“আসলে ব্যাংক খাত কতটা খারাপ, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে”, বলছেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
Published : 23 May 2024, 11:10 PM
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ ও পুঞ্জীভূত বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে ‘বাস্তব চিত্র গোপন করা হচ্ছে’ বলে মনে করছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ। তাদের দাবি, বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার ঢাকার বনানীতে একটিহোটেলে ‘হোয়াট লাইস অ্যাহেড ফর দ্য ব্যাংকিং সেক্টর ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। বাস্তবে তা সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোও তথ্য প্রকাশ করছে না জনসম্মুখে। দুর্ঘটনা ঘটার পর সবাই জানতে পারছে। আসলে ব্যাংক খাত কতটা খারাপ, সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।’’
ফাহমিদার ব্যাখ্যা, ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, খেলাপি এ ঋণের বাইরে ঋণ পুনঃতফসিল, আদালতের নিষেধজ্ঞা ও ঋণ অবলোপন যোগ করলে তার পরিমণ দাঁড়ায় সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, গত এপ্রিলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ৭২ হাজার ৫৪৩টি মামলায় ঋণের ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা আটকে আছে। সব মিলিয়ে গত ডিসেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংক খাত ‘ক্রনি ক্যাপিটালিজমের’ মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের আর্থিক লক্ষ্য পূরণ করছে বলেও মন্তব্য করেন সিপিডি কর্মকর্তা।
সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুবাদে বিশেষ বিশেষ সুবিধা নিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্রমেই ধনসম্পদ বাড়ানোরঘটনাকে ক্রনি পুঁজিবাদ বা ক্রনি ক্যাপিটালিজম বলা হয়ে থাকে।
সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সমবায় সমিতিতে পরিণত হয়ে গেছে। সমবায় সমিতি যেমন সকলের সঙ্গে মিলেমিশে চলে, তেমনি ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আর্থিক খাতের প্রভাবশালীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে নীতি ঠিক করছে তারা।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন অর্থনীতি নিয়ে যেসব নীতি তৈরি করছে, যাতে সাধারণ মানুষের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “এ ধরনের আলোচনায় অংশীজন হিসেবে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা থাকতে পারেন। কিন্তু তারা থাকেন না। থাকলে ভালো হয়, না থাকায় সরকারের ক্ষতি হচ্ছে, তারা তো অনেক কিছুই জানতে পারতেন।”
ব্যাংক খাতে তথ্য প্রবাহে বাধা এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘পাবলিক ফিগার বা পাবলিক ইস্যুতে সব কিছুই স্বচ্ছ ও তথ্যের অবাধ প্রবাহ থাকার পক্ষে আমি। এ বিষয়ে আমি সরকারের ওপরের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করব।
“‘স্পর্শকাতর তথ্য’ নাম দিয়ে কিছু তথ্য আড়াল করা হচ্ছে। এভাবে স্পর্শকাতর নাম দিয়ে অন্য কিছু করা হচ্ছে কি না তা দেখা দরকার, সব তথ্যই প্রকাশ করা উচিত। তাহলে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।”
সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘ব্যাংক খাত দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। এ খাত সমস্যায় থাকলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আরও বেশি।”
গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাহেদ উর রহমানও সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।