মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই শাস্তিমূলক শুল্ক কয়েক দশক ধরে বিরাজমান বিশ্ব বাণিজ্যের ধারায় ভূমিকম্প ঘটিয়েছে।
Published : 09 Apr 2025, 12:52 PM
বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ গভীর করে কয়েক ডজন দেশের ওপর চাপানো প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘পাল্টা’ শুল্ক বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে। এরমধ্যে চীনের পণ্যে আরোপিত ১০৪ শতাংশ শুল্কও আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি নিলেও বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ এড়ানো যায়নি।
ট্রাম্পের এই শাস্তিমূলক শুল্ক কয়েক দশক ধরে বিরাজমান বিশ্ব বাণিজ্যের ধারায় ভূমিকম্প ঘটিয়েছে। বিশ্বজুড়ে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে দরপতন হচ্ছে আর মন্দা দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এক সপ্তাহ আগে ট্রাম্প শুল্ক চালু করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এসএন্ডপি ৫০০ শেয়ার বাজার ছয় লাখ কোটি ডলার হারিয়েছে। ১৯৫০ এর দশকে এই বেঞ্চমার্ক শুরু হওয়ার পর থেকে এটিই চারদিনে সবচেয়ে বড় ক্ষতি। এই সূচক এখন একটি ‘বেয়ার মার্কেট’ এর দিকে এগোচ্ছে, যা সর্বশেষ উচ্চতা থেকে ২০ শতাংশ নিম্ন অবস্থান নির্দেশ করে।
বুধবার এশিয়ার শেয়ার বাজারগুলোতে দরপতন হয়েছে। জাপানের নিক্কের দরপতন হয়েছে ৩ শতাংশেরও বেশি, দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা ১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতনে দেখছে আর তাতে সরকারি বন্ডগুলো ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে।
ওয়াল স্ট্রিটে মার্কিন শেয়ার বাজারগুলোও টানা পঞ্চম দিনের মতো ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
এসব শুল্ক দীর্ঘসময় ধরে বজায় থাকবে কি না, তা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মিশ্র ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। আরোপিত শুল্কগুলোকে ‘স্থায়ী’ বলে বর্ণনা করেছেন কিন্তু এ পদক্ষেপের কারণে বহু দেশের নেতা আলোচনার জন্য দেনদরবার করছেন বলে ট্রাম্প গর্ব করে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকালে হোয়াইট হাউজে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “চুক্তি করার জন্য বহু দেশ আমাদের কাছে আসছে।”
পরে আরেক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, চীনও একটি সমঝোতার জন্য আসবে বলে আশা করছেন তিনি।
রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার সময়সূচী নির্ধারণ করেছে। আর ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
কম খরচের এশীয় উৎপাদন কেন্দ্র ভিয়েতনামের উপর অন্যতম সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রীর বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেস্যান্টের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
অন্যান্য দেশের সঙ্গে চুক্তির সম্ভাবনায় মঙ্গলবার সকালে শেয়ার বাজারগুলো কিছুটা চাঙ্গা হয়েছিল, কিন্তু যা অর্জিত হয়েছিল দিন শেষে তা হারিয়ে যায়।
চীনের ওপর আগে থেকেই আরোপিত ২০ শতাংশ শুল্কের ওপর এক সপ্তাহ আগে আরও ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। এই পদক্ষেপের পাল্টায় চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। চীনকে এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ থেকে পিছু হটাতে দেশটির পণ্যে আরও অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প।
কিন্তু নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে না সরে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে চীন; বলেছে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্ল্যাকমেইলিংয়ের’ এর কাছে মাথা নত করবে না।
মার্কিন শুল্কের এই ধাক্কা মোকাবেলায় চীনের শীর্ষ ব্রোকারেজগুলো অভ্যন্তরীণ শেয়ারের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলো এই শুল্কের থাবা থেকে প্রধান শিল্পখাতগুলো রক্ষা করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
চীন কি যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪ শতাংশ শুল্ক সামাল দিতে পারবে?
কিছু অর্থনীতিবিদ সতর্ক করে বলেছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে জুতা থেকে মদের মতো প্রত্যেকটি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে আর তাতে হয়তো মার্কিন ভোক্তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও জরিপ সংস্থা ইপসোসের এক জরিপ বলছে, প্রায় তিন চতুর্থাংশ আমেরিকান মনে করেন আগামী ছয় মাসে প্রত্যেকটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে।
রয়টার্স বলছে, বুধবারের শুল্কের ধাক্কার পুরো প্রভাব অনুভব করতে বেশি কিছু সময় লেগে যেতে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মধ্যরাতে এটি যখন কার্যকর হয় তখন যেসব পণ্য মাঝপথে ছিল সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছনো পর্যন্ত নতুন শুল্কের আওতামুক্ত থাকতে পারে আর তাতে ২৭ মে পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
এর আগে শনিবার প্রায় সব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যে ট্রাম্পের আরোপ করা ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক কার্যকর হয়েছে। আর সর্বশেষ শুল্কগুলো যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় সময় বুধবার মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিট থেকে কার্যকর হয়েছে। যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ঠকাচ্ছিল’, তাদের ওপর এসব শুল্ক চাপানো হয়েছে বলে ভাষ্য ট্রাম্পের।
যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ঠকানো’ এসব পক্ষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নও রয়েছে। ইইউয়ের ওপর অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প