সাড়ে ৭% কমিয়ে এডিপি সংশোধন, পুরোটাই কমেছে প্রকল্প সহায়তা

দ্রুত শেষ করা যাবে এমন প্রকল্প যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে এনইসি বৈঠকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে, বলে জানান পরিকল্পনা সচিব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2023, 01:28 PM
Updated : 1 March 2023, 01:28 PM

মূল এডিপি থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ বরাদ্দ কমিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুমোদন করেছে সরকার।

এডিপি সংশোধন করতে গিয়ে এবার সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন অপরিবর্তিত রেখে বিদেশি ঋণ ও অনুদানের অংশ থেকে সাড়ে ১৮ হাজার টাকা কমানো হয়েছে।

বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত এ এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন এনইসির চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ডলার সংকটে ব্যয় সাশ্রয় ও সরকারি খরচ সংকোচনের নীতিকে সামনে রেখে এবার ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে সরকার। অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এতে এডিপি বাস্তবায়নে কিছুটা ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে মূল এডিপির ব্যয় হয়েছে মাত্র ২৮ দশমিক ১৬ শতাংশ; যা সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এমন প্রেক্ষাপটে বরাবরের মত এডিপি সংশোধনের পথে হাঁটল সরকার।

সংশোধিত মূল এডিপির সঙ্গে স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে মোট ৮ হাজার ৯৯৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে সংশোধিত মোট এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ২০২২ সালের ১৭ মে স্বায়ত্বশাসিতসহ চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন করা হয়েছিল।

বুধবার ঢাকার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম সংশোধিত এডিপির বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনের অর্থায়নে ১০২টি প্রকল্পসহ সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬২৭টি।

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজেট ঘাটতি সীমার মধ্যে রাখতে ভর্তুকি কমাতে হবে। বাজেট ঘাটতির বড় কারণ এ ভর্তুকি। এজন্য বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হয়েছে।

তিনি বলেন, “ডলারের দর বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক কারণে কৃষি উপকরণের দাম তো বাড়ানো যাবে না। কৃষি উপকরণ শুধু কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ সবাই ব্যবহার করে। খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাইকারি পর্যায়ে বাড়ানোর সময়ে করা যেত।’’

তার মতে, এখন বাড়ানো হল যাতে ধীরে ধীরে সহনীয় হতে পারেন সবাই।

শামসুল আলম জানিয়েছেন, “সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কোনো চাষের জমি খালি রাখা যাবে না। সরবরাহ ব্যবস্থার দিকটি ঠিক রাখতে হবে।

“আমরা ডিমান্ড সাইড (চহিদাজনিত) নিয়ন্ত্রণ করেছি বৈশ্বিক কারণে ডলারের দাম বৃদ্ধিতে। বিপদ যেকোনো আসতে পারে-আমাদের সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।’’

ঠিক কোন কারণে প্রধানমন্ত্রী ‘বিপদ’ এর কথা বলেছেন- সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেশের অর্থনীতি আগের চেয়ে কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। অর্থনীতি কখনই সরল রেখায় চলে না; উত্থান-পতন হয়। যুদ্ধ হঠাৎ করেই এসেছে। অর্থনীতিতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ থাকে। আগাম অনেক কিছুই প্রক্ষেপন করা যায় না। তাই সেই অর্থে সজাগ থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যাতে কোনো বিপদ আসলে আমরা যেন আগাম প্রস্তুত থাকতে পারি।’’

Also Read: সাত মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ২৮%, ৭ বছরে সর্বনিম্ন

সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের সচিব সত্যজিত কর্মকার জানান, সাম্প্রতিক অভিঘাত পর্যালোচনা, প্রবৃদ্ধির ধারাবহিকতা ধরে রাখা, খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান বাড়ানো ও এলাকাভিত্তিক সুষম উন্নয়নের দিকে খেয়াল রেখে এডিপি সংশোধন ও নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, সংশোধনের পর প্রকল্প বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ৭৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আগে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়ন ধরা হয়েছিল ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এ খাত থেকে ব্যয় কমানো হয়েছে ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ (সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা)।

বৈদেশিক অর্থায়ন কমিয়ে আনা প্রসঙ্গে সত্যজিত কর্মকার বলেন, ‘‘গত অর্থবছরেও বৈদেশিক অর্থায়ন সহায়তা খরচ করা যায়নি পুরোটা। এটা কেন হচ্ছে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে বিষয়গুলো নিয়ে দৃষ্টি আর্কষণ করা হবে।’’

এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে আরেকটি সমস্যার কথা জানিয়ে সচিব বলেন, ‘‘বিদেশি সংস্থাগুলো প্রকল্প বাস্তাবায়নের শর্ত ও কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি মেনে চলতে গিয়ে অনেক সময় ক্রিটিকাল করে ফেলে। এতে সময় দীর্ঘ হয়।’’

বরাদ্দ কমানো সংক্রান্ত আরেক প্রশ্নে পরিকল্পনা সচিব জানান, অবকাঠামোসহ যেসব প্রকল্প চলতি অর্থবছরে করার প্রয়োজন নেই-তাতে বরাদ্দ রাখা হয়নি।

এসময় তিনি জানান, দ্রুত শেষ করা যাবে এমন প্রকল্প যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে বলা হয়েছে। আর এখন প্রয়োজন নেই বা পরে করলেও হবে-এমন প্রকল্প পরে করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এনইসি সভায় কয়েকজন মন্ত্রী প্রকল্প শেষ হওয়ার পরও তা কাজে লাগছে না- এমন প্রসঙ্গ তুলেছেন জানিয়ে সচিব সত্যজিত বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব মন্ত্রণালয়ের কাছে এসব প্রকল্পের একটি তালিকা চেয়েছেন।