরিশালে মাইক্রোবাস পুড়িয়েছে, গোডাউন লুট হয়েছে। ঢাকা কাস্টমস হাউজে হামলার চেষ্টা ও কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে।”
তবে বৃহস্পতিবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা করে তিনি বলেন, “আশা করছি কাল থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। আমাদের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিরাপদে কাজ করতে পারলে তখন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে।”
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে তুমুল আন্দোলনের মুখে সোমবার দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দেশ ত্যাগের খবরের পরই ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন থানা, আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে।
থানায় আক্রমণ চালিয়ে পুলিশ হত্যার ঘটনায় নিরাপত্তা তাগিদে কর্মস্থলে নেই বেশিরভাগ পুলিশ সদস্যরা। বেশিরভাগ থানাই পুলিশশূন্য। সড়কে নেই ট্রাফিক পুলিশও। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্র আর আনসার সদস্যরা মিলে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছেন।
অরাজকতা আর লুটপাট বন্ধে বুধবার পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। আর এর আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা জোরদারের কথা জানানো হয়েছে। হামলা, লুটপাট হলে যোগাযোগ করার জন্য সারা দেশের বিভিন্ন এলাকার জন্য আলাদা আলাদা নম্বর দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে।