সবশেষ তিন মাসে শুধু টাকার অঙ্কেই খেলাপি ঋণ বাড়েনি, বেড়েছে শতকরা হারেও।
Published : 03 Sep 2024, 08:32 PM
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়তে বাড়তে ইতিহাসের সর্বোচ্চে গিয়ে ঠেকেছে; সবশেষ তিন মাসে আরও ১৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়ে জুন শেষে মোট খেলাপি ঋণ ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
দেশের ব্যাংক খাতের প্রধান ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত খেলাপি ঋণ সবশেষ তিন মাসে টাকার অঙ্কে বেড়েছে ২৯ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশিত এ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৪ সালের জুন শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “জুন পর্যন্ত সময়ে শ্রেণিকৃত ঋণের হার দাঁড়িয়েছে মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশে।”
চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে মোট ঋণ দেওয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।
এর মধ্যে খেলাপি হওয়া ঋণের পরিমাণ গত ২০২৩ বছরের জুনের চেয়ে ৫৫ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা বা ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি।
সবশেষ তিন মাসে শুধু টাকার অঙ্কেই খেলাপি ঋণ বাড়েনি, বেড়েছে শতকরা হারেও।
চলতি বছর মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯ শতাংশ।
এত বিপুল ঋণ খেলাপি হওয়া প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে তথ্য দেয়, বাস্তবে তা আরও বেশি। খেলাপি হওয়ার পরে পুনঃতফসিল করা ঋণও খেলাপি, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তা দেখায় না।”
তার আশা, নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর প্রকৃত খেলাপি ঋণের তথ্য বের করে ঋণখেলাপিদের শাস্তি আওতায় আনতে পদক্ষেপ নেবেন। বলেন, “কারণ খেলাপি ঋণ ব্যাংকখাতের অন্যতম প্রধান সমস্যা।"
বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্য বলছে, সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়েই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।
তার আগের গভর্নর ফজলে কবিরের দুই মেয়াদে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ৬৫ হাজার ৮৪৬ হাজার কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণের হালনাগাদ তথ্য বলছে, বরাবরের মতো জুন প্রান্তিক শেষেও রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি। এসব ব্যাংকে মোট খেলাপি ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
অপরদিকে বেসরকারি ব্যাংকে মোট খেলাপি হয়েছে ৯৯ হাজার ৯২১ কোটি টাকার ঋণ, যা ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
এছাড়া বিদেশি ব্যাংকে ৩ হাজার ২২৯ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়েছে। বিশেষায়িত ব্যাংকে এর পরিমাণ ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা বা ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ।
আরও পড়ুন
বিতরণ করা ঋণের ১১ শতাংশই এখন খেলাপি
খেলাপিদের ঋণমুক্ত হতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নীতিমালা
খেলাপি ঋণ আড়াই বছরে ৮ শতাংশে নামানোর 'রোডম্যাপ'
খেলাপি ঋণ 'বাস্তবে' সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা, দাবি সিপিডির