এ মাসের আগের তিন সপ্তাহে এর দ্বিগুণ থেকে চারগুণ রেমিটেন্সও এসেছে।
Published : 29 Jul 2024, 09:43 PM
কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার প্রেক্ষপটে ইন্টারনেট বন্ধ থাকা এবং টানা তিন দিন সাধারণ ছুটির কারণে বড় ধাক্কা লেগেছে বিদেশি মুদ্রার গুরুত্বপূর্ণ উৎস প্রবাসী আয়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি মাসের চতুর্থ সপ্তাহে (২১ থেকে ২৭ জুলাই) দেশে রেমিটেন্স হিসেবে এসেছে মাত্র ১৩৮ মিলিয়ন ডলার।
অথচ তৃতীয় সপ্তাহে (১৪ থেকে ২০ জুলাই) ৪৫০ মিলিয়ন ডলার, দ্বিতীয় সপ্তাহে (৭ থেকে ১৩ জুলাই) ৬০৮ মিলিয়ন ডলার এবং প্রথম সপ্তাহে (১ থেকে ৬ জুলাই) ৩৭০ মিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে।
জুলাইয়ের ২৭ দিনে মোট রেমিটেন্স এসেছে ১ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারের। আর গতবছর জুলাই মাসে ১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছিল।
গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছিল।
কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংস রূপ পাওয়ায় জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। ১৮ জুলাই সংঘাত মারাত্মক রূপ নিলে অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। সেদিন রাত থেকে বন্ধ হয়ে যায় ব্র্যাডব্যান্ড ইন্টারনেট, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল আগেই।
১৯ জুলাই শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারি হলে সারা দেশে সেনা নামানো হয়। বন্ধ হয়ে যায় কল কারখানার উৎপাদন। এরপর সরকার রবি থেকে মঙ্গল ( ২১ থেকে ২৩ জুলাই) নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করলে সব অফিস, আদালত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।
ইন্টারনেট ফিরলে এবং কারফিউ শিথিল হলে ২৪ জুলাই থেকে স্বল্প পরিসরে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাংকাররা বলছেন, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ২৩ তারিখ পর্যন্ত রেমিটেন্স আসা বন্ধ ছিল।
২৪ ও ২৫ জুলাই স্বল্প পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চললেও রেমিটেন্স এসেছে খুবই কম। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে আমদানি-রপ্তানির মত রেমিটেন্সের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকমকে বলেন, “ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্সের প্রবাহ কমে গেছে। সেটা দেশের অর্থনীতির জন্য খারাপ। কারণ অন্যান্য সূচক শ্লথ হলেও একমাত্র রেমিটেন্সের প্রবাহ ছিল আশানুরূপ। সেখানেও একটা আঘাত পড়েছে।
“তবে প্রবাসীরা ঠিকই রেমিটেন্স পাঠাবেন, কারণ তাদের পরিবার ও স্বজনরা এ দেশে রয়েছেন।”
ব্যাংকি চ্যানেল বন্ধ থাকায় এ সময়টায় অনেকে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠিয়েছেন বলে ইতোমধ্যে খবর এসেছে সংবাদ মাধ্যমে।
সে প্রসঙ্গ ধরে আহসান মনসুর বলেন, “পরিস্থিতি যত দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিক করতে হবে। নাইলে দেশ থেকে টাকা পাচার হবে। কারণ উচ্চ ও মধ্যবিত্তরা সবাই চায় স্থিতিশীলতা। দেশ অস্থিতিশীল হলে পরবর্তী প্রজন্মকে বাইরে পাঠিয়ে দিতে চায় এবং সম্পদও পাচার করে।”
পুরনো খবর