ডলারের দরে উল্লম্ফন, খোলা বাজারে কিনতে লাগছে ১১১ টাকা

ব্যাংকগুলো আগের দিনের চেয়ে ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০২ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করছে আন্তর্জাতিক বিনিময়ে বহুল ব্যবহৃত মুদ্রাটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2022, 10:14 AM
Updated : 26 July 2022, 10:14 AM

এক দিনের ব্যবধানে ৬ টাকা বেড়ে খোলা বাজারে ডলারের দর উঠেছে রেকর্ড ১১১ টাকায়।

এর আগে এক দিনে ডলারের দাম এতটা কখনও বাড়েনি। সোমবার বিকালেও ডলার মিলেছে ১০৫ টাকা ৩০ পয়সায়। অবশ্য অনেক মানি এক্সচেঞ্জ ডলার সংকটে ক্রেতাদের ফিরিয়েও দিয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই খোলা বাজারে ডলারের দর চড়া দেখা যায়। সরবরাহ সংকট বাড়ায় একলাফে তা ওঠে যায় ১০৮ টাকায়।

মানি এক্সচেঞ্জগুলোর বিক্রয় কর্মীরা বলছেন, বেলা ১১টার দিকে ডলারের দাম ৫০ পয়সা বেড়ে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা হয়।

এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে আন্তর্জাতিক বিনিময়ে বহুল ব্যবহৃত মুদ্রাটির। বেলা ২টা পর্যন্ত ১০৯, ১১০, ১১০ টাকা ৫০ পয়সা, ১১১ টাকায় বিক্রি হয় ডলার।

এরপর ক্রেতা কমে আসায় দর কিছুটা কমে সোয়া ২টার দিকে ১১০ টাকায় নেমে আসে।

ইস্টার্ন মানি এক্সচেঞ্জর পরিচালক আমিন উদ্দিন ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে, “আইজকা দামের কোনো ঠিক নাই। সকাল থিকা ১০৮ টাকা থেকে শুরু কইরা ১১১ টাকায় বিক্রি করছি। যেমন দামে পাইছি, তেমন দামে বিক্রি।“

দেশে ব্যাংকের পাশাপাশি খোলা বাজার থেকে ডলার সংগ্রহ করা যায়। ব্যাংক থেকে ডলার সংগ্রহে পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট করতে হয়, সেজন্য প্রয়োজন হয় ব্যাংক হিসাব।

কিন্তু খোলাবাজারে ডলার কেনা-বেচায় তেমন আনুষ্ঠানিকতার বালাই নেই। এ কারণে ব্যাংকের চেয়ে দর বেশি হলেও খোলা বাজার থেকে ডলার সংগ্রহ করেন বিদেশগামী অনেক যাত্রী।

ভ্রমণ শেষে দেশে ফেরত আসা ব্যক্তি ও পর্যটকরা বেশি দামের আশায় কাগুজে ডলার খোলা বাজারে বিক্রি করে দেন।

হজযাত্রীদের ফেরার এ সময়ে খোলা বাজারে ডলারের ভালো সরবরাহ থাকার কথা থাকলেও এবার সংকট দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে ডলার বিক্রি করতে আসা ব্যক্তিদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম।

রাজধানীর পল্টন এলাকার একটি ভবনে অনেকগুলো মানিএক্সচেঞ্জ অফিস রয়েছে, ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই কর্মীরা জানতে চাইছেন, ডলার আছে কি না।

সংকটের এ বাজারে ডলারে দর আরও বাড়বে নাকি- কমবে তা নিয়ে সংশয়ে আছেন মানি এক্সচেঞ্জের কর্মীরা।

মেক্সিমকো মানি এক্সচেঞ্জের বিক্রয়কর্মী মো. রুবেল সরকার জানিয়েছেন, ডলারের নির্দিষ্ট কোনো দর তারা ক্রেতাদের বলতে পারছেন না। ফোন করে অনেকেই কিনতে আসেন। তাদের এখন বলছেন, বাজারে এসে দর দেখতে।

“সব দোকান থেকেই ফোন করা হচ্ছে ডলার কার কাছে আছে জানতে। অনেকেই ডলার মজুদ করে রাখে… ফোন দিলে লোক পাঠায়া দেয়। কিন্তু তারাও দিতে পারতেছে না।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সোমবার ব্যাংকারদের বৈঠকেও ডলার সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এর আগে গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডলারের সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ১০২ টাকায়। এরপরের দুই মাস বাজারে ডলার সরবরাহ বাড়ায় দর কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে ৯৭-৯৮ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছিল।

এদিকে খোলা বাজারের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতেও ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে। কয়েকটি ব্যাংক আগের দিনের চেয়ে ৫০ পয়সা বাড়িয়ে মঙ্গলবার ১০২ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার বিক্রি করছে।

ডলার সংকটে সোমবার আন্তঃব্যাংক লেনদেনে বিনিময় হার বাড়িয়ে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

যদিও ওই দরে ব্যাংকগুলোতে কেউ ডলার কিনতে পারছেন না বলে অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ীরা। পণ্য আমদানির প্রয়োজনে তাদের ১০২ টাকা দিয়েই ডলার কিনতে হচ্ছে ব্যাংকের কাছ থেকে।